পাতা:প্রবাসী (দ্বাত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৫১৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

আশ্বিন স্নান করিতে ভরসা হইল না । গরম জল চাহিয়৷ প্ৰতাপ বেশ করিয়া হাত-মুখ পরিষ্কার করিয়া লইল । সপাতালের রোগীর মত মূৰ্ত্তি করিয়া সে কিছুতেই আজ সামিনীর কাছে যাইতে পারিবে না। স্কুলেও সে গাড়ী করিয়াই চলিয়া গেল । সে বাহির হইয়া যাইবামাত্র রাজু বলিল, “ছোড়ার হল কি, খুব ত দুহাতে পয়সা ওডাচ্ছে ।” পিসিম বলিলেন, “ত প্রাণের চেয়ে কি পয়সা বড় ? আবার জর হ’লে ও আর টি কবে । ঐ ত তালপাতার সেপাই ।” স্কুলে গিয়াও নিজের মনের অস্থিরতায় প্রতাপ কিছু কাজ করিতে পারিল না, ক্লাসে গিয়া বসিল মাত্র । অবশ্য সদ্য রোগশয্যা হইতে উঠিয়া আসিয়াছে বলিয়া সেটা কাহারও চোখে বিশেষ অস্বাভাবিক বোধ হইল না । টিফিঙ্গের ঘণ্টা পড়িবামাত্র প্রতাপ গিয়া হেডমাষ্টারের ঘরে উপস্থিত হইল। তিনি জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে মুখ তুলিবামাছ সে বলিল, “আপনি যদি অনুমতি দেন, তাহ’লে বাড়ি চলে যাই । শরীরট বিশেষ ভাল ঠেকছে না।” হেডমাষ্টার বলিলেন, “তাই যান, প্রথম দিনই উঠে ষ্ট্রেন করা কিছু নয়।” প্রতাপ নমস্কার করিয়৷ তাড়াতাড়ি চলিয়। আসিঙ্গ। সোজা যামিনীদের বাড়ি ন গিয়া একবার বাড়ীতে নামিল । গাড়ীটাকে দাড় করাইয়াই রাখিল আর-একবার কাপড় ছাড়িয়া, চুল আঁচড়াইয়া, হাত মুখ ধুইয়া, প্রস্তুত হইয়া আসিল । উত্তেজনায় তাহার পা কঁাপিতেছে, গলা শুকাইয়া উঠিতেছে, স্থাটিয়া অল্পদূরও সে যাইতে পারিবে না তাহা বুঝিতেই পারিয়াছিল । নৃপেন্দ্রবাবুর বাড়ির সামনে আসিতেই দেখিতে পাইল, দোতলায় যামিনী জানলার ধারে দাড়াইয়া আছে, তাহারই অপেক্ষা করিতেছে। গাড়ী দেখিয়াই সরিয়া গেল। প্রতাপ নামিয়া পড়িয়া গাড়ীটাকে বিদায় করিয়া দিল । ছোট্ট অন্তদিন এমন সময় থাবার ঘরের টেবিলের তলায় পড়িয়া অঘোরে নিদ্রা দেয়, আজ সে প্রতাপকে অভ্যর্থনা করিতে বাহির হইয়া আসিল দেখিয়৷ প্রতাপ বিস্মিত হইল। যামিনী বলিয়। রাখিয়াছে বোধ হয় । আজ তাহাকে আপিসঘরে বসিতেও হইল মাতৃ-খণ Rసెt ন, ড্রয়িংরুমে তাহীকে বসাইয়া, ছোট খবর দিতেই বোধ হয় উপরে চলিয়া গেল । যামিনী মিনিট-দুইয়ের ভিতরেই ঘরে আসিয়া প্রবেশ করিল। প্রতাপের চক্ষু অনভিজ্ঞ, তাহার উপর হৃদয়াবেগে সে তখন অভিভূত, সুতরাং যামিনীর চেহারা বা সাজসজ্জার কোনো বিশেষত্ব তাহার চোখে পড়িল না । অন্য মানুষ থাকিলে দেখিত, যামিনীর সজ্জার মধ্যে অনেকটাই পরিবর্তন আসিয়াছে, মেমসাহেবী ভাবট যথাসম্ভব কম, হিন্দুগৃহের লক্ষ্মী-প্রতিমার সহিত সাদৃশ্ব বেশী। পায়ে জুতা নাই, আলতায় ক্ষুদ্র কোমল পদতল রঞ্ছিত, চুল খোল, তাহাতে ফিতার গুচ্ছ পর্য্যন্ত নাই, আয়ত চোখের নীচে কাজলের টান । হাতে গলায় স্বর্ণালঙ্কার । যামিনী আসিয়া বসিয়া একটা চেয়ারের হাতল খুঁটিতে লাগিল। প্রতাপও ভাবিয়া পাইল না ঠিক কেমন ভাবে কথাটা আরম্ভ করিবে । ঘামিনীই কথা আগে বলিল, আছেন ত ?” প্রতাপ বলিল, “হ্যা ভালই আছি, তবে একটুখানি দুৰ্ব্বল আজও লাগছে।” তাহার পর একটু থামিয়া বলিল, “দেখুন, আজ য বলতে এসেছি, তা ব’লে ফেলাই ভাল, দেরি করে লাভ নেই। অনেক কষ্টে মনের সঙ্কোচ কাটাতে আমাকে হয়েছে, কারণ আর যে-কোনো মানুষ এ কথা শুনলে আমাকে পাগলই মনে করবে। আপনিও যে কি মনে করবেন তা আমি জানি না, সেটা জানতেই আজ এসেছি। যদি আমার কথায় বেশী আস্পদ্ধ কিছু প্রকাশ পায়, আপনি দয়া ক’রে ক্ষমা করবেন ?” যামিনী শুধু একবার তাহার মুথের দিকে তাকাইল, কোনো কথা বলিল না। প্রতাপ বলিল, “আপনাকে যতটা শ্রদ্ধ। আমি করি, জগতে আর কাউকে ততটা করি না। যদি আমার কোনো কথা মৰ্য্যাদাহানিকর মনেও হয় তা হলেও জানবেন আমার উদ্বেগু একেবারে আগু । আমি জানি, আমি একান্ত অযোগ্য কিন্তু যোগ্য হবার চেষ্টা যথাসাধ্য করতে চাই। সেটুকু অধিকার কি “আজি বেশ ভাল