পাতা:প্রবাসী (দ্বাত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৫৩৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বাংলার লোকনৃত্য ও লোকসঙ্গীত জারি নৃতা—ময়মনসিংহ যায় কাটোয় অঞ্চলে কোন কোন জায়গায় ভদ্র পরিবারের বয়স্থ মেয়েরা এখনও এই উপলক্ষে ভাজো নৃত্য ক’রে থাকেন । পূৰ্ব্ব ও পশ্চিম বাংলার মুসলমান মেয়েদের মধ্যে এখনও বিবাহ উপলক্ষে নৃত্যগীতের প্রথা প্রচলিত আছে । বাংলা দেশে পুরুষদের মধ্যে যে সকল লোকনৃত্যু এখনও প্রচলিত আছে, তার কয়েকটির সংক্ষিপ্ত বর্ণনা নিম্নে দেওয়া গেল । রায়বেশে নৃত্য পুরুষদের মধ্যে নানা দেশে যত নৃত্য প্রচলিত আছে, তন্মধ্যে রায়বেশে নৃত্য যে সবচেয়ে গৌরবময়, এটা নিঃসন্দেহে বলা যেতে পারে। এই নৃত্যের ইতিহাস ও প্রণালী আমি অন্যত্র বিস্তারিতভাবে বিবৃত করেছি* । আজকাল এই “রাইবিশে” নামধারী নৰ্ত্তকগণ যে প্রাচীন বাংলার “রায়বেশে” যোদ্ধাদের বংশধর, তাতে বিন্দুমাত্র সন্দেহ হতে পারে না। কবিকঙ্কণচণ্ডী, ধৰ্ম্মমঙ্গল, অন্নদামঙ্গল ও কবি রামপ্রসাদের কাব্যগ্রন্থের মধ্যে প্রাচীন বাংলার “রায়বেশে” যোদ্ধাদের সমর-কৌশলের ও ঋবঙ্গলক্ষ্মী ৪—( ফাল্গুন ১৩৩৭ হইতে শ্রাবণ ১৩৩৮ ) “বেড়াপাকের" পদ্ধতিতে তাণ্ডবনৃত্যের যথেষ্ট প্রমাণ পাওয়া যায়। রবীন্দ্রনাথ এই নৃত্য দেখে মুগ্ধ হয়ে বলেছেন,—“এ রকম পুরুষোচিত নাচ দুর্লভ ; আমাদের দেশের চিত্তদৌৰ্ব্বলা দূর করতে পারবে এই নৃত্য ” বাস্তবিক এই নৃত্য দেখলে এটাকে নটরাজ শিবের রণত গুব নৃত্যের অবিকল প্রতিরূপ ব’লে মনে হয়। বাংলার প্রতি গ্রামে এবং প্রতি স্কুলে এই নৃত্য প্রবর্তিত হ’লে যে শক্তি ও সাহসের দিক দিয়া জাতির প্রভূত মঙ্গল সাধিত হবে তা নিঃসন্দেহে বলা যেতে পারে । কাঠি নৃত্য বীরভূম অঞ্চলে কাঠি নৃত্য নামক যে নৃত্য প্রচলিত আছে, ইহাতে দুই হাতে দুটি ছোট লাঠি নিয়ে কয়েকজন লোক গোলাকার বৃত্তের আকারে ঘুরে ঘুরে নেচে থাকে। একজনের কাঠির সঙ্গে আর একজনের কাঠির ঠক্ঠকানি আওয়াজের সঙ্গে সঙ্গে মাদল বাজে ও তার সঙ্গে সহজ সরল ভাষায় ও স্বরে গানের সঙ্গত হয়। এতে বেশ একটা সুন্দর রসকলার উৎপত্তি হয়। আজকাল অনেক স্কুলেই এই নৃত্যের ও রায়বেশে নৃত্যের প্রবর্তন হয়েছে ।