পাতা:প্রবাসী (দ্বাত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৫৫৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

মহেন-জোদাড়ে ও প্রাচীন সিন্ধুতীরের সভ্যতা মিসেস্ ডোরোথি ম্যাক্কে মহাযুদ্ধের পর পুরাতত্ত্বের ঐশ্বধ্যভাণ্ডারে টুটানখামেনের সমাধি, উরের রাজসমাধিস্থান এবং সিন্ধুনদ তীরবত্তী প্রাচীন সভ্যতা, এই তিনটি আবিষ্কার সর্বাপেক্ষা উল্লে - যোগ্য । যদিও বিগত নয় বৎসরের সযত্নখননাদির পরও এই তৃতীয় আবিষ্কারটির রহস্য-আবরণ সামান্তমাত্র উন্মোচিত হইয়াছে, তবু সম্ভবত ইহাই পরিশেষে সকলের অপেক্ষ। মূল্যবান বলিয়। প্রমাণিত হইবে। কারণ পুথিবীর প্রাচীন জাতি ও ধৰ্ম্ম-সমূহের ইতিহাসকে প্রতিষ্ঠা দান করিতে এই অধিস্থিrtট যে উজ্জল আলোক জালিবে তাহার রশ্মি সিন্ধুতীব এবং ভারতভূমির সীমাও ছাড়াইয়া যাইবে । ভারতের ধৰ্ম্ম, দর্শন এবং আধ্য ও অনার্য যুগের জাতিসমূহের ইতিহাসে এই যে অতীত দুই সহস্ৰ বৎসর যুক্ত হইল তাহা আমাদের জ্ঞান ও বুদ্ধিকে আশ্চৰ্য্য সমৃদ্ধি দিবে। প্রাচীন বেলুচিস্থান, সুমার, এলাম এবং আরও দূরবত্তী অন্যান্ত দেশের জাতি, ধৰ্ম্ম, শিল্পাদিও এই নূতন জ্ঞানালোকে উদ্ভাসিত হইবে । কারণ সিন্ধুতীরে আবিষ্কৃত প্রত্যেক ছোটবড় জিনিষের সঙ্গে স্বমর প্রভৃতি দেশে আবিষ্কৃত খুঁটিনাটি জিনিষগুলি মিলাইয়। দেখা যাইতেছে যে, পশ্চিম এশিয়ার প্রাচীন জাতিদের পরম্পরের সহিত আশ্চৰ্য্য পরিচয় ছিল । সকল যন্ত্ররথ-বঞ্চিত এই জাতিগুলি এমন করিয়া দেশ-দেশাস্তরে ভ্রমণ ও বাণিজ্য অভিযান করিয়াছিল যে, মোটর, ট্রেন ও বায়ুধানে অভ্যস্ত বৰ্ত্তমান জগৎ তাহা বিশ্বাস করিয়াই উঠিতে পারে না । পশুচালিত রথ ও পালের নৌকার সাহায্যে দেশে দেশে বাণিজ্য, সভ্যতা ও কুষ্টি বিস্তারের প্রাচীন প্রথাকে ত আমরা অসম্ভবের কোঠায় ফেলিয়া দিতেই উৎসুক। কিন্তু বাস্তবিক ইহা অসম্ভব ছিল না। প্রাচীন মানুষ হয়ত এত দ্রুত ছুটিত না ; কিন্তু তাহার। আধুনিক মাহুষের মত ব্যক্তিগত সম্পত্তির শৃঙ্খলে জড়িত ও স্থানীয় স্বযোগসুবিধার মোহে আবদ্ধও ছিল না । লোকসংখ্যার অনুপাতে, সিন্ধুতীরের সভ্যতার দিনে, পূৰ্ব্ব দেশের এক প্রাস্ত হইতে আর এক প্রান্তে মানুষের যাতায়াত ও বাণিজ্য অপেক্ষাকৃত আধুনিক যুগের তুলনায় বিশেষ কম ছিল মনে করিবার কোন কারণ দেখা যায় না। সুবিস্তীর্ণ খননক্ষেত্রের প্রমাণগুলিকে অস্বীকার করিবার উপায় নাই । সুমারের নগরগুলিতে বিশেষতঃ কিষ Kish) নগরে এবং উর ও লাগাষে খননকাল্পীর। সিন্ধুতীরের বণিকদের হারানো শীল পাথর প্রায় পাচ হাজার বৎসর পরে খুজিয়া পাইয়াছেন। মুমেরীয় কারিগরের তৈয়ারী শীল সিরিয়ার উত্তর প্রদেশে খুজিয়া পাওয়া গিয়াছে ; এবং স্নমেরীয়ের ধে এশিয়া-মাইনরে বণিকূ-উপনিবেশ স্থাপন করিয়াছিল তাহার প্রমাণও আছে । সম্প্রতি আবার প্রাচীন মিশর হইতে উত্তরে কাম্পিয়ান সমুদ্র পর্য্যস্ত শীল ছাড়া আরও অনেক জিনিষ পাওয়া গিয়াছে যাহা এলাম ববীলন এবং সম্ভবতঃ প্রাচীন ভারতের প্রভাবও প্রমাণ করে । প্রাচীন জগতের প্রত্নতত্ত্বের অমুশীলনের ফলে নানাদেশের কষ্টির কৃত্রিম গণ্ডী ভাঙিয়া পড়িতেছে, নানাজাতির স্বতন্ত্র ইতিহাসের মিথ্য বেড়াও খসিয়া পড়িতেছে । সুতরাং প্রাচীন জগতের কাহিনী ভাল করিয়া বুঝিতে হইলে কেবল মিশরবিদ্যবিশারদ, এসিরিয়ালজিষ্ট কিংবা সংস্কৃত পণ্ডিত অপেক্ষা বেশী কিছু হওয়া দরকার। প্রাচীন জাতিসমূহের মধ্যে সভ্যতা, কৃষ্টি ও আত্মীয়তার আদানপ্রদান স্থপূৰ্ববিস্তৃত ছিল ; সুতরাং তাহাদের ইতিহাস চর্চাকালে আমাদের দৃষ্টির প্রসারও উদার হওয়া উচিত। মোহেন-জো-দাড়োর আবিষ্কারের পূৰ্ব্বে, ভারতের ইতিহাস আর্ষ্যগণের অভু্যদয়ের সময় হইতে অর্থাৎ খ্ৰীষ্ট