পাতা:প্রবাসী (দ্বাত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৫৫৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

আশ্বিন । এক একটি সমচতুষ্কোণ সৌধসঙ্ঘ গড়িয়া তুলিত ; শহরের পথঘাটের আইন ছিল এৰং লোকে যে তাহ মানিতে বাধ্য হইত তাহারও প্রমাণ আছে। শহরের স্বাস্থ্যরক্ষার দিকে আশ্চৰ্য্য রকম নজর দেওয়া হইত। নগরোপকণ্ঠের বিষয়ে আমাদের জ্ঞান এখন পর্য্যন্ত অতি সামান্য । এত যুগ ধরিয়া সিন্ধুনদী তাহার উভয় তীরে যে পলিমাটির ঘন স্তর ফেলিয়া গিয়াছে শহরের বহিঃপ্রাচীর সম্ভবত তাহারই তলায় চাপ পড়িয়। আছে, বাবিলনের রিরাট ধ্বংসস্ত,পের মত ইহাদের পোড়া ইটগুলিও নিশ্চয় পরবর্তী যুগের গ্রামবাসীদের ইটের পাঞ্জার কাজ করিয়াছে। অথবা হয়ত মোহেন-জো-দাড়োর প্রাচীর এমন ভারী করিয়া গাথাই হয় নাই । সে সময় অধিকাংশ শহরেই শত্রু আক্রমণ ও ভাঙাচোরা ইত্যাদি চলিত, কিন্তু এখানে সেরূপ আক্রমণাদির প্রমাণের আশ্চর্য অভাব। রীতিমত আগুন লাগাইয়া পোড়ানো হইয়াছে শহরের এমন কোনো অংশ আজ পৰ্য্যস্ত আবিষ্কৃত হয় নাই ; অস্ত্রশস্ত্রও প্রাচুর্য্যে কি রকমারিতে বিশেষ বেশী পাওয়া যায় নাই। গোটাকতক বধ কুড়াল, গদ, পাথরের গুলিকা ইত্যাদি সবই হয়ত নিতান্ত নির্বিরোধকাজেই ব্যবহৃত হইত। অথবা চোরভূণকাত তাড়ানোর কাজে লাগিত । কুয়া কাটিতে গিয়া এক জায়গায় সমতল ভূমির ২৬ ফিট নীচেও রাজমিস্ত্রীর কাজ পাওয়া গিয়াছে, সুতরাং আধুনিক ইটের ঢিপিগুলি হইতে কত দূরে যে পুরাকালের বসবাস চলিত বলা শক্ত। তবে আধুনিকতম শহরটির সীমা যে ইটের পাঞ্জাগুলি পৰ্য্যস্তই ছিল ইহা বলা সম্ভব । কারণ ইটের পাজ নিশ্চয় আবাসপল্লীর বাহিরে ছিল । এগুলি বেশীর ভাগ শহরের উত্তরপূর্ব এবং দক্ষিণ-পূর্ব কোণে ; তাঁহাতে মনে হয় এখনকার মত তখনও বাতাস মহেন-জোদাড়ে ও প্রাচীম সিন্ধুতীরের সভ্যতা br-GA ঢিপিগুলির কেন্দ্রের কাছাকাছি ছিল । তাহ ছাড়া শেষযুগের গাথুনির কাজ প্রথম যুগের গভীরতর স্তরের কাজ হইতে এতটা নিকৃষ্ট যে, মনে হয় সহরটি সম্পূর্ণরূপে পরিত্যক্ত হওয়ার আগেই ইহার আয়তন এবং প্রসিদ্ধি চীনামাটির টুকরা, বোতান ও মীনার কাজ উভয়ই কমিয়া আসিতেছিল। কেন যে শহর ছাড়িয়৷ অধিবাসীর চলিয়া গেল বলা শক্ত। বন্যা, মহামারী, শত্রুর আক্রমণ ইত্যাদি নানা কারণ থাকিতে পারে ; অথবা হয়ত হঠাৎ নদীর মুখ ফিরিয়া জলধারা দূরে চলিয়া যাওয়াতে ভারতের অন্যান্ত শহর এবং বহিঃপ্রদেশের সঙ্গে যোগ রক্ষা কঠিন হইল। ইহাদের সঙ্গেই এই সহর ত ব্যবসায় বাণিজ্য চালাইত। সব কয়টি কারণেরই স্বপক্ষে ও বিপক্ষে যুক্তি আছে, কিন্তু মোট কসিয়া দেখা যায় যে, বন্যার জন্য নাগরিকদের পলায়নই সৰ্ব্বাপেক্ষ যুক্তিযুক্ত । শহরটি যে বস্তার প্রলয়লীলায় বহু দুঃখ পাইয়াছে এবং অধিবাসীরা সৰ্ব্বদাই বস্তার ভয়ে সন্ত্রস্ত থাকিত তাহার অসংখ্য প্রমাণ আছে। খনিত পথ ও গলি দিয়া কাটিতে গেলেই দেখা যাইবে প্রাচীরগুলি পড়-পড় ভাবে হেলিয়া আছে ; কোথাও প্রাচীরের মাথা ভাঙিয়া ফেলিতে পশ্চিম ছিল। সহরের শেষ যুগে ফুমোরের চাক এই হইয়াছে, পাছে খননকারীদের মাথায় আসিয়া পড়ে,