পাতা:প্রবাসী (দ্বাত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৫৬৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

আশ্বিন পোড়াকপালী し°8○ অগ্নিশিখার হেলিয়া-দুলিয়া বাড়িয়া-কমিয়া শ্লথ সন্তৰ্পণ অগ্রগতি চাহিয়া দেখিতে লাগিল । ধীরে ধীরে আকার বাড়িতেছে, হেলানো সুদীর্ঘ সমিধ বাহিয়া ধীর অনিবাৰ্য্য বেগে উপরে উঠতেছে। ঘরে আজ নিশ্চয় আগুন লাগিবে। আর কেহ পুড়িয়া না মরুক, কুমুমের আঞ্জ উদ্ধার নাই। সে কিছুতেই পলাইতে পরিবে না। পিড়ির সঙ্গে মাটির সঙ্গে সে একেবারে তাটিয়া গিয়াছে, তার সৰ্ব্বাঙ্গে পক্ষাঘাত হইয়াছে, সে অবশ, অবসন্ন। উঠিবার, নড়িবার, টানিয়া পাটকাঠিগুলি সরাইয়া আনিবার শক্তিও তার নাই। সে পলাইবে কেমন করিয়া ? কুহ্ম স্পষ্ট দেখিতে পাইল, খড়ের জলন্ত চালের নীচে চাপ পড়িয়া সে ছট্‌ফট্‌ করিতেছে, তার গায়ের চামড় কয়লার মত কালো হইয়া যাইতেছে আর সর্বাঙ্গে পড়িতেছে বড় বড় ফোস্কা। কাল্পনিক মৃত্যুর বীভৎসতার আতঙ্কে কুসুম এক প্রকার উৎকট আনন্দ উপভোগ করিতে লাগিল । তার আর কিছুমাত্র সংশয় রহিল না যে, একবার হাত বাড়াইলেই যে-বিপদ আটকানো যায় সে-বিপদের সামনে সে যে হাত গুটাইয়া বসিয়া আছে সে বিধান ঈশ্বরের। ঈশ্বর তাহার হাত বাড়াইবার শক্তি হরণ করিয়াছেন। সে সতী কি-না, বিলম্বিত সহমরণকে নিজেও তাই ঠেকাইতে পারিতেছে না। নিজে সে এ আয়োজন করিতে পারিত না । তার আত্মহত্যার মধ্যে শুধু আত্মহত্যার পাপ নয় নরহত্যার পাপও আছে। কিন্তু ঘরে আগুন লাগিয়া পুড়িয়া মরাতে আর তার হাত কি ? তজ্জন্য তাকে নরকে যাইতে হইবে না, কাহারও কাছে কোন কৈফিয়ৎ দিতে হইবে না, হাসিতে হাসিতে সে স্বর্গে তারকের কাছে চলিয়া যাইবে। পয়ত্রিশ দিনের বেশী বিধবা হইয়। সে থাকিল না ইহার গৌরবে মুগ্ধ হইয়া লোকে ধন্য ধন্য করিবে। . থোকার কথা কুষম ভাবিয়াছে। মামীর ছোট ছেলেটি আর নাতি-নাতনীর সঙ্গে সে গুইয়া আছে, তাদের সঙ্গে ওকেও সকলে সরাইয়া লইবে নিশ্চয়। কোলের ছেলে তার মরিবে না। কষ্ট অবশ্য সে অনেক পাইবে, কিন্তু তাহা বিধাতার ইচ্ছ, কুসুমের ওতে হাত নাই। মা’র মরণের ব্যবস্থা আঞ্জ যিনি করিলেন মা’র ছেলের বঁাচার ব্যবস্থাও তিনিই করিবেন। কুসুমের মাথায় যত চুল ততকাল ধরিয়া করিবেন। এতক্ষণে আগুন আটি-বাধা পাকাটির মাঝামাঝি পৌছিয়াছে এবং বেশ জোরেই জলিতেছে। এখানট ভাল করিয়া পুড়িয়া যাইতেই পাকাটিগুলি ভাঙিয়া নীচে পড়িয়া গেল। ঘরে যে আগুন আজ লাগিবেই তাহার আর তেমন নিশ্চয়তা রহিল না। পুড়িতে পুড়িতে একসময় আগুন নিবিয়া গেল, অবশিষ্ট রহিল খানিকট ছাই, কিছু জলন্ত কয়লা আর কয়েক টুকরা পাকাটি । কুসুমের মনে হইল সে খুব বেদনা পাইয়াছে, ভারি হতাশ হইয়াছে। * রান্নার খুন্তিটা দিয়া সে তার স্থল আকাঙ্ক্ষার দগ্ধাবশেষগুলি নাড়িতে লাগিল । ছাইয়ের ভিতর হইতে বাহির হইয়া পড়িল আধপোড়া একটা তেলাপোকা । হঠাৎ মামীর মেয়ে দ্বার ঠেলিয়া ঘরে আসিয়া রান্নাঘরের এই অবস্থা দেখিয়া বলিল, "এ কি অগ্নিকাণ্ড ক'রে বসে আছি কুসুম ? কুকুম অতর্কিতে বলিয়া ফেলিল, বড় বচন বেঁচে গেছি দিদি ; পোড়া কপালে আজ হয়ত অপঘাত মৃত্যুই ছিল । ভগবান বঁাচিয়েছেন এ যাত্রা।