পাতা:প্রবাসী (দ্বাত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৫৬৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

আশ্বিন পুরুষোত্তমদেবের প্রধান বই—ত্রিকাগুকোষ। অমরসিংহ ঠাহীর অভিধান লেখেন খ্ৰীষ্টীয় ৬ শতকে । ৬ হইতে ১১ পর্যন্ত ৫০ বৎসরে অনেক পূতন নূতন শব্দ সংস্কৃতে ঢুকিয়াছিল। সেইগুলি পুরুষোত্তমদেব তালিকা করিয়া দিয়াছেন। অভিধানে যে তিনটি কাও থাকে, তবে সব কয়টি অমরসিংহের বইয়ে আছে, অর্থাং (১ ) পর্যায় ; (২) নানার্থ ও (৩) লিঙ্গ ; সেই জন্য উহার নাম ত্রিকাণ্ড । পুরুষোত্তমদেব উহারই পরিশিষ্ট লিখিয়াছেন, এই জন্য উহার নাম হইয়াছে ত্রিকাও শেয। ত্রিকাণ্ডশষে পুরুষোত্তম অমরের সঙ্কেত, অমরের পরিভাষা এবং অমরের রীতি ও বর্গক্রম গ্রহণ করিয়াছেন, একটুও বদলান নাই । তিনি স্পষ্ট করিয়া বলিয়াছেন, যে সকল শব্দের প্রয়োগ দেখা যায়, তাছাই তিনি ত্রিকাগুশেষে লইয়াছেন এবং যাহার প্রয়োগ লোপ হইয়াছে, সে সকল শব্দ তিনি উৎপলিনী প্রভৃতি অন্ত অভিধানে দেখিতে বলিয়াছেন । যে শব্দ অমরকোষে নাই, অথচ ত্রিকাগুশেষে আছে, সে সকল শব্দ ৬০ • হইতে ১১০০ পৰ্য্যন্ত এই ৫০০ বৎসরে চলিত হইয়াছে, বুঝিতে হইবে ... তিনি আর একথানি অভিধান স্বতন্ত্র লিখিয়াছেন—সেখানির নাম হীরাবলী । সেখানিতে ২৭৮টি বই শ্লোক নাই । তাহারও দুই চারিটি শ্লোকে তাহার নিজের কথা আছে, নিজের পরিচয় আছে । সুতরাং ২৭২ট শ্লোক লইয়া অভিধান। এই অভিধানে যে সকল শব্দ আগে প্রচলিত ছিল, ক্রমশঃ অপ্রচলিত হইয়া আদিতেছিল, তাহণদেরই অর্থ দেওয়া আছে । অর্থাৎ অমরকোঁধের সময় প্রচলিত খে সকল শব্দ পুরুষোত্তণের সময় অপ্রচলিত হইয়া আসিয়াছে, তাহাদেরই সংগ্ৰহ ইহাতে আছে। এই সকল অপ্ৰযুক্ত শব্দ সংগ্রহ করা অভিধান লেখার চেয়ে একটু কঠিন কাজ ; কুতরাং গ্রন্থকারকে বড়ই থাটিতে হইয়াছিল । অনেক পণ্ডিতকে জিজ্ঞাসা করিতে হইয়াছিল, এ শঙ্গের প্রয়োগ চলিবে কি না। তাহার দুই ছাত্র ও বন্ধু ধৃতিসিংহ ও জনমেজয় তাহার খুব সাহায্য করিয়াছিলেন। এক সময়ে তিনি ধৃতিসিংহ নামক আর একজন পণ্ডিতের বাড়ীতে প্রায় এক বৎসর অতিথি ছিলেন। র্যাহারাই এই পুস্তক পড়িয়াছেন, তাহারা এক বাক্যে স্বীকার করেন--বইখানি বড় ভাল এবং সংস্কৃত পাঠার্থীদের খুব উপযোগী । পুরুষোত্তমের আর এক কীৰ্ত্তি—ভাযাবৃত্তি। পাণিনির স্বরের ও বেদের স্বত্রগুলি বাদ দিয়।শুধু ভাষার ষে স্বত্রগুলি, সেগুলির উপর লঘুবৃত্তি দিয়া ভাষাবৃত্তি তৈয়ারী হইয়াছে। অনেক সময় পাদকে পাদই বাদ দেওয়া হইয়াছে। ষষ্ঠ অধ্যায়ের ২য় পাদটি বৈদিক স্বরের ব্যাপার ; সেটি একেবারে নাই ! স্বর্গগত শ্ৰীশচন্দ্র চক্ৰবৰ্ত্ত মহাশয় বইখানি ছাপাইয়াছেন। অনেক সময় বৈদিক সুত্রগুলি ত্যাগ করিয়াছেন, অনেক সময় বৈদিক স্বত্রগুলি ছাপাইয়া লীচে বলিয়া দিয়াছেন—ছান্দস । স্বরবৈদিকী বাদ যাওয়ায় বইয়ের তিন ভাগের এক ভাগ বাদ গিয়াছে। পুরুষোত্তম মঙ্গলাচরণে বলিয়াছেন,— “নমে বুদ্ধায় ভাষায়াং যথাত্রিমুনিলক্ষণম্। পুরুষোত্তমদেবেন লঘু বৃত্তিবিধীয়তে।" অর্থাৎ তিনি পাণিণি, কাত্যায়ন ও পতঞ্জলি, এই তিন জনের মতে ব্যাকরণ লিখিতেছেন, কিন্তু আসলে তিনি পাণিনির বৌদ্ধটাক কাশিকা ও স্বাসের উপরই বেশী নির্ভর করিয়াছেন। বাঙ্গালা দেশে, বিশেষ উত্তর-বাঙ্গালায় অর্থাৎ যেখানে পাল রাজাদের প্রাদুর্ভাব খুব বেশী ছিল, সেখানে তাহার বই অনেক দিন চলিয়াছিল ; অনেক টীকাটিপ্পনীও হইয়াছিল। এখন আর ध्रण न ; ठश्वन किरू छdीछी शैक्रिरठद्र श३ श्ध्न नाई । কষ্টিপাথর-পুরুষোত্তমদেব br8Q ভট্টোঞ্জী দক্ষিতের বই হইয়া ভাষাবৃত্তির অনেক ক্ষতি করিয়াছে। বাঙ্গালীয় ভাষাবৃত্তি চলিলেও অনেক বড় বড় পণ্ডিত পুরা অষ্টাধ্যায়ী পড়িতেন। শ্ৰীশবাবু বলিয়া গিয়াছেন - রায়মুকুট, শিরোমণি ভট্টাচাৰ্য্য, কুলু ভট্ট, ইহারা সকলেই অষ্টাধ্যায়ীতে অদ্বিতীয় পণ্ডিত ছিলেন। পুরুষোত্তমদেব ভাষাবৃত্তিতে পাণিনির স্বত্রগুলিকে খুব সহজ করিবার চেষ্টা করিয়াছেন ; কিন্তু অষ্টাধ্যায়ীর ক্রমধাবস্থা বদলান নাই । পুরুষোত্তমের প্রধান কীৰ্ত্তি কিন্তু সংস্কৃতের বানান ঠিক করিয়া দেওয়৷ ; সেই জন্য তিনি বর্ণদেশনা, দ্বিরূপ কোষ, একাক্ষর কোষ নামে একখানি অতিধান লিখিয়াছিলেন, বর্ণদেশনার ভিন্ন ভিন্ন অধ্যায় ভিন্ন ভিন্ন বই বলিয়া চলিতেছে, যেমন - জকাইভেদ, শকারভেদ, নকারভেদ ইত্যাদি। আমি এইটিকেই তাহার প্রধান কীৰ্ত্তি বলি ; কেন-না, এ বিষয়ে বোধ হয় তিনিই প্রথম নজর দেন । সংস্কৃতের উচ্চারণ ক্রমেই বদলাইয়া যাইতেছিল। উচ্চারণ-ভেদে ক্রমে ভাষারও ভেদ হইয়াছিল ; তাহাতে নানারূপ প্রাকৃত ভাষার উৎপত্তিহইয়াছিল। কিন্তু ৯ম ও ১০ম শতকে সংস্কৃতের বানানটাও প্রাকৃতের মত হইয়া যাইতেছিল। সকলেই চান, সংস্কৃতের বানান সংস্কৃতের মত থাকুক, প্রাকৃতের বানান প্রাকৃতের মত হউক ; কেহই চীন না— সংস্কৃতের বানান প্রাকৃতের মত হউক। এই বানানের গোলযোগটা পুৰ্ব্বাঞ্চলেই বেশী হইয়াছিল ;–বিশেষ বাঙ্গালায় । বাঙ্গালীর সম্বৎ লিখিত, কিম্বা লিখিত ; কিন্তু সংস্কৃতে সম্বৎ "কিম্বা হয় না, সংবং ‘কিংবা হয়। আমরা যদু'কে 'যদু উচ্চারণ করি, “যদা'কে 'যদ, উচ্চারণ করি ; দুটা ’ন’র কোন ভেদই করি না, তিনটা "শ" যে কেন থাকে, তাহা বুঝিতেই পারি না। ক্রমে এইরূপ উচ্চারণের সঙ্গে সঙ্গে অক্ষরও ভফাৎ হইয়া গেল ; সেট। বাঙ্গালায় তত বেশী হয় নাই, কিন্তু হিন্দী নেওয়ারীতে খুব হইয়াছে ; যেমন ণ, ঘ, ক্ষ, তিনটাই এক রকম লিখিত, একটার জায়গায় অার একটা লিখিত, ই ও ঘ ইচ্ছামত লিখিত, সিংহুও লিখিত, সিংঘও লিখিত । পুরুষোত্তমদেব এই সব গোলযোগ দেখিয়। বর্নদেশনা লিথিয়৷ তাহাতে বলিলেন, রাজার আদেশ যেমন মানিতেই হয়, অস্তথা করিলে চলে না ; বানানের আদেশও সেই রকম মানিতেই হইবে, অস্কথা করিলে চলে না ; উহার কারণ জিজ্ঞাসার দরকার নাই, অমুসন্ধানেরও দরকার নাই। এই সময় হইতেই সংস্কৃত পণ্ডিতেরা যাহাতে বর্ণাশুদ্ধি ন। হয়, সে বিষয়ে চেষ্টা করিতে লাগিলেন ; এবং সংস্কৃত ভাষা ক্রমে প্রাকৃতের প্রভাব হইতে রক্ষণ হইতে লাগিল। এমন কি, লেখারও ছাদ বদলাইল । বাঙ্গালীয় অনেক কাল ধরিয়া খ, ক্ষ, ষ-এ আর গোলমাল করে না, এবং সিংহীর জায়গায় সিংখী লেখে না। মূর্ধণ্য ণ, ন, এবং তিনটা শ, দুইটি বরও পণ্ডিতের তফাৎ করিতে পারেন ও করেন ; এই সকলের মূল পুরুষোত্তমদেব। মহেশ্বর নামে অার একজন বৌদ্ধ পণ্ডিতও বানানের বই লিথিয়া গিয়াছেন ; তিনি লেখেন খৃষ্টীয় ১১১১ সালে। পুরুষোত্তমের পরে হইবারই সম্ভাবনা। পুরুষোত্তমের পরে গদসিংহ বলিয়া আর একজন বানানেরই বই লিখিয়। গিয়াছেন ; তিনি কিন্তু পুরুষোত্তমেরই পদানুসরণ করিয়াছেন। দ্বিরূপৰোধ মানে---বে সকল শব্দের দুইরূপ বানান হইতে পারে, তাহাদের সংগ্ৰহ। যেমন—কোশল, কোসল ; শস্ত, সস্ত ; বশিষ্ঠ, বসিষ্ঠ ইত্যাদি। এইরূপ সংগ্রহে পুরুষোত্তমের কৃতিত্ব হারাবলী অভিধানে খুব প্রকাশ পাইয়াছে। তিনি অনেক খুজিয়া কোথায় কোথায় দুই রূপ চলিতে পারে, আর কোথায় পারে না, তাহা স্থির করিয়াছিলেন । সাহিত্য-পরিষৎ-পত্রিকা, ১ম সংখ্য, ১৩৩৯ ]