পাতা:প্রবাসী (দ্বাত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৫৬৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

কৰ্ম্মী-স ংগঠন শ্ৰীকালীমোহন ঘোষ শ্রীনিকেতন--শিক্ষাশিবির এ কথা সকলেই জানেন যে, আমাদের সঙ্গে পাশ্চাত্য সমাজের একটা প্রধান পার্থক্য এই যে, আমাদের দেশের বার আনারও অধিক লোক কৃষির উপর নির্ভর করে ; আর ইংলণ্ড, ফ্রান্স, জাৰ্ম্মেনীতে বার আন লোকে নির্ভর করে কলকারখানার উপর। সেইজন্য ইউরোপের অর্থনৈতিক চিন্তা ও গবেষণার ধারা ভারতীয় অর্থনৈতিক সমস্যার সমাধানের পক্ষে বিশেষ সাহায্য করিবে কি-না সন্দেহ। দৃষ্টান্ত-স্বরূপ জাৰ্ম্মেনীর কথা উল্লেখ করা যাইতে পারে। বিগত যুদ্ধের পর জাৰ্ম্মেনী কষির উন্নতির জন্য বিশেষরূপে মনোযোগী হইয়াছে। কৃষিকার্য্যে তাহীর যথেষ্ট উন্নতি লাভ করিয়াছে সন্দেহ নাই। কিন্তু সে দেশের মধ্যযুগের কৃষক-সমাজ ধ্বংস হইয়া গিয়াছে। পল্লীগ্রামে দুই চারি জন ভূস্বামী হাজার হাজার বিঘা জমির মালিক। উন্নত বৈজ্ঞানিক কলকারখানার সাহায্যে র্তাহারা বিরাট চাষের ব্যবস্থা করিয়া প্রচুর লাভবান হইতেছেন বটে, কিন্তু অপর যাবতীয় পল্লীবাসী ইহাদের ক্ষেতের মজুর মাত্র। নিজেদের জায়গা-জমি নাই। মনিবের তৈয়ারী বস্তিতে ইছারা বাস করে । মধ্যযুগের বলিষ্ঠ সঙ্ঘবদ্ধ কৃষক-সমাজ বিলুপ্ত হইয়াছে অষ্ট্রিয়, হাঙ্গেরী প্রভৃতি দেশেও এই অবস্থা। অর্থাৎ উনবিংশ শতাব্দীর কলকারখানার যুগের ধনিক সম্প্রদায়ের স্বারা প্রবর্তি অর্থবিজ্ঞানের ছাদনদড়ি গলায় জড়াইয়। পাশ্চাত্য পল্লীসমাজ পঞ্চভূপ্রাপ্ত হইয়াছে। জাৰ্ম্মেনীর বর্তমান গবর্ণমেণ্ট গত যুদ্ধের পর এই সকল বৃহৎ জোৎদারদিগের নিকট হইতে জমি ক্রয় করিয়া তাহা একশত বিঘার এক এক খণ্ডে ভাগ করিয়া প্রজাবিলি করিতেছে। প্রবল বাধাসত্ত্বেও তাহারা এইরূপ দশ হাজার মাত্র প্রজা পত্তন করিতে সমর্থ হইয়াছে। তাতএব ইংলণ্ড, জাৰ্ম্মেনী অথবা ফরাসী দেশের অর্থবিজ্ঞানের নীতি তাতুসরণ করিয়া আমরা যদি অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠান গঠন করিতে চেষ্টা করি তাহা আমাদের দেশের সমস্ত সমাধানের অনুকূল হইবে না। কারণ যাবতীয় সম্পদের মূল উৎস কৃষি। কৃষিপ্রধান ভারতে কৃষকই অর্থনৈতিক জগতের মেরুদণ্ড । ভারতীয় শিল্পের উপাদান এদেশের কৃষকগণই উৎপন্ন করে। অতএব এ-দেশীয় অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠানের মুখ্য অবলম্বন কৃষি ও কৃষক। গৌণ অবলম্বন শিল্পী ও শিল্পপ্রতিষ্ঠান। এবং উভয়ই অঙ্গাঙ্গীভাবে সংযুক্ত থাকিয়া পরম্পরের অমুকুলত করিয়াছে। এই আদর্শকে সম্মুখে রাখিয়াই প্রাচীন ভারতের পল্লীসমাজ গড়িয়া উঠিয়াছিল। আমাদের প্রাচীন ইতিহাসের মধ্যে পল্লীসমাজের যে আভাস পাই, তাহারই সুস্পষ্ট ছবি দেখিয়া বিস্মিত হইয়াছিলাম প্যালেষ্টাইনে । ডেনমার্ক একশত বৎসরের চেষ্টায় তাহার সমবায়প্রতিষ্ঠানের ভিতর দিয়া উন্নত কৃষক-সমাজ গড়িয়া তুলিয়াছে। তাহ অপেক্ষা শতগুণ প্রতিকূল অবস্থার মধ্যে পড়িয়াও ইহুদীগণ গত চৌদ্দ বংসরে যে-কয়েকটি পল্লী-প্রতিষ্ঠান গঠন করিয়াছে, তাহা ইহুদীজাতির অসাধারণ সংগঠন-প্রতিভার পরিচায়ক। প্রাচীন ভারতের পল্লীসমাজের ঐতিহাসিক ধারার মধ্যেই আমাদের ভাবী সমাজ গঠনের মূলভিত্তি আমরা খুজিয়া পাইব। কিন্তু প্যালেষ্টাইন, ডেনমার্ক, চেকোশ্লোভাকিয়, যুগশ্লডিয়া ইত্যাদি দেশে নবীন আদর্শ দ্বারা অনুপ্রাণিত হইয়া পল্লীসমাজ সংগঠনের যে-সকল পরীক্ষা চলিয়াছে তাহার সহিতও আমাদের ঘনিষ্ঠ পরিচয় আবশুক ।