পাতা:প্রবাসী (দ্বাত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৫৯৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

b-q8 প্রিবাসী ; ఏ99శు পেছিয়ে গিয়ে নদী পার হওয়ার পথ যদি-বা পাওয়া গেল, সেখানে আবার নদীর বুকে এত বড় বড় মুড়ি রয়েছে যে গাড়ী ঐ খরস্রোতের ভিতর দিয়ে চালান অসম্ভব, কেননা অনেক একে-বেঁকে নদীর গভীর জায়গাগুলি এড়াতে হয়। গাড়ী ত নদীর মাঝে জলে চুবুনি খেয়ে থেমে গেল, সেপাইভায় আশপাশের ক্ষেত থেকে লোক ধরে এনে সেটা উদ্ধার করলেন, আমি জুতো মোজা খুলে নিয়ে কোন মতে জলের ঠেলা সামূলে হেঁটে পার হলাম, পাণ্টলুন প্রায় কোমর পর্য্যন্ত ভিজল । ওপারে গিয়ে দেখলাম যে নক্সগুলি পাহাড়ের গায়ে অনেক উচুতে অঁাকা (কীৰ্ত্তিনাশাদের এড়াবার জন্য ) এবং সেখানে পৌছবার একমাত্র পথ একটি সরু পয়ঃপ্রণালীর বাইরের দেওয়ালের উপর দিয়ে। পয়ঃপ্রণালীটির অন্য দেওয়াল ঐ পাহাড়ের খাড়। গাত্র এবং ভিতরের জল অধিকাংশ জায়গায় ডুব জলের বেশী, কাজেই ভিতর দিয়েও যাওয়৷ চলে না। দেওয়ালটি কোথায়ও এক হাতের বেশী চওড়া নয়, মাঝে মাঝে আবার জল পড়ে পিছল হয়ে গেছে এবং দেওয়ালের অন্য পাশে আট-দশ থেকে ষাট-সত্তর ফুট গভীর খাদ -- অর্থাৎ পপাত চ মমার চ । যাই হোক ঐ পথে প্রায় আধ মাইল হেঁটে নক্সাগুলি দেখলাম। বড় মূৰ্ত্তিগুলির মুখ নাক ছেনী বাটালী দিয়ে নষ্ট করা হয়েছে, অন্যগুলি প্রায় ঠিকই আছে, কালের প্রকোপে যেটুকু গেছে গেছে। কিন্তু এখন ঐ পয়ঃপ্রণালীর জল কয়েকটি নক্সা ধুয়ে বয়ে যাচ্ছে, সুতরাং এর ব্যবস্থা না হ’লে জলের প্রক্রিয়ার সেগুলি লোপ পাবে। ২৪০ খৃষ্টাব্দে শাশানীয়-বংশের নৃপতি প্রথম শাপুর ইরাণ সাম্রাজ্যের অধিপতি হন। ২৪১—২৪৪ খৃঃ এবং ২৫৮–২৬০ খৃষ্টাব্দে রোমৰ সাম্রাজ্যের সঙ্গে ইহার সংঘাত হয়। প্রথম অডিযানে শাপুর ভূমধ্যসাগরের কূলে এন্টায়োখ পৰ্য্যস্ত হস্তগত করেন কিন্তু কিছু দিন পরে রোমকগণ পারসীক সৈন্তকে পরাজিত ক’রে প্রায় সমস্ত দেশই পুনরুদ্ধার করে। দ্বিতীয় অভিযানে রোমক সৈন্য বিধ্বস্ত এবং রোমক সম্রাট ভ্যালেরিয়ান বন্দী হন, পারসীক লৈঞ্চ এশিয়ার পশ্চিম প্রাস্ত পৰ্য্যস্ত সমস্ত রোমক সাম্রাজ্য লুণ্ঠন এবং ধর্ষণ করে ফিরে আসে। নক্স-ই-শাপুরের খোদিত চিত্রাবলী প্রধানতঃ এই দ্বিতীয় বিজয় অভিযানের স্মারক, যদিও এখানে অন্য শাশানীয় নৃপতিদের চিত্রও আছে। নক্সাগুলি আমাদের দেশের ঐ জাতীয় কাজের মত গভীর করে কাটা নয়, সুতরাং মুক্তিগুলির গঠন ভারতীয় খোদিত মূৰ্ত্তির মত স্থডৌল নয় (মডেলীং ঢের কম ) । এখানের কারুকার্ষ্যেও ভারুত সাচীর মত সূক্ষ্ম কার্ধ্যের নিদর্শন নাই। নক্সার ছাদ আস্বরিয় আদর্শের, কিন্তু গ্ৰীক পন্থার প্রভাব বেশ আছে বলে মনে হয়। এইগুলির সঙ্গে সমসাময়িক এবং পূৰ্ব্বকালের ভারতীয় খোদিত চিত্রাবলীর তুলনা করলে ললিতকলার ক্ষেত্রে ভারতের নিজস্ব কত বেশী ছিল সেটা বেশ বুঝা যায়। হতভাগ্য ভ্যালেরিয়ান বহুকাল পরে বন্দী অবস্থায় মারা যান। মরিবার পর তার চামড়া খুলে, খড় পূরে, জনসাধারণকে দেখান হয় এইরূপ কথিত আছে। শাপুর রোমক বন্দীদের দ্বারা পারস্যের দক্ষিণ-পশ্চিমে শুষ্টর নগরীর কাছে কারুন নদীর উপর বাধ তৈরি করান, সে বাধ এখনও আছে। এদেশে তার নাম, বন্দ-ই-কইসর, কইসর (সীজর ) ভ্যালেরিয়ানের স্মৃতি রক্ষা করছে। 豪 染 来 ষোলই এপ্রিল আমরা শিরাজ পৌছাই । ছয়দিন ওখানে থেকে ২২শে ভোরে আমরা ইস্ফাহানের দিকে রওয়ান হলাম। পথে পাসেপোলিস, নক্স-ই-রুস্তম, মেশেদ-মুর্গাব, ( পাসারগাড়াই ) পড়বে। এবার প্রাচীন, গৌরবময় পারস্তের সঙ্গে পরিচয় হবে, কাজেই উৎসুক হয়ে যাত্রা করা গেল । শিরাজের স্মৃতিচিহ্ন রূপে কিছু কাঠের, রূপোর, পিতলের এবং গালিচার কাজ সংগ্রহ করা গেল । দু-একটি প্রাচীন সীল এবং একখানি ছোট চিত্রিত পুথিও কেনা গিয়েছিল। দরদস্তুর এখানে খুবই করতে হয়, তবে পারস্যদেশে মেহমানের ( অতিথি ) খাতির সর্বত্রই, এবং নায়কমশায়ও ছিলেন সুতরাং খুব বেশী চড়া দাম দিতে হয়নি ।