পাতা:প্রবাসী (দ্বাবিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/২২৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

২য় সংখ্যা ] ছাওয়া মাটির গৰ্ত্তগুলো আর নেই—সে স্থানে নরিকেল তাল তমাল গাছের সারি, তাদের তলে তলে কাচ ও . কাঠের ছোট ছোট কুটীর ; স্বস্বণ শ্বামল পাতায় পাতায় ফ্লাল নীল নানা রংএর কাচের ছাদে দেওয়ালে জ্যোৎস্নার আলো রংএর হোলিগেলা করছে ;-কয়েকখানি ছোট বাড়ীর মাঝে দধির মত স্নিগ্ধশুভ্ৰ শ্বেতপাথরের বাড়ী, সেখান থেকে হালি-গানের শব্দ আসছে, মনে হলো খুব ভোজ চলছে ; লাল পাথরের জাতি দেওয়া দরজায় যে মুসলমান নারী দাড়িয়ে হাস্ছে আর গল্প করছে, তার স্নিগ্ধমুখ মিষ্ট কণ্ঠ শুনে অবাক হলুম। বস্তির সামনের জলের কলে তার দোর্দণ্ড প্রতাপ সবাই জানে, সবার শেষে এসে নিছক গলার জোরে ও মুখভঙ্গিতে দে আপনার কলসীগুলি সবাইয়ের আগে ভরে নিয়ে যায় । সে যাদের সঙ্গে হাত ধরাধরি করে’ গল্প কবৃছিল তাদের মধ্যে একজন গুজরাটী আর-একজন বাঙ্গালী বাবুর বেশে থাকৃলেও বেশ চিনতে পার্লম—প্রথম জন হচ্ছে আমার এক গান্ধীভক্ত নন্‌কো বন্ধু গোলদিঘিতে বক্তৃতা দিয়ে জেলতীর্থে গেছে ; আর যে পুলিস সার্জেনটা বন্ধুকে মেরে হাত ভেঙ্গে দিয়ে লালবাজারে ধরে নিয়ে গিছলো, সে-ই আদ্ধির পাঞ্জাবী পরে আতর মেখে গল্প জমিয়েছে। এ সব দেখতে দেখতে এত আবিষ্ট হয়ে গিছসুম যে আশ্চৰ্য্য হবার মত মনের ভাব ছিল না—কিন্তু গাছের তলা ছেড়ে পথে একটু যেতেই পরমাশ্চৰ্য্যকর এক ব্যাপারে মনটা নড়ে উঠল। তারার মালার মত বেলফুলের ঝাড়ের তলায় আমাদের পাড়ার সেই মুদ্রথোর বেনে মহাজনট—ই, সেই স্থাগোর পাষণ্ডটা, ভোর হতে গভীর রাত পৰ্য্যন্ত তাকে কেবল বাঘের মত হিংস্ৰ চোখ দুটো জালিয়ে সিন্দুকে টাকা তুলতে আর খাড়ার মত নাকটা হিসেধের খাতায় গুজে স্বদের মন্ত কতেই দেখেছি —সে আনন্দে বেহালা বাজাচ্ছে আর শরৎসেফাল্লির মত্ত স্বন্দর এক খুকীর সঙ্গে নাচছে, মাঝে মাঝে চাপ ংএর চুলগুলোর ওপর চুমে খাচ্ছে—সোনারংটার প্রতি লোভ এখনও তার যায়নি। Vব্যাপারটা দেখে পথের মাঝখানে এক গোলাপ-গাছের তলায় বসে পড়লুম। একটু বসেই গাড়ীচাপ পড়বার ভয় হলোঁ; কিন্তু কোথাও সত্ব পেয়েছির দেশে Sసాలి কোন মৈাটর বা গাড়ীর শব্দ নেই, এ রাস্ত দিয়ে যেন কখনও কোন গাড়ী চলে না । বসে ভাবছি, এ কোনু অস্তুত দেশে পৌছলুম, না জানি এবার কি বিচিত্র কাও ঘটবে । বেশীক্ষণ ভাবতে হলো না, দেপি অষ্টাদশ শতাব্দীর ফ্রেঞ্চ ম্যানের মত সেজে এক যুবক এক বাঙ্গালী মেয়ের হাত ধরে গান গাইতে গাইতে আসছে— ‘চলি গে চলি গো, ঘাই গে চলে', পথের প্রদীপ জলে গো—গগনতলে ।'. তার এলে আমার গাছের কাছে দাড়ালো, ভেবেছিল হয়ত জায়গাটায় কেউ নেই। গাছের তলাটা আমার ছেড়ে দেওয়া উচিত ভেবেই দাড়িয়ে উঠলুম। আমার মুখে পথের আলো পড়তেই রবেস্পেয়ারের মত সাজপর যুবকটি আনন্দের সঙ্গে ডাক্লে, “বন্ধু, তুমি ? ভালো করে চেয়ে দেপি এ যে আমার সেই রেভলিউস্যানিষ্ট বন্ধু । কি আশ্চৰ্য্য, তার শীর্ণদেহ লাবণ্যে ভরে’ উঠেছে, চোখের চশমাটা খসে গেছে, আর সবচেয়ে আশ্চৰ্য্য ভার হাতে কোন বই নেই, আছে একটা বঁাশী । সে কোন তর্ক স্বর কবৃলে না। আমি বল্লম,—তোমাকে দেখে বাচলুম। এ যে কোন অদ্ভুত দেশে এসে পড়েছি ভাই, আমি ত কিছুই বুঝে উঠতে পারছি না।’ সে ঙ্গে স্তে করে হেসে উঠুল, এমন প্রাণ খোলা হাসি যে সে হাস্তে পারে তা আমার ধারণাষ্ট ছিলেন । বল্লুম,—“তুমি যে ভাই এমন গান গাইতে পারে। এট। এতদিন লুকিয়ে রাখা তোমার ভয়ঙ্কর অন্যায় হয়েছে। হাসিটা কোনমতে থামিয়ে সে বল্লে,—‘এ হচ্ছে সব পেয়েছির দেশ, জানো না কবি বলে গেছেন,—“যে যায় সে গান গেয়ে যায়, সবপেয়েছির দেশে ।” ' আমাদের পাশ দিয়ে এক প্রৌঢ় ব্যক্তি বাউলের বেশ পরে’ এক হরিণ-শিশু কোলে নিয়ে একতারা বাজাতে বাজাতে চলে গেলে, তার পেছন পেছন নৃত্যু দোদুল ছোট ছেলের দল । বন্ধুর দিকে চেয়ে বল্লুম—এ দেশট দেখবার জ*ে আমার অনেকদিন থেকেই খুব ইচ্ছে। আমি ত ভাঙ্গ