পাতা:প্রবাসী (দ্বাবিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৪৪২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৩য় সংখ্যা ] স রক্ষিণ বইত, তাকে ঠিক অন্তঃসলিলা তটিনীর সঙ্গে তুলনা দেওয়া চলে না। অল্পদিনেই সে অভিলাষ এমন ম্পঃ হয়ে বাইরে দেখা দিল যে ইন্দিরা সরমে মরে ধেতে চাইত। কিন্তু অনুপমের এই বুভূক্ষু ভাবই কিশোরীর কাছে তাকে প্রিয় করে তুলল। কিশোরীর জন্মগত অভিজাত্যের অহঙ্কার অনুপমের মধ্যে একটা মস্ত আশ্রয় পেল, যেটা ইন্দিরার মধ্যে সে মোটেই পেত না । এবং সেইজন্তই অনুপম আর কিশোরীর আত্মীয়তার যে মূলস্বত্র সেই ইন্দিরাই এদের মাঝখান থেকে সরে গেল। কিশোরীর সঙ্গে অনুপমের বন্ধুতার ক্ষেত্রে ইন্দিরার কোনো স্থান ছিল না। তবু অনুপম ইঞ্জিরার অাশা ছাড়েনি । মাঝে মাঝে নানা ছুতায় কিশোরীর আড়ালে সে ইন্দিরার কাছে হাত পাততে আরম্ভ করল। কারণ কিশোরীর সামনে তার ভিক্ষাকে যে ইন্দিরা অতি বড় অপমান রূপে নেবে তা তারা দুজনেই বুঝত। কিন্ত অনুপমের সকল ছুতাই বিফল হত। ইন্দিরার হাত থেকে এক পয়সাও সে বার করতে পারত না । দেশের কাজে কিশোরীমোহন আজকাল এত মেতে উঠেছিল যে তার সারাদিনর মধ্যে বাড়ী ফেরবার অবস হত না। একলা ঘরে ইন্দিরার দিন কাটত স্বামীর পরিত্যক্ত এলোমেলে বই কাগজ চিঠিপত্র সহস্রবার গুছিয়ে, আর তার ফেরার অfশায় পথ চেয়ে । সেদিন রাত্রি দশটা বেজে গেছে, দেউড়িতে দরোয়ানদের রামায়ণ-গান থেমে গেছে, পাশের মহলে সরযুর ছেলের কান্নাও আর শোনা যায় না, ভিতর মহলের বারান্দায় দাসীদের আলাপ আর কলহের গুঞ্জন মৃদ্ধ হতে মৃত্নতর হয়ে আসছে, পথে পথিকদের পায়ের ধ্বনির একটানা স্রোতে মাঝে মাঝে বিরাম পড়ে যাচ্ছে, তবু কিশোরীমোহনের দেখা নাই। শোবার ঘরের জানালার গরাদেতে মুখ চেপে পথের দিকে চেয়ে ইন্দির দাড়িয়ে ছিল । জগতে পথে মানুষের ভাগ্যে যত, রকম দুর্ঘটনা ঘটেছে সেইগুলো সব পালা করে করে তার মনের ভিতর আসা-যাওয়া করছিল। পায়ের ه د حـ # لا rه মানের দায় 8e 9 حويله علي কাছে একটা দৈনিক কাগজ অসংখ্য জ্ঞাত এবং অজ্ঞাত দাতার ছোট-বড় দানের তালিকা বুকে করে থল থস করে উড়ে বেড়াচ্ছিল। এমন সময় বাহির-বাড়ীর রাঙা পথে কণর মৃদ্ধ পায়ের ধ্বনি শোনা গেল ! ইন্দিরা দেখলে অনুপম পা টিপে টিপে তারি দরজার দিকে অগ্রসর হচ্ছে। বিরক্ত-মুখে সে জানলা ছেড়ে ফিরে দাড়াল। বার বার কতবার এই একই পালার অভিনয় ? এর কি আর শেষ নেই ? ঘরের সমস্ত উজ্জল আলো তার মুখের উপর পড়ে তার মুখের বিরক্তিটাকে যেন আগুনের মত দীপ্ত করে তুলল। সে বললে, "এতরাত্রে এখন তুমি কি চাও? দাদ, ভদ্রলোকের ছেলে তুমি—অসময়ে পরের বাড়ী চোরের মত ঢুকতে কি তোমার একটু লজ্জাও করে না ?” 尊 অনুপমের ভীত লুব্ধ মুখে ক্ষণিকের জন্য একটা লজ্জার লালিমা ছড়িয়ে পড়ল। তার পরেই সামূলে নিয়ে একটু রুক্ষ্ম স্বরে সে বললে, “ইন্দির, জানি তুই বড়মানুষের বউ, কিন্তু আমি যে তোর বড় ভাই, একথাটাও কি ঐশ্চর্য্যের অহঙ্কারে ভুলে যেতে হয় ? আমাকে তুই শুধু আজ একবার নয়, সহস্ৰ দিন সহস্রবার যা মুখে আসে তাই বলেছিস ।" ইন্দিরার আগুনভরা চোখের উপব এক-ঝলক জল এসে তার দীপ্ত মুখশ্ৰী মুহূৰ্ত্তে করুণ করে তুললে। সে বললে, “ছোট বোনকে দিয়ে সহস্ৰ বার এ পাপ করিয়েও যে তোমার আশ মেটে না এই ত আমার সকলের চেয়ে লজ্জা । যে মানুষ একবারের বেশী দুবার এ বাড়ীতে পায়ের ধূলো দেননি, তার ছেলে হয়ে তুমি আমার এ অপমান কেন বার বার কর আমি ভেবে পাই না।” অনুপম হঠাৎ নরম হয়ে গেল। যে পথে কথার গতি ফিরেছিল, সে পথে আর বেশীক্ষণ চললে তার কার্য্য সিদ্ধির কোনোই সম্ভাবনা ছিল না। তাই সে বললে, “আজ পর্য্যন্ত এক পয়স তোর কাছে পাইনি, সে কথা ভুলে যাস্নে ইন্দির । আজ আমার শেষ অনুরোধ, আর আমি কোনোদিন ও কথা মুখে আনৃব না, অাজকে আমায় শেষ ভিক্ষা তোকে দিতেই হবে । রোগ, শোক, অনাহার কোনো কথাতেই তোকে টাতে