পাতা:প্রবাসী (দ্বিতীয় ভাগ).djvu/৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

প্রবাসী।

প্রমাণিত হয় যে পতিত হয়, যে ধর্ম্মের আদর্শ হইতে ভ্রষ্ট হয়, সেও মনে মনে বলে, – “আমার না পড়িলেই ভাল হইত।" পতন জন্য তাহার প্রতি লোকের যে অশ্রদ্ধা তাহা সে নিজেই স্বাভাবিক বলিয়া অনুভব করে, এবং তজ্জনিত যে সামাজিক শাস্তি আছে, তাহাকে সে বহন করিতে প্রস্তুত হয়। মানব-হৃদয় স্বাভাবিক ভাবে যদি ধৰ্ম্মের এরূপ অনুগত না হইত, তাহা হইলে কে মানব-সমাজ মধ্যে শান্তি রক্ষা করিতে পারিত? সকল সমাজেই দেখি অল্পসংখ্যক দুষ্ক্রিয়াসক্ত ব্যক্তি বহুসংখ্যক শান্তিপ্রিয় মনুষ্যকে উদ্বেলিত করিয়া তুলিতে পারে। একজন তাতিয়া ভীল, সমগ্র মধ্যপ্রদেশের মানুষকে উদ্বিগ্ন করিয়া তুলিয়াছিল। অনেকে মনে করে জনসমাজে পাপী দুরাচার মানুষের সংখ্যাই অধিক। তাহা যদি হয়, তবে দেখা যাইতেছে যে অল্পসংখ্যক সাধু-প্রকৃতির মানুষ বড় সংখ্যক দুষ্ক্রিয়াসক্ত মানুষকে ধরিতেছে, বাঁধিতেছে, জেলে লইয়া যাইতেছে, ফাঁসিকাঠে ঝুলাইতেছে। ইহা কি বিচিত্র দৃশ্য! ইহা কি একটা গভীররূপে চিন্তা করিবার বিষয় নয়? মহাকবি সেক্সপীয়রের মনে সে চিন্তার উদয় হইয়াছিল। তাহার প্রণীত “ম্যাকবেথ” নামক নাটকে লেডী ম্যাকডফ ও তাহার শিশু পুত্রের কথোপকথনের একটী দৃশ্য আছে, তাহাতে এইরূপ চিন্তার পরিচয় পাওয়া যায়। তাহা হইতে কিয়দংশ নিম্নে উদ্ধৃত করিয়া দিতেছি :-

Son - What is a traitor ? Lady Macd-Why, one that swears and lies Son-And be all traitors that do so? L. Macd-Every one that does so is a traitor and must be hanged. Son - Must they all be hanged that swear and lie?. Lady Macd--- Every one. Son-Who must hang them? Lady Macd-Why, the honest men. Son - Then the liars and swearers are fools for there are liars and swearers enough to beat the honest men and hang up them. ঠিক কথা। জগতে অধার্ম্মিকদের সংখ্যা যদি অধিক হয়, তবে শক্তি অধিক হয় না কেন? কেন অধার্ম্মিকগণ দলবদ্ধ হইয়া ধার্ম্মিকদিগকে শাসনে রাখিয়া যথেচ্ছাচার করিতে পারে না? মনুষ্যসমাজ যে আছে, ইহাতেই প্রমাণ যে অধাৰ্ম্মিকগণ শাসনাধীন থাকিতেছে। কুকুরটার গলায় তুমি বগলসটি দিতে যাইতেছ, সে যদি ঘাড় পাতিয়া সেটা লগ্ন; তাহাতেই প্রমাণ যে সে দেখিয়াছে, যে তোমার এমন শক্তি আছে যাহার হস্ত হইতে নিষ্কৃতি লাভের উপায় নাই; তেমনি অধার্মিকগণ কি জানে যে, জনসমাজের অন্তরালে কোথায় এমন শক্তি আছে, যাহার জয় অবশ্যম্ভাবী ও অনিবার্য্য? নতুবা সাজা মস্তক পাতিয়া লয় কেন?

ধৰ্ম্মেয় জয়ের এই অব্যস্থাবিতা ও অনিবাধ্যহার জ্ঞান, কি মানবের প্রকৃতিনিহিত নয় ? রামায়ণ ও মহাভারত এই উভয় গ্রন্থের প্রতি এদেশের সর্বসাধারণের এত প্রকা- ভক্তি কেন ? তাহা কি এই জন্ম ময় যে, এই উভয় গ্রন্থেরই উপদেশ এই সন্তোষস্তেভোজয়ঃ ? রামায়ণের কবি দেখাইতেছেন, এক দিকে অরণ্যচারী, সাজানষ্ট ও কতিপয় কপিস্যৈমানসতার রাম, অপর দিকে লঙ্কেশ্বর রাবণ, বার প্রতাপে স্বর্গমর্তা কম্পিত ও যার দ্বারে উন্দ্র, চন্দ্র, বায়ু, বরুণ প্রভৃতি দিকপালগণ বাধ্য; পৃথিবীর গণনায়, বিষয়-বুদ্ধির বিচারে, কে ভাবিতে পারিত, কবি দেখাইয়া না দিলে কে সম্ভব বলিয়া মনে করিতে পারিত, যে এই কপিসতায়, অরণ্যচারী রামের হস্তে এই যারা সবর্ণে নিধন প্রাপ্ত হইবে? অথচ তাহাই হইল। নিজ বন্দণে পাপকে বরণ করিয়া বাবণের এই হইল যে, "এক লক্ষ পুত্র তার শোয়া লক্ষ নাতি, এক প্রাণী না রহিল বংশে দিতে বাতি।" কি ভয়ঙ্কর শাস্তি! ঋষি মুখে বলিলেন না কিন্তু আম দিগকে বুঝিতে দিলেন— যতোধর্ম্ম গুতোজরঃ। মহাভারতেরও সেই কথা। কুরুপাণ্ডবেরা যুদ্ধোন্মুগ কৃষ্ণ দ্বারকাপুরীতে বাস করিতেছেন, তিনি উত্তর পক্ষো বন্ধু, কুটুম্বিতাহরে উভয়েরই আত্মীয়, উভয় পক্ষই তাহার সাহায্যপ্রার্থী হইলেন। কৃষ্ণ কি করেন ? তিনি এক কৌশল অবলম্বন করিলেন। এক দিকে আপনাকে ১ম সংখ্যা। ] প্রবাসী । স্কুলমতি, বিষয়-বুদ্ধির পরবশ, পার্থিব ধনের প্রতিই তাহার অধিক দৃষ্টি। তিনি মনে করিলেন একা কৃষ্ণ লইয়া কি করিব? এক বাণের কুৰ্ম্ম বৈত নয়, একা কৃষ্ণ গেলেই ত গেল; আমি নারায়ণী সেনাই লই, ইহারা এক একজন এক একটা বীর, ইহাদের সাহায্যে যুদ্ধে জয়লাভ করিব। ভাবিয়া চিন্তিয়া কুরুরাজ নারায়ণী সেনা লইতে চাহিলেন। কৃষ্ণ বলিলেন, তথাস্তু। পাণ্ডব-সদা পাণ্ডবদিগেরই রতি পেন। কিন্তু অৰ্জ্জুন কৃষ্ণকে সাবনো বরণ করিয়াছেন, শুনিয়া প্রজাবৃন্দের মধ্যে আনন্দধ্বনি উত্থিত হইতে লাগিল । কৃষ্ণ নারায়ণী সেনা ফেলিয়া গেলেন বটে, কিন্তু এমন কিছু লইরা গেলেন, যাহা মহা বিশাল সৈন্যদল অপেক্ষাও বলবত্তর, ঘাভায় গুণে একা মানুষ লক্ষাধিক যানুযের অপেক্ষা বলশালী করা। তাহা কৃষ্ণের চরিত্রের প্রভাব, তারা কৃষ্ণে প্রজাবুদের প্রগাঢ় বিশ্বাস ও নির্ভর। সেই নির্ভর প্রঙ্গা বৃন্দের উক্তি:ত প্রকাশ পাইল:- জরান্ত পাণ্ডুপুত্রাণাং সেবা: পক্ষে জমাদ অর্থ- স্থির জানি পাথরের জন্ম যে পক্ষে আপনি হরি নিলেন আশ্রয় ! প্রজাদের ভবিষ্যদ্বাণী পূর্ণ হইল; ভারতসাম্রাজ্যাধি- পতি, অতুল বিভবের স্বামী, ভীম-দ্রোণ-কর্ণ-প্রভৃতি-মহা- রথিগণপরিবেষ্টিত রাজা দুর্যোধন, ঐ বনবাসী, গৃহ- তাড়িত কতিপয় পাওবের হস্তে সবংশে নিষন প্রাপ্ত হইলেন। আর এক ঋষি মুখে বলিলেন না, কিন্তু আমা দিগকে বুঝিতে দিলেন—“ যতোধর্ম্মস্ততো জয়ঃ।” সত্যই কি ধর্মের জয় অবশ্যম্ভাবী। উপনিষৎকার ঋষিগণ বলিতেছেন:- দিগের প্রতাপ চূর্ণ হইবে এবং প্রভু উত্তর যান্ত্রিকদিগকে অহপানী করি বেশ সর্ব্ব দেশের ঋষিগণের একই সাক্ষ্য। তাঁহারা জন- গণকে বলিতেছেন, তোমরা আশান্বিত হও, ধৰ্ম্মের পর অবশ্যম্ভাবী। ধর্ম্মের জয় কি বাস্তবিক অবশ্যম্ভাবী? সংসারী মানুষকে জিজ্ঞাসা কর, তাহারা এরূপ কথা বলে না। চারিদিকে জন-সমাজের প্রতি দৃষ্টিপাত কর, একবার প্রমাণ পাওয়া যায় না। ইতিবৃত্তের পৃষ্ঠা উদ্ঘাটন কর— সৰ্ব্বস্থলেই ধর্ম্মের জয় দেখা যায় না। প্রতিদিন প্রতি গ্রামে, প্রতি নগরে, ধনী দরিদ্রকে পীড়ন করিতেছে, অন্তারপূর্বক পরস্ব হরণ করিতেছে, করিয়া হৃষ্টচিতে বাস করিতেছে, উত্তরাধিকারিগণের জন্য সম্পদ ঐশ্বৰ্য রাখিয়া যাইতেছে; গৃহে গৃহে দুরাচার পুরুষ সতী সাধী নারীর প্রতি অত্যাচার করিতেছে, এবং স্বীয় বলদর্শে কাল কাটাইয়া যাইতেছে; জগতের বিস্তীর্ণ বাসভূমির প্রতি দৃষ্টিপাত কর, প্রবল জাতিগণ দুর্ব্বল জাতিদিগের গলে পা দিয়া তাহাদের স্বাধীনতা ও অর্থ হরণ করিয়া আপনাদের সাম্রাজ্যের সীমা বর্ধিত করিতেছে ও মুখে বাস করিতেছে। কৈ জগতের কার্যকলাপে ত দেখি না যে সৰ্ব্বত্র ধি জয়যুক্ত হইতেছে ? তবে কি ধর্ম্মের জয় অবশ্যম্ভাবী? ভাবিয়া দেখ, যতোধর্ম্মস্ততোদরঃ এ কথাটা মানব- প্রকৃতিতে এমনি নিহিত যে মানুষ এ কথাটা শুনিতেও ভালবাসে। দৃষ্টান্ত স্বরূপ মনে কর রামায়ণ ও মহাভারত যদি ধৰ্ম্মের জয় না দেখাইয়া অধর্ম্মের জয় দেখাইতেন, যদি রামায়ণের উপসংহার এই হইত যে রাবণ সীতাকে লইয়া নিরুপদ্রবে সুখে বাস করিতে লাগিলেন, রাম কাম্বিয়া "সমুলো বা এর পরিশুষ্যতি যোদৃতমস্তিবাতি অর্ণ- যে অনুভ, অসত্য | অধর্ম্মকে বলে বা আগ্রহ করে সে কাঁদিয়া বনে ফিরিয়া গেলেন ও অজ্ঞাতবাসে মরিলেন; সমূলে পরিষত হয় – তাহার বিনাশ অবশ্যরানী। অথবা মহাভারত যদি এই দেখাইতেন যে, পাণ্ডবগণ রাজ্য- আমাদের দেশের কবিগণ যে সাক্ষ্য দিতেছেন, অপব ভ্রষ্ট ও গৃহতাড়িত হইয়াই চিরদিন বেড়াইলেন এবং দেশের অধিগণও সেই সাক্ষ্য দিয়াছেন। দুৰ্য্যোধন স্বীয় বলদৰ্পে চিরদিন রাজ্যলক্ষ্মী ভোগ করিয়া গেলেন তাহা হইলে উক্ত গ্রন্থস্থা ভারতবাসীর এত আগ- A little that a righteous man hath is better than the riches of many wickel. For the arrons of the ঠিক কথা। জগতে অধার্ম্মিকদের সংখ্যা যদি অধিক অপর দিকে নিজের নারায়ণী সেনা রাখিয়া দুৰ্য্যোধনকে wickol shall be broken, but the Lord upholdeth the রের জিনিস হইত কি না ? তাহা হইলে কাব্যাংশে উক্ত . বলিলেন, আমি উভয়েরই বন্ধু, এক পক্ষ আমাকে লউক অপর পক্ষ আমার নারায়ণী সেনা লউক। দুর্য্যোধ righteous হয়, তবে শক্তি অধিক হয় না কেন ? কেন অধাৰ্ম্মিকগণ, -- গলবন্ধ হইয়া ধাৰ্ম্মিকশিকে শাসনে রাখিয়া মথেচ্ছানের অর্থ—বাদিক মানুষের যে স্বল্প সম্পত্তি পাছে, তাহা স্বহুসংখ্যক অবারিত লোকের প্রচুর বিভব অপেক্ষাও প্রেত, কারণ অধ্যাত্মিক- গ্রন্থদ্বয়ের কি কোনও দোষ স্পর্শ হইত! তাহা হইত না কারণ তাহা হইলে প্রতিদিন অমৃতে ঘাঁহা ঘটিতেছে, তাহারই