পাতা:প্রবাসী (পঞ্চত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৭৫৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

यहांस्छब्र চরিতে এই ক্রম স্পষ্ট। উদয়-সেনের চণ্ডীদাস জগৎ ব্রহ্মময় আনন্দময় দেখতেন। তার “মানুষ" পরম পুরুষ। কৃষ্ণকীৰ্ত্তনে দেখি, তিনি পৌরাণিক রাধাকৃষ্ণকে ভক্তি করতেন না। একটা মত ছিল, শক্তি পূজা ব্যতিরেকে বিষ্ণুভক্তির উদয় হয় না। বিষ্ণুভক্তি আর রাধাকৃষ্ণভক্তি এক নয়। এই তত্ত্ব কৃষ্ণসেনের পুর্থীতে অনেক স্থানে কীতিত হয়েছে। আরও দেখতে পাই, চণ্ডীদাস র্তার প্রায় ৩০ বৎসর বয়সের পরে নূতন গান বাধেন নাই। বিদ্যাপতির সহিত সাক্ষাতের সময় তার বয়স ৩৪ বৎসর । তখন বিদ্যাপতি বলে’ছিলেন, আর কেন সখা বাজে না সে বাসী নব নব রাগে মাতিআ । আর কেন সখী না পিআও মোরে নূতন চাদের অমিঅ ॥ (৬) চণ্ডীদাসের নিবাস । “পৰ্য্যালোচনে” চণ্ডীদাসের কাল পাওয়া গেছে। তার নিবাস কোথায় ছিল? কৃষ্ণসেন ছাতনার যুবরাজপুরের পুরাতন নাম দুই স্থানে মুকুআ বা কুকুর, তিন স্থানে নাজুর, ও এক স্থানে নায়ুর লিখেছেন। ছাতনায় হয়র বা নায়ুর মাঠ, এই নাম এখনও আছে। কিন্তু বীরভূমেও নাম্বর নামে গ্রাম আছে। কেহ কেহ আদি ও বড়ু চণ্ডীদাসকে ও তার শিষ্য দ্বিজ চণ্ডীদাসকে বীরভূম নাকুরবাসী মনে করে’ সংশয়ে রয়েছেন। বীরভূমের ও বাঁকুড়ার পক্ষে যে সব প্রমাণ পাওয়া গেছে, সে সব বিচার করলে তাদের সংশয় দুর হতে পারে । এই বিবেচনায় এখানে দুই পক্ষের তর্ক উপস্থিত করছি। বীর’ বীরভূম, বাকু বাকুড়া । বীর । আদি বড়ু চণ্ডীদাসের নিবাস বীরভূম নামরে ছিল । যেহেতু কবি লিখেছেন, বাশুলী আদেশে কহে চণ্ডীদাসে আর, মামুরের মাঠে হাটের নিকটে বাশুলী বসয়ে যথ। । এখানে কবি নির্জন স্থানে পর্ণকুটীরে থাকতেন। সারা বঙ্গলা দেশে বীরভূম ছাড়া আর কোথাও নামুর নাই। বাকু • বীরভূমে নানুর নামে গ্রাম কোথায়? পুৰীতে মাৰুত্ব আছে। বীর । নায়ুর নামে গ্রাম নাই, নাস্থর আছে। যে শামুর, সেই নাস্থয় । নাহুর নাম পুরাতন । “চণ্ডীদাস-চরিত” \oa বাকু ॥ নায় র ও নাকুর এক হতে পারে। কিন্তু পুখীর পাঠ পরিবর্তন উচিত নয়। কিন্তু পুখীতে আরও আছে, শালতোড়া গ্রাম অতি পীঠস্থান নিত্যার জালয় যথা । ডাকিনী বাশুলী নিত্য সহচরী বসতি করয়ে তথা । নিত্যার অাদেশে বাশুলী চলিল সহজ জানাবার তরে। জমিতে ভ্ৰমিতে নায়ুর গ্রামেতে প্রবেশ খাইর করে। এই সকল পদ হতে পাচ্ছি, (১) চণ্ডীদাস নায়ুর গ্রামে থাকতেন ; (২) সে গ্রামে বাশুলী ছিলেন ; (৩) সে বাগুলী নিত্যার সহচরী ; ( ৪ ) শালতোড়া গ্রামে নিত্যার আলয় ছিল । এখন বল, তোমার নামুরে এই সব আছেন কি ? বীর ॥ নামুরে বিশালাক্ষী আছেন। আর, যিনি বিশালাক্ষী তিনিই বাগুলী । নিকটে নিত্যার আলয় শালতোড়া গ্রাম নাই। সে গ্রাম বাকুড়া জেলায় আছে। ঋজু রেখায় নামুর হতে বিশ ক্রোশ বটে, কিন্তু দেবদেবীর পক্ষে দশ ক্রোশ আর বিশ ক্রোশ একই। বাকু ॥ নান্তরে বিশালাক্ষীই বা কই ? যিনি আছেন তিনি চতুভূজা সরস্বতী। তিনি বৌদ্ধতন্ত্রের ও শাক্ততন্ত্রের পূজিতা শক্তি বটেন । কিন্তু বাসলী নহেন। সরস্বতী, বিশালাক্ষী ও বাসলী তিনের রূপ সম্পূর্ণ পৃথক । তাদের ধ্যানমস্ত্রে তাদের রূপ বর্ণিত আছে । ( "ধৰ্ম্মপূজা বিধান" দেখ )। সরস্বতী ও বাসলী যে এক, তার প্রমাণ কই ? বীর ॥ সরস্বতীর এক নাম বাগীশ্বরী। বাগীশ্বরী শব্দের ‘গ’ লোপে বাঈশ্বরী, বাগুলী হতে পারে। এই ভাষাতত্ত্ব প্রমাণ । বাকু ॥ এ যে আশ্চৰ্য্য কথা। হতে পারে' আর হয়েছে, এক কথা কি ? তত্ত্ব অর্থে স্বরূপ। ভাষাতত্ত্ব, লিপিতত্ত্ব, পুরাতত্ত্ব ইত্যাদি স্বরূপ-বর্ণন । যা হয়েছে তার বর্ণন। কি হতে পারত, তা বলবার সাধ্য নাই। বাগীশ্বরী শব্দ হতে বাসলী নামের উৎপত্তি-কল্পনাও নূতন। কেহ কেহ বলেন, বৌদ্ধ বজেশ্বরী’ বাসলী নাম পেয়েছেন। ভাষাতত্ত্বও এর বিরোধী নয়। বিশ্রেশ্বরী' শব্দের "জ" লোপে বাসলী, বাসেলী হতে পারে। ওড়িয়াতে বাসেলী নাম প্রচলিত।