বিষয়বস্তুতে চলুন

পাতা:প্রবাসী (পঞ্চত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৮৯৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ੋਗ বাড়ির গোয়ালে কাজ করে। জমিদার-ৰস্তার হুকুম অমান্ত করিতে সে সাহস করে নাই, প্রকাও পিতলের গামলা ভরিয়া মাছ তরকারি সে বহন করিয়া লইয়া গিয়াছে। মায়ের কাছে আসিয়া পড়িয়া মমতা বলিল, “বাবা আমায় যা বলেন বলুন মা, তুমি আমাকে আড়াল করতে ধেও না।” যামিনীর মুখে একটু ক্ষীণ হাসির রেখা দেখা দিল। তিনি বলিলেন, “আচ্ছ, সে সব হবে এখন, তুমি বাড়ি চলত।” ( ૨૬ ) বাড়িতে পৌঁছিয়া মা-মেয়েতে আর কোন কথা হইল না। মমতা আগাগোড়া চাদর মুড়ি দিয়া গুইয়া পড়িল, উত্তেজনার প্রথম ঝোকটা কাটিয়া যাওয়ার পর তাহার ঝি-চাকরদের কাছে মুখ দেখাইতেও লজ্জা বোধ হইতে লাগিল। তাহারা এ ব্যাপারটা সহজে ভুলিবে না। কোথায় এক-এক জন আধ সের করিয়া মাছ খাওয়ার ব্যবস্থা করিয়াছিল, তাহার বদলে কিনা শুধু বেগুনপোড়া দিয়া ভাত খাইতে হইল ? এ দুঃখ কি ভুলিবার ? মমতা মাছ তরকারি লইয়া যখন ছেলেদের আড্ডায় উপস্থিত হইল, তখন বেশীর ভাগ ছেলেই স্নান করিতে গিয়াছিল, শুধু দুই জন পাহারায় ছিল। দুইটিই মমতার অপরিচিত, মমতাকেও তাহারা বোধ হয় চেনে না। যুবক দুই জন অত্যন্ত বিস্থিত ভাবে তাহার দিকে তাকাইয়া আছে দেখিয়া মমতা জোর করিয়া সঙ্কোচ কাটাইয়া জিজ্ঞাসা করিল, “অমরবাৰু কি এখানে নেই ? আমি তার সঙ্গে একটু দেখা করতে চাই।” এক জন উত্তর দিল, “তিনি স্নান করতে গিয়েছেন, এখনই আসবেন। আপনি বন্ধন।” আর এক জন তাড়াতাড়ি চালাঘরের ভিতর হইতে একটা মোড়া বাহির করিয়া আনিল । মমতাকে সৌভাগ্যক্রমে বেশী ক্ষণ বসিতে হইল না। মিনিট পাচের ভিতরই দেখা গেল যে অমরেন্দ্র স্বান সারিয়া ফিরিয়া আসিতেছে। সে একলা নয়, সঙ্গে আরও কয়েক জন যুবক আছে। মমতাকে দেখিয়া সে তাড়াতাড়ি অগ্রসর হইয়া আসিল । মমতা একবার তাহার দিকে চোখ তুলিয়া চাহিল, দেখিল অমরের চোখের দৃষ্টিতে শুধু বিস্ময় নয়, আরও কিছু আছে। বুবিল সে ভূল করে নাই। জন্মস্বত্ব و و وي عسيا অমর জিজ্ঞাসা করিল, “এত রোঙ্গে এত দূর হেঁটে এসেছেন ? আমাকে ডেকে পাঠালে ত আমিই যেতাম।" মমতা কম্পিত কণ্ঠে বলিল, “আপনাকে ডাকব কি ক'রে ? আমার বাবা যা ব্যবহার করছেন আপনাদের সঙ্গে, তাতে আমি আর মা বড় লজ্জা পেয়েছি। আজ নাকি হাটে আপনার কিছু জিনিষ কিনতে পান নি ?" অমরের সঙ্গীরাও অত্যন্ত অবাক হইয়া খানিক দূরে দাড়াইয়া ছিল। তাহাদের চোখের সন্মুখে মমতাকে বসাইয়া রাখিতে অমরেরও অস্বস্তি লাগিতেছিল,কিন্তু উপায়ই বা কি ? এটা ক্যাম্প মাত্র, অমরের বাড়ি নয় যে সে নিজের ইচ্ছামত ব্যবস্থা করিবে । মমতার কথার উত্তরে সে বলিল, “তা পাই নি বটে, তবে তাতে আমাদের এমন কিছু অসুবিধা হয় নি। চাল ত আমাদের মজুতই আছে ? অার এখানে ত কষ্ট করতেই আসা।” মমতা উঠিয় দাড়াইয়া বলিল, “আমি কিছু মাছ আর তরকারি এনেছি, আপনার খাবেন। কালও পাঠিয়ে দিতে চেষ্টা করব।” • অমর মুগ্ধ বিস্ময়ে খানিক ক্ষণ মমতার দিকে তাকাইয়৷ রহিল। তাহার পর জিজ্ঞাসা করিল, “আপনার মা পাঠিয়েছেন ?” মমতার গলা যেন বুজিয়া আসিতেছিল । অমর নিশ্চয়ই তাহাকে অসম্ভব রকম বেহায়া মনে করিতেছে । কিন্তু উপায় কি ? নিজের কৃত কর্মের দায় মমতাকেই গ্রহণ করিতে হইবে। মায়ের উপর তাহা চাপাইবার ইচ্ছা তাহার নাই । গলা পরিষ্কার করিয়া সে বলিল, “না আমিই এনেছি, মা জানেন না, গিয়ে মাকে বল্ব।” আর তাহার দাড়াইতে ভরসা হইল না। বাগ দাৰোঁকে তাহার সঙ্গে আসিতে ইঙ্গিত করিয়া সে চলিতে আরম্ভ করিল। অমর তাহার সঙ্গে সঙ্গে থানিক দূর অগ্রসর হইয়া জালিল । তাহার পর এক জায়গায় দাড়াইয়া পড়িয়া বলিল, “আচ্ছা আমি তা হ’লে এখন আর এগোব না, ওরা সবাই অপেক্ষা ক'রে আছে । বিকেলে যাব একবার।” মমতা কোন মতে তাহার নমস্কারের উত্তরে প্রতিনমস্কার করিয়া অগ্রসর হইয়া চলিল। পিছন ফিরিয়া