পাতা:প্রবাসী (পঞ্চত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৭১০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

দিনেন্দ্রনাথ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর অকস্মাং কাল দিনেন্দ্রনাথের মৃত্যুসংবাদ আশ্রমে এসে পৌছল। শোকের ঘটনা উপলক্ষ্য করে আঙ্গঠানিকভাবে যে শোকপ্রকাশ করা হয় তার প্রথাগত অঙ্গ মেন একে না মনে করি। বৰ্ত্তমান ছাত্রছাত্রীরা সকলে দিনেন্দ্রকে ব্যক্তিগতভাবে জানত না- কম্মের যোগে সম্বন্ধও তার সঙ্গে ইদানীং এখানকার অল্প লোকের সঙ্গেই ছিল । অধ্যাপকের সকলেই এক সময়ে তার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন ও তার সঙ্গে মেহপ্রেমের সম্বন্ধ তাদের ঘনিষ্ঠ হ’তে পেরেছিল । দিনেন্দ্রনাথ ঠাকুর যে শোকের কোনো প্রতিকার নেই তাকে নিয়ে সকলে মিলে আন্দোলন ক’রে কোনো লাভ নেই এবং আত্মীয়বন্ধুদের যে-শোক, অন্য সকলের মনে তার সত্যতাও প্রবল নয়। এই মৃত্যুকে উপলক্ষ্য করে মৃত্যুর স্বরূপকে চিন্ত করবার কথ মনে রক্ষা কর চাই । সমস্ত জগৎকে ব্যাপ্ত করে এমন কোনো কোণ নেই যেখানে প্রাণের সঙ্গে মৃত্যুর সম্বন্ধ লীলায়িত হচ্ছে না ; এই যে অনিবাৰ্য্য সঙ্গ, এ যে শুধু অনিবাৰ্য্য তা নয়, এ না হ’লে মঙ্গল হত না দুখকে মানতেই হবে, শোক দুঃখ মিলন বিচ্ছেদ উন্মীলন নিীলনেই সমাজ গ্রথিত— এই আঘাত অভিঘাতের মধ্য দিয়েই শুষ্টির প্রক্রিয়া চলছে। এর মধ্যে যে দ্বন্দ্ব যে কঠোরত আছে সেইটি না থাকলেই যথার্থ দুঃখের কারণ হ’ত । সমস্ত জগৎ জুড়ে মাঙ্গযের মধ্যে অপরিসীম দুঃখ, আমরা তার সৃষ্টির দিকটা মহত্ত্বের দিকটাই দেখব, তার মধ্যে যে অপরাজিত সত্য সে তো অবসন্ন হন না –অথচ মাহুষের দুঃখের কি অস্ত আছে ? মৃত্যুকে যদি বিচ্ছিন্ন ক'রে দেখি তা হ’লেই আমরা অসহিষ্ণু হয়ে নালিশ করি এর মধ্যে মঙ্গল কোথায় ? এই দুঃখের মধ্যেই মঙ্গল নিহিত আছে, নইলে দুৰ্ব্বলতায় স্বষ্টি অভিভূত হ’ত — দ্রুপ আছে ব’লেই মনুষ্যত্বের সম্মান । দুঃখের আঘাত বেদন মাঙ্গুয়ের জীবনে নানান কান্নায় প্রকাশ ; ইতিহাসের মধ্যে যদি দেখি তা হ’লে দেখব অপরিসীম দুঃখকে আত্মসাৎ ক’রে মানুষ আপন সভ্যতাকে প্রতিষ্ঠিত করেছে, সে সব এখন কাহিনীতে পরিণত । ইতিহাসে কত দুঃখ প্লাবন ঘটেছে, কত হত্যাব্যাপার কত নিষ্ঠুরত—সে সব বিলুপ্ত হয়েছে, রেখে গেছে দুঃখবিজয়ী মহিমা, মৃত্যুবিজয়ী প্রাণ -মৃত্যুর সম্মুখ দিয়ে প্রাণের ধারা চলেছে—এ না হ’লে মানুষের অপমান হ’ত । মৃত্যুর স্বরূপ আমরা জানি নে বলে কল্পনায় নানা বিভীষিকার কষ্টি করি । প্রাণলোককে মৃত্যু আঘাত করেছে কিন্তু বিধ্বস্ত করতে পারে নি— প্রাণের প্রকাশে অন্তরালে মৃত্যুর ক্রিয়া, প্রাণকে সে-ই প্রকাশিত করে । সম্মুখে প্রাণের লীলা, মৃত্যু আছে নেপথ্যে । অনেকে ভয় দেখায় মৃত্যু আছে, তাই প্রাণ মায় । আমরা বলি, প্রাণই সত্য, মৃত্যুই মায়া ; মৃত্যু আছে