পাতা:প্রবাসী (পঞ্চদশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).pdf/১৪৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

২৩৩ بن بربرية بيجينات .

ാ. -------- ভারী পতি, ডাঃ চক্ৰবৰ্ত্তীর পত্র। চক্রবর্তী এম বি, পাশ করিয়া বোম্বের মেডিকেল কলেজে এম, ডি, পড়িতেছেন।

এই পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হইলেই তিনি বিবাহ করিয়া ব্যবসায়ে ব্ৰতী হইবেন। দুঃখের বিষয় দুইবার পরীক্ষায় অকৃতকাৰ্য্য হওয়ায় চৌধুরী সাহেবের আদেশে পুনরায় পরীক্ষা দিবার চেষ্টা করিতেছেন বটে, কিন্তু পরীক্ষার অপেক্ষ পত্র লেখার উৎসাহ তাহার এতই গুরুতর হইয় উঠিয়াছে যে, পরীক্ষায় কৃতকাৰ্য্যতার আশ অভিজ্ঞগণের মনে স্বদরপরাহত বলিয়। বোধ হয়। চিকিৎসক শরীরতত্ব অপেক্ষা মনস্তত্বে বিশেষ ‘মনোযোগী হইলে তাহ যে নিতান্তই দুলক্ষণ এবং তাহা যে মোটেই কল্যাণকর নহে, এ কথা অনেকে তাহাকে বার বার স্মরণ করাইয়া দিলেও তিনি ভ্ৰক্ষেপ করিতেন না, তাহার কারণ অভিভাবক তাহার খরচ যেরূপেই হউক নিয়মিত জুটাইতেন, এবং তিনিও সময় এবং অর্থ, এ দুটির অযথা অপব্যয়ে কিছুমাত্র কুষ্ঠিত ছিলেন না। অভাব যে মাচুধের শুধু অবনতি করে, তাহা নহে, উন্নতিও করে। - নিজের চিঠি লইয়া জ্যোৎস্ন। গৃহত্যাগ করিল। কারণ চিঠিখানির উত্তর এখনই লিখিতে হইবে। লতিকাও তাহার পশ্চাদ্বর্কিনী হইতেছিল, গোপনে নির্জনে বোম্বের চিঠিখান দেখিবে বলিয়া-কিন্তু সেই সময় চৌধুরীসাহেব নী পড়িতে পড়িতে খানসামাকে বলিলেন, "ওরে আন্দুকে একবার ডাক তো!" লতিকা উদ্যতচরণ সম্বরণ করিয়৷ টেবিলের উপরে একথান খোলা বই ঝুঁকিয়া পড়িয়া দেখিতে লাগিল। খানিক পরে আন্দু আসিয়া জুতা খুলিয়। ঘরে ঢুকিল । চৌধুরীসাহেবকে অভিবাদন করিতেই তিনি ঘাড় তুলিয়া সহস্তে বলিলেন "তোমার যে কাজ পড়েছে বাবা " । - আন্দু সবিস্ময়ে বলিল “হুকুম করুন।” “কাল বেলা দশটার মধ্যে আমায় হাইকোর্টে পৌছে দিতে হবে, একটা আপলের মামল আছে।" “বেশ তু।” - "ভোর চারটের সময় এখান থেকে ছাড়বে, বেল সাড়ে ছটায় আসানসোলে পৌছে আমার চ খাওয়াবে, তারপর সেখান থেকে ছেড়ে বেলা সাড়ে আটটার মধ্যে আমায় প্ৰৱাসী—জ্যৈষ্ঠ, ১৩২২ ヘヘヘヘヘふ。 ാ, ব্যাণ্ডেলের হোটেলে পৌছে দিতে হবে, ঘণ্টাখানেক পরে সেখান থেকে ছেড়ে হাইকোর্ট—বুঝলে, পারবে তো?" তৎক্ষণাৎ মাথা নাড়িয়া সেলাম দিয়া আৰু বলিল “বহুং খুব ।” আন্দু প্রস্থানের উপক্রম করিতেই -চৌধুরীসাহেব বলি লেন “দেখ, ভোর বেল উঠতে হবে বলে তুমি যেন সমস্ত । রাত শ্মশান জাগিয়ে বসে থেক না। আমি নিজে তোমাদের ভোর বেল উঠিয়ে দেব। রাত্রে নিশ্চিন্ত হয়ে ঘুমিও, বুঝলে !" কোন প্রয়োজনীয় কাজে নিদিষ্ট সময়ে চৌধুরীসাহেবৰে স্থানান্তরে পৌছাইয়ু দিতে হইলে, কৰ্ম্মোৎসাহী আন্দু রাত্রে ঘুমাইতে পারিত না। চৌধুরীসাহেবের কাজ উৎরাইলে, তবে সে নিশ্চিন্ত হইত। তাহার প্রশংসনীয় কৰ্ম্মদায়িত্বজ্ঞান, চৌধুরীসাহেবকে বিস্মিত ও উদ্বিগ্ন করিয়া তুলিত, পাছে অনিয়মে আন্দুর স্বাস্থ্য ভঙ্গ হয়। তাই তিনি পূৰ্ব্বাহ্নে তাহাকে সতর্ক করিয়া দিতেন । হাসিয়া সসন্ত্রমে-মস্তক নত করিয়া আন্দু চলিয়া গেল । - একটা উৎকট উত্তেজনায় লতিকার ধমনীতে রক্তশ্ৰোত দ্রুতবেগে ছুটতে লাগিল। টেবিলটা দৃঢ়ভাবে চাপিয়া, সে বুক পৰ্য্যন্ত চুইয়। বইখানা দেখিতে লাগিল । - সেও কি এইসঙ্গে একবার কলিকাতা ঘুরিয়া আসিতে পারে না ?—প্রস্তাবটা কি পিতার কাছে অসঙ্গত বিবেচিত হইবে ? হঠাৎ বিছাতের মত অন্য একটা চিন্তু তাহার মনে ঈর্ষার তীব্রঝিলিক হানিয়া গেল! জ্যোংস্কা যদি যাইতে চায়! কি ভয়ানক –সে সান্দুর প্রতি তীক্ষ লক্ষ্য রাখি, আছে—তাহার পবিত্র স্বন্দর দৃষ্টি সৰ্ব্বদাই নত বটে, কিন্তু কে জানে কেন জ্যোৎস্নাকে দেখিলেই তাহার সেই দৃষ্ট মুখ তুলিয়া কথা কহিবে, কিম্বা তাহার মাধুর্য্যস্মিত টানা চক্ষু দুটি দেখিয়া মুগ্ধ হইয়া ভাবিবে—“সুন্দর বটে "= সেটি লতিকা কিছুতেই হইতে দিবে না। চৌধুরী-সাহেবের কলিকাতা যাওয়ার সংবাদটাও জ্যোৎস্নাকে জানান হইবে না। ভাগে তাহার সমক্ষে পিতা একথা বলেন নাই।-- - অতিমাত্রায় উজ্জল হইয় উঠে। আন্দু যে জ্যোংস্কার সহিত। [ ১৫শ ভাগ, ১ম খণ্ড ২য় সংখ্যা ] সেখ অন্দু কঠিনভাবে ওষ্ঠ চাপিয়া লতিকা অত্যন্ত শক্ত হইয়৷ চলিয়া গেল । চৌধুরী-সাহেব দেওয়ানী কাৰ্য্যবিধি আইনের কূট মন্তার মীমাংসায় মাথা ঘামাইতে লাগিলেন। কন্যার ভাবের পরিবর্তন লক্ষ্য-করিতে পারিলেন না। ( ७ ) পরদিন প্রাতে নির্দিষ্ট বন্দোবস্ত অনুসারে চৌধুরীসাহেব দুইজন ভৃত্য ও আন্দুকে লইয়া মোটরকারে কলিকাতা চলিয়া গেলেন । - একটু বেলা হইলে, লতিকাকে না দেখিতে পাইয়৷ জ্যোংস্ক তাহার শয়নকক্ষে খুজিতে গেল ; দেখিল লতিক চাদর মুড়ি দিয়া শুইয়া আছে, একজন হিন্দুস্থানী দাই তাহার পা টিপিতেছে, লতিকা খুব ছটফট করিতেছে। লতিকার কপালে হাত দিয়া জ্যোংস্ক জিজ্ঞাসা করিল "জর হল কখন ?” - -: লতিকা প্রথমত কথা কহিল না। দুই তিনবার জিজ্ঞাসিত হইয়া বিরক্তশ্বরে বলিল, “কাল রাত্রে"। থার্শমিটার ঝাড়িতে ঝাড়িতে সরসী ঘরে ঢুকিল। দাই পাছড়িয়া সরিয়া বসিল । সরসী বলিল,“দিদি ফিরে শোও ।" দিদি কথা কানে তুলিল না। আপন মনে উন্টাইয়৷ পাটাইয়া ‘উ: আঃ করিতে লাগিল । সরসীর কথা লতিক আদে গ্রাহ করিতেছে না দেখিয়া জ্যোৎস্ব নিজে থার্শ্বমিটার লইয়া লতিকার গায়ে হাত বুলাইতে বুলাইতে স্নেহ মন্ত্র স্বরে বলিল—“ফিরে শোও না ভাই ।” বারম্বার সনিৰ্ব্বন্ধ অনুরোধে লতিকা ত্যক্ত হইয়া সবেগে ফিরিয়া শুইয়া সতেজে বলিল “দাও।” জ্যোৎস্না যেন থতমত থাইয়া গেল। কয়দিন হইতে লতিকার কুর দৃষ্টি এবং কঠোর আচরণগুলা ক্রমাগত তাহার চিত্ত অপ্রসন্ন করিয়া তুলিতেছিল। ধৈর্য ধরিয়া নিৰ্ব্বিবাদে সহিষ্ণু জ্যোৎস্ন। তাহার ব্যবহারগুলা সহ করিয়া চলিতেছে, দাম্ভিক লতিকা সকলের উপরই যেন সপ্তমে চড়িয়া আছে! বিশেষতঃ কয়দিন হইতে জ্যোংস্ক বেশ স্পষ্ট বুঝিতে পারিতেছে যে লতিকা তাহার প্রতি একটা বিদ্বেষময় স্বাতন্ত্র্যভাব গম্ভীর্য্যের অন্তরালে গোপন রাখিয়াছে, কার্য্যক্ষেত্রে অতর্কিতে সেটা চোখে বেশ ধর - ২৬৭ পড়িতেছে। জ্যোংস্ক শাস্তভাবে থামিটার দিয়া দেওয়ালের বড় ঘড়ীর প্রতি দৃষ্টি রাখিয়া গায়ে হাত দিয়া মৃদুভাবে বলিল “একটু শাস্ত হয়ে শোও।” লতিকা জলিয়া উঠিল । “আমি কি সাধ করে চ্যাচাচ্ছিা! আমার যা হচ্ছে, তা কে জানবে!”—সজোরে জ্যোৎস্নার হাত ঠেলিয়া দিয়া, নিজেই থামিটার চাপিয়া ধরিয়া উঠিয়া বসিল । চক্ষু মুদিয়া সঘন নিশ্বাসের সহিত দুলিতে লাগিল, জরের ঘোরে সে যেন আর ঠিক থাকিতে পারিতেছে না! ক্ষণ পরে চোখ খুলিয়া ভ্ৰকুটা করিয়া সরলীকে বলিল "তোকে মা কেন আমার কাছে পাঠান,-তুই আসিস না” লতিকা সশব্দে আবার বিছানায় শুইয়া পড়িল৷ জ্যোৎস্ন স্তব্ধ হইয়া বসিয়া রহিল, সরসীর প্রতি তীব্র ভাবে বর্তি তিরস্কারের গোপন ইঙ্গিত, জ্যোৎস্ন দেখিল সম্পূর্ণই তাহার উদ্দেশে ! তাহার আত্মসম্মানে বিষম আঘাত লাগিল। অমানবদনে নীরবে সহ করিবার শক্তি—তাহার আজন্মের অভ্যাস, তাই নীরবে রহিল। তিরস্কৃত সরসী সভয়ে বলিল “পারাটা উঠে গেছে বোধ হয়।” ঝাঝিয়। লতিকা বলিল “যাক উঠে, যা হবার আমার হবে তোমার তো নয় ?” কথাটা যুক্তিসঙ্গত দেখিয়া সরলী চুপ করিয়া রহিল। গায়ে পড়িয়া ছেলেমামুষের সহিত ঝগড় করিতে দেখিয়া জ্যোংস্কা বিমৰ্ষ-করুণ দৃষ্টিতে সরসীর পানে একবার চাহিল। তাহার পর থামিটার তুলিয়া ঘুরাইয়৷ ফিরাইয়া দেখিতে দেখিতে সবিস্ময়ে বলিল "এ যে অনেক হয়েছে, এত হবে!” . মাথা তুলিয়া লতিকা বলিল “কত হয়েছে?" “এক শো পাচ, কিন্তু গায়ের উত্তাপে—” “ঐ রকমই হবে, বলিয়া লতিকা আশ্বস্তভাবে মুখ ফিরাইয়ু শুইল। অসুখটা বাড়িলেই সে যেন আরাম পায় ! বলিল “আমার এ সাধারণ অস্থখ নয়, বোধ হচ্ছে আমার প্লেগ হবে ।” - দাসীটা এতক্ষণ বুকে হাটু গুজিয়া, হাত দুটি গুটাইয়৷ নীরবে বসিয়া ছিল । প্লেগের নামে চমকিয় বলিল “আহে। মায় পিলকি!" - সরসীর দুর্ভাগ্য ! সে আবার কথা কহিল “ন ন অত জর হবে না, নাড়া চাড়া পেয়ে নিশ্চয়—”