পাতা:প্রবাসী (পঞ্চদশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).pdf/১৫৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

&brや ক্ষতস্থান বন্ধন করিলেন। কল্যাণীদেবী কিংক্ষণ উপবেশন করিয়া থাকিয় ধীরে ধীরে বাহুমূলে মন্তকরক্ষা করিয়া শয়ন করিলেন। ধৰ্ম্মপাল ক্রমে বুঝিতে পারিলেন যে কল্যাণী নিদ্রিত হইয়াছেন, তখন তিনি উন্মুক্ত তরবারি হস্তে ইতস্তত পদচারণ করিতে লাগিলেন। তিনি স্থির করিয়াছিলেন যে, রজনীর অবশিষ্টাংশ জাগিয়া থাকিবেন, সেই জন্যই উপবেশন না করিয়া পাদচারণা করিতেছিলেন, কিন্তু সমস্তদিনের ঘোর পরিশ্রমে গৌড়েশ্বর অতিশয় ক্লাস্ত হইয়াছিলেন। কিয়ৎক্ষণ পরে পদচারণ অসম্ভব হইয়৷ উঠিল, ধৰ্ম্মপাল নিদ্রিত কল্যাণীর নিকটে আসিয়া উপবেশন করিলেন। তৎক্ষণাৎ নিদ্ৰা আসিয়া তাহাকে অভিভূত করিয়া ফেলিল, গৌড়েশ্বর কোষমুক্ত অসির উপরে মস্তক স্থাপন করিয়া ঘুমাইয় পড়িলেন। ক্রমে পাখী ডাকিল, পূৰ্ব্বদিক হইতে অন্ধকার পলাইয়৷ গেল। তরুণ উষার শুভ্র আলোকে দিগন্ত সদ্যস্নাত। কিশোরীর ন্যায় সুন্দরী হইয়া উঠিল, ধৰ্ম্মপাল ও কল্যাণী তখনও গাঢ় নিদ্রায় অভিভূত। পূৰ্ব্বাকাশে খণ্ড মেঘগুলি রক্তরখনে রঞ্জিত হইয়া উঠিল, শিশিরক্ষাত তরুণীর্ষগুলি নবীন তপনের কিরণে সুবর্ণবর্ণেরঞ্জিত হইল, তখনও তাহাদের নিদ্রাভঙ্গ হইল না। ক্রমে রৌদ্র প্রথর হইয়া উঠিল, প্রভাত-স্বর্ঘ্যের কিরণ মুখমণ্ডল স্পর্শ করিবামাত্র ধৰ্ম্মপাল জাগিয়া উঠিলেন। তিনি ব্যস্ত হইয়া উঠিয়া বসিয়া দেখিলেন যে জনশূন্ত প্রশস্ত দীর্ঘিকাতীরে খ্যামল তৃণক্ষেত্রে কল্যাণীদেবী তখনও* নিদ্রিত রহিয়াছেন। গৌড়েশ্বর চক্ষু মার্জন করিয়া আসি হস্তে উঠিয়া দাড়াইলেন, কিন্তু কল্যাণীর সুন্দর মুখমণ্ডল হইতে তাহার দৃষ্টি অন্যত্র যাইতে চাহিল না। ধৰ্ম্মপাল দেখিলেন কল্যাণীর মুখখানি অতি স্বন্দর, এমন স্বন্দর মুখ তিনি বোধ হয় আর কখনও দেখেন নাই। তখন দীর্ঘিকায় তরুণ তপনের করম্পর্শে শত শত কমলিনী বিকশিত হইয়া উঠিতেছিল, তাহার মনে হইল বাপী তীরে তৃণক্ষেত্রে তেমনই আর-একটি কমল ফুটিয়৷ উঠিয়াছে।" কেমন আকর্ণবিশ্রান্ত নয়নযুগল, তাহার উপরে প্রসাধনপটু শিল্পী যেন কঙ্গলের রেখা টানিয়া দিয়াছে, নাতিপ্রশস্ত কপালের উপরে চূর্ণকুন্তল আসিয়৷ পড়িয়াছে, ওষ্ঠ দুইটির বর্ণ কি সুন্দর । প্রবাসী—জ্যৈষ্ঠ ১৩২২ এই সময়ে রৌদ্র আসিয়া কল্যাণীদেবীর নিদ্রা-নিৰ্মীলিত নয়নদ্বয়ের উপরে পড়িল, কল্যাণীর নিদ্রাভঙ্গ হইলীি জাগিয়া দেখিলেন ধৰ্ম্মপাল সস্তৃষ্ণ নয়নে তাহার মুখের পানে চাহিয়া আছেন। কল্যাণীর স্বন্দর মুখখানি লজ্জা রক্তবর্ণ হইয়া উঠিল, তিনি অবগুণ্ঠন টানিয়া উঠি বসিলেন, ধৰ্ম্মপালও লজ্জিত হইয়৷ অন্যদিকে মুখ ফিরাইলেন। এতক্ষণে গৌড়েশ্বরের দৃষ্টি অন্য পথে চলিল, তিনি দেখিতে পাইলেন যে, অদূরে ইষ্টক-নিৰ্ম্মিত প্রশস্ত ঘাট। ঘাট বোধ হয় ব্যবহার হয় না, কারণ সোপানসমূহ ঘন খামল তৃণরাজিমণ্ডিত। ঘাটের অদূরে একটি বৃহংকা অশ্বখবৃক্ষ, তাহার নিম্নে বহু শুষ্ক পত্র পতিত রহিয়াছে। অশ্বখ বৃক্ষ দেখিয়া ধৰ্ম্মপালের মনে হইল যে, স্থানটি তাহার পূৰ্ব্বপরিচিত। এক মুহূৰ্ত্ত পরে সমস্ত কথা মনে পড়িয়া গেল। আর-একদিন কল্যাণীদেবীর সহিত পলায়ন ও এই দীধিকার ঘাটে আশ্রয় গ্রহণ, একে একে গৌড়শ্বরের মানসপটে চিত্রিত হইল। তখন তাহার মনে হইল যে, দীধিকার তীরে তখন জনশূন্ত গ্রাম ছিল ; এতদিন গ্রামের লোক নিশ্চয়ই ফিরিয়৷ আসিয়াছে, সুতরাং গ্রামে নিশ্চয় আশ্রয় মিলিবে। ধৰ্ম্মপাল তখন কল্যাণীকে জিজ্ঞাসা করিলেন, “দেবি। পায়ের বেদনা কমিয়াছে কি?" কল্যাণী অক্ষুটুম্বরে কহিলেন, “হ ।” “চলিয়া যাইতে পারিবেন ?” “বোধ হয় পারিব।” “তবে চলুন গ্রামে যাই।” কল্যাণী ধীরে ধীরে উঠিয়া দাড়াইলেন, তখন ধৰ্ম্মপাল জিজ্ঞাসা করিলেন, “দেবি, এই স্থান চিনিতে পারেন কি ?” অফ টুম্বরে উত্তর হইল, "ই।” “আর-একদিন—আর-একদিন আপনার সহিত এইস্থানে আসিয়াছিলাম।” কল্যাণী দেবী উত্তর না দিয়া মস্তকের অবগুণ্ঠন টানিয়া দিলেন। ধৰ্ম্মপাল ধীরে ধীরে অগ্রসর হইলেন, কল্যাণী অতি কষ্টে তাহার অমুসরণ করিতে লাগিলেন। ধৰ্ম্মপাল পশ্চাতে চাহিয়া দেখিলেন যে কল্যাণী তখনও চলিতে অত্যন্ত যাতনা অনুভব করিতেছেন। তিনি ফিরিয়া আসিয়া তাহার হস্তধারণ করিলেন। - কল্যাণী ভাবী [ ১৫শ ভাগ, ১ম খণ্ড I ২য় সংখ্যা] উৰ্বার স্বন্ধে ভর দিয়া ধীরে ধীরে গ্রামে প্রবেশ করিলেন । গ্রাম তখনও জনশূন্ত, অরাজকতা দূর হইলেও গ্রামবাসীগণ আর ফিরিয়া আসে নাই। তাহ দেখিয়া ধৰ্ম্মপাল অত্যন্ত চিন্তিত হইয়া পড়িলেন। কল্যাণী দেবী চলিতেছেন বটে, কিন্তু বোধ হয় অধিকদূর চলিতে পরিবেন না। ধৰ্ম্মপাল ভরসা করিয়াছিলেন যে, গ্রামে কোন গৃহস্থের আশ্রয়ে তাহাকে রাথিয়া তিনি একটি গৌড়ীয় সেনার অন্বেষণে যাইবেন, কিন্তু এখন তাহ অসম্ভব। কল্যাণী কিয়দর চলিয়া স্থির হইয়া দাড়াইলেন। ধৰ্ম্মপাল বুঝিলেন যে, তিনি ক্লাস্ত হইয় পড়িয়াছেন। তিনি কল্যাণীকে বসিতে অনুরোধ করিয়া স্বয়ং তৃণক্ষেত্রে উপবেশন করিলেন। তখন দিবসের প্রথম প্রহর অতীত হইয়াছে, শেষ বসন্তের স্বৰ্য্য প্রচণ্ডমূৰ্ত্তি ধারণ করিয়াছে । গৌড়েশ্বর ক্রমে তৃষ্ণাতুর হইয়া উঠিলেন এবং কিয়ৎক্ষণপরে কল্যাণীকে কহিলেন, “দেবি । সেবারে এই গ্রামে ফলমূল পাইয়াছিলাম, আপনি এই স্থানে অপেক্ষা করুন, আমি শীঘ্রই ফিরিয়া আসিতেছি।" কল্যাণী কহিলেন, “এক আমার বড় ভয় করিবে ।" “আমি নিকটেই থাকিব, আপনার কোন ভয় নাই।" কল্যাণীদেবী সেই স্থানে বসিয়া অন্বেষণ করিয়া গৌড়েশ্বর কোনই আহার্য্য সামগ্ৰী দেখিতে পাইলেন না। তখন তিনি হতাশ হইয় গ্রাম্যপথে ফিরিয়া আসিলেন। ফিরিয়া আসিয়া দেখিলেন যে, কল্যাণী যেস্থানে বসিয়া ছিলেন সে-স্থান শূন্য। ধৰ্ম্মপাল ভীত হইয়৷ চারিদিকে অন্বেষণ করিয়া দেখিলেন, কিন্তু কোন স্থানেই কল্যাণীদেবীকে দেখিতে পাইলেন না। তখন তিনি উচ্চৈঃস্বরে কল্যাণীর নাম ধরিয়৷ ডাকিতে লাগিলেন, কেহই উত্তর দিল না। কল্যাণীর সন্ধানে বিজনগ্রামের সীমায় আসিয়! ধৰ্ম্মপাল পৃষ্ঠে সহসা দারুণ আঘাত অনুভব করিলেন, পশ্চাৎ ফিরিয়া দেখিলেন যে পৃষ্ঠে কে শরাঘাত করিয়াছে, দেখিতে দেখিতে আরও দুই তিনটি শর তাহার দেহে বিদ্ধ হইল, গৌড়েশ্বর চেতন হারাইয়া ভূমিতলে পতিত হইলেন । ( ক্রমশ ). - শ্রীরাখালদাস বন্দ্যোপাধ্যায় । x8 আমরা রহিলেন, ধৰ্ম্মপাল । আহার্যোর অন্বেষণে বনমধ্যে প্রবেশ করিলেন। বন্ধক্ষণ - আমরা (গান ) আমরা সবাই নাই ভিড়ে ভাই নাই মোরা নাই দলে, বাসা আমাদের গন্ধরাজের পরিমল-মণ্ডলে। আমরা জানিনে চিনিনে শুনিনে আমরা মানিনে কারে ; হৃদয়ে যাহার রাজ্য,–হৃদয় রাজ-পূজা দেয় তারে ; মন যদি মানে তবেই মানি গো পুলক-অশ্ৰজলে। অরসিকে মোরা যোড় হাতে কহি ভিড় বাড়ায়ে না ভাই, মরমী রসিকে হৃদয়ের দিকে টেনে নিতে মোর চাই ! নাই আমাদের ভিতর বাহির কোনো কিছু নাই ছাপা, নিশানের পরে আগুন-বরণ আঁকি বৈশাখী চাপা ; মিলন মোদের কাব্যরাজের কল্প-ছত্র-তলে । বসতি মোদের গন্ধরাজের পরিমল-মণ্ডলে ॥ • শ্ৰীসত্যেন্দ্রনাথ দত্ত । . རྨི་ཕུ་ রজনাথ ঠাকুর মহাশয়ের জন্মদিন উপলক্ষে রচিত।