পাতা:প্রবাসী (পঞ্চদশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).pdf/১৮০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

NoNo o --০৮:১৭, ১৯ এপ্রিল ২০১৬ (ইউটিসি)~~ ০৮:১৭, ১৯ এপ্রিল ২০১৬ (ইউটিসি)০৮:১৭, ১৯ এপ্রিল ২০১৬ (ইউটিসি)~ মুসলমানদিগের ইহা স্মরণ রাখা কৰ্ত্তব্য যে ইংরেজপ্রাধান্যের অব্যবহিত পূৰ্ব্বে ভারতবর্ষে নামে মোগল বাদশাহের প্রাধান্য থাকিলেও বাস্তবিক প্রাধান্য মহারাষ্ট্রীয়দেরই ছিল। স্থানে স্থানে প্রাধান্ত শিখ ও রাজপুতদের ছিল। স্বতরাং ইংরেজ-অভু্যদয়ের পূৰ্ব্বেই মুসলমানের বিজেতার পদ হারাইয়াছিলেন, এবং নানা স্থানে বিজিতদের দ্বারা পরাজিত হইয়াছিলেন। ইংরেজেরা যেমন দেশ জয় প্রধানতঃ দেশবাসীদের দ্বারা করিয়াছেন, মুসলমানেরাও তেমনি নানা যুদ্ধে হিন্দু সেনা ও সেনাপতির সাহায্য লইয়াছিলেন। স্বতরাং বিজয়ী হওয়ার যদি কিছু প্রশংসা থাকে, ত, তাহার কতকটা অংশ হিন্দুদেরও প্রাপ্য। ইহাও স্মরণ রাখিতে হইবে, যে, ইংরেজ প্রাধান্তের পূৰ্ব্বেও, শুধু মহারাষ্ট্র, রাজপুতানা, পঞ্জাব প্রভৃতি প্রদেশে নয়, অন্যত্রও, মধ্যে মধ্যে হিন্দুরা মুসলমানদিগকে পরাজিত করিয়া রাজ হইয়াছিলেন। বাংলা দেশেও ইহা ঘটিয়াছিল। আমরা পূৰ্ব্বে প্রকারান্তরে বলিয়াছি যে এক দল লোক যদি কোন সময়ে আর-একদল লোককে পরাজিত করে, তাহা হইলে পরবর্তী সময়ে বিজেতাদের ও তাহাদের স্বজাতীয়দের বংশধরেরা বিজিতদের ও তাহাদের স্বজাতীয়দিগের বংশধরগণকে হীন বলিয়া ন্যায়তঃ অবজ্ঞা করিতে পারে না। কিন্তু ধরা যাক যে বিজেতাদের বংশধরেরা এবং তাহদের স্বজাতীয়গণের বংশধরেরা চিরকালই বিজেতা বলিয়া গৌরব করিতে পারে, এবং বিজিতগণের বংশধরেরা ও তাঁহাদের স্বজাতীয়দের বংশধরেরাও চিরকাল বিজিত বলিয়া অপমানের যোগ্য। এখন বিচাৰ্য্য এই যে বিজেতা কাহারা, তাহাদের স্বজাতীয় কাহার, এবং বিজিত কাহারা ও তাহদের স্বজাতীয় কাহারা। প্রথমেই বেশ পরিষ্কার করিয়া বুঝিতে হইবে, ধৰ্ম্ম ( religion) আর জাতি (race) আলাদা জিনিষ । আমাদের বর্তমান শাসনকৰ্ত্তাদের দৃষ্টান্ত লইলে ইহা ভাল করিয়া বুঝা যাইবে। আমরা স্থবিধার জন্য ইংলণ্ড, স্কটুলণ্ড ও আয়লণ্ডের অধিবাসীদিগকে এক ইংরেজ নামেই অভিহিত করিব। ইংরেজেরা তাহদের শাসনাধীন ভারতবর্ষের সমুদয় স্থান যুদ্ধে জিতিয়া অধিকার করেন নাই। কিন্তু ধরিয়া লওয়া যাউক যে তাহারা সৰ্ব্বত্রই জেতারূপে দখল পাইয়াছেন। বিজেত৷ প্রবাসী-আষাঢ়, ১৩২২ - [ ১৫শ ভাগ ১ম খণ্ড বলিয়া অহঙ্কার করিবার অধিকার এখন কাহাদের আছে? যাহাঁদের মাতৃকুল পিতৃকুল উভয়কূলই ইউরোপীয়, তাহারাষ্ট্র আপনাদিগকে বিজেতা বলিতে পারে। কিন্তু যাহাঁদের মাতৃবংশ বা পিতৃবংশ ভারতবর্ষীয়, তাহাদের নাম ইউরোপীয় এবং ধৰ্ম্ম ঋষ্টিয়ান হইলেও, তাহাদিগকে আমরা বিজেত৷ বলি না। আবার যাহাদের পিতৃবংশ ও মাতৃবংশ উভয়ই ভারতবর্ষীয়, তাহারা ঋষ্টিয়ান হইলেও, এবং তাহদের কাহারও কাহারও নাম ইউরোপীয় হইয়া গিয়া থাকিলেও তাহাদিগকেও আমরা বিজেতা বলি না এবং তাহার সাধারণত: জেতৃত্বের দাবীও করে না। বস্তুতঃ বুদ্ধিমান স্বদেশপ্রেমিক দেশীয় ঋষ্টিয়ানের রাজনৈতিক হিসাবে আপনাদিগকে বিজিত হিন্দুদের সমশ্রেণীস্থ বলিয়াই মনে করেন। এই কথাগুলি স্মরণ রাখিয়া এখন ভারতবাসী সমুদয় মুসলমানদের জেতৃত্বের দাবী পরীক্ষা করা যাক। প্রকৃত জেতা সেই-সব মুসলমানেরা যাহারা খাটি আরব, পাঠান, মোগল, তুর্কি বা ইরানী। মোটামুটি ইহঁদেরই নাম করিলাম ; অন্যান্য অল্পসংখ্যক বিদেশী মুসলমানও ভারতজয়ে অংশীদার ছিলেন। এখন কেবল সেইসব ভারতবাসী মুসলমান বিজেতা বলিয়া অহঙ্কার করিতে পারেন, যাহাদের পিতৃমাতৃকুল বরাবর খাটি আরব, পাঠান, মোগল, তুর্কি ও ইরানী রহিয়া আসিয়াছে। এৰূপ ভারতবাসী মুসলমানের সংখ্যা কত, তাহ কেহ স্থির করিতে পরিবেন কি না জানি না। যে-সকল মুসলমানের পূৰ্ব্বপুরুষেরা ভারতবর্ষীয় ও হিন্দু ছিলেন, নৃতত্ববিদ দিগের মতে তাহাদের সংখ্যাই খুব বেশী। স্বতরাং যেমন দেশীয় খৃষ্টিয়ানের বিজেতা ইংরেজদের সমধৰ্ম্ম । হইলেও জেতৃত্বের অহঙ্কার করিতে পারেন না, তাহারাও বাস্তবিক বিজিত ; তেমনি দেশীয় ( অর্থাৎ ভারতবর্ষীয় পূৰ্ব্বপুরুষদিগের বংশধর ) মুসলমানেরাও আরব, পাঠান মোগল, তুর্কি, ইরানীদের সমধৰ্ম্মী বলিয়৷ জেতৃত্বের দাবী ও অহঙ্কার করিতে পারেন না, হিন্দুদের পূর্বপুরুষদের মত তাহদের পূর্বপুরুষেরাও বিজিত হইয়াছিলেন। নৃতত্ব-বিজ্ঞান, ইতিহাস এবং সহজবুদ্ধি এই কথাই বলে। ভারতবাসী মুসলমানেরা ইহা মামুন বা না মামুন, ইহাই সত্য। ৩য় সংখ্যা ]


میل-بی.

মুসলমানেরা যে উদ্দেশ্বেই ভারত আক্রমণ করিয়া থাকুন, তারা পরোক্ষ ও সাক্ষাং ভাবে কোন কোন বিষয়ে ভারতবর্ষের উপকার হইয়াছিল। এমসিন বলিয়াছেন, যে আমার সঙ্গে কুস্তি লড়ে, সে আমাকে বলশালী করে। মুসলমান আক্রমণের ফলে হিন্দুরা কালক্রমে পূৰ্ব্বাপেক্ষ একতাস্বত্রে আবদ্ধ, দলবদ্ধ যুদ্ধবিদ্যায় অধিক গুর পারদর্শী, এবং মোটের উপর শক্তিশালী হইয়াছিলেন। ইহাদের ভারতবর্ষের উত্তর ও দক্ষিণ উভয় অংশ সম্বন্ধেই জ্ঞান আছে, তাহারা জানেন, উত্তর অপেক্ষা দক্ষিণে নিম্নশ্রেণীর সামাজিক অবস্থা অধিক হীন, এবং তথায় "অস্পৃশ্বতা”র প্রকোপ বেশী। ইহার একটি কারণ এই যে, উত্তরে মুসলমান-প্রাধান্য যেরূপ হইয়াছিল, দক্ষিণে সেরূপ হয় নাই। কবীর, দাদু, নানক, প্রভৃতি ধৰ্ম্মোপদেষ্টগণের - আবির্ভাবের অন্যতম কারণ মুসলমানের প্রাধান্য। এ-সকল ছাড়া মুসলমানদের দ্বারা স্থাপত্য প্রভৃতি নানা শিল্পবিদ্যার উন্নতি সাধিত হইয়াছিল, এবং সভ্যতার নানা নূতন অঙ্গ দেশে প্রবর্তিত হইয়াছিল। তাহার প্রমাণ বাংলা প্রভৃতি সংস্কৃতমূলক নানা ভাষার অন্তভূর্ত বহুসংখ্যক আরবী ফারসী ও তুর্কি কথায় নিহিত রছিয়াছে। বঙ্কিম বাবু বলিয়া গিয়াছেন, মুসলমানের হিন্দুদের চেয়ে পাকা রাজনীতিজ্ঞ ছিলেন। বঙ্কিম বাৰু মুসলমানভক্ত ছিলেন বলা যায় না। সুতরাং তাহার সাক্ষ্য গ্রন্থ হইতে পারে। হিন্দুদের কাছে মুসলমানেরা কি শিথিয়াছিলেন, তাহ আমরা বলিব না। মুসলমানের যদি হিন্দুদিগকে শ্রদ্ধা করিতে চান, ত, তাহারা ইহা অনুসন্ধান করিয়া বাহির করিবেন। আমরা কাহাকেও ছোট বা বড় বলিয়া প্রমাণ করিবার জন্ম, কাহাকেও মনঃকষ্ট দিবার জন্য, এই-সকল কথা লিখিতেছি না। আমাদের ধারণ এই যে ভারতবাসী সকল সম্প্রদায় পরস্পরকে শ্রদ্ধা করিতে না পারিলে কাহারও মঙ্গল নাই। যিনি অপরকে শ্রদ্ধা করিতে পারিবেন না, ওঁহারই সৰ্ব্বাপেক্ষ অধিক অধোগতি হইবে । হিন্দু ও মুসলমান ভারতবর্ষের প্রধান দুই সম্প্রদায়। ইহারা পরম্পরকে চিনিবার চেষ্টা করুন। কোন সম্প্রদায়ই অপর বিবিধ প্রসঙ্গ—মফঃস্বলের কাগজগুলির আলোচ্য বিষয় SSMSSSMSSSMSSSMSSSMSSSMSSSMSSSMSSSMSSSMSSSMSSSMSSSMSSSMSSSMSSSMSSS כסיסי সমুদয় সম্প্রদায়ের উন্নতিতে সম্পূর্ণ বাধা দিতে পারবেন না ; কিন্তু অপরকে বাদ দিয়াও কাহারও সম্পূর্ণ উন্নতি হইবে না। যখন সকলেই মহাপঙ্কে নিপতিত, তখন কাহার পূর্বপুরুষ কখন হাতী চড়িয়া বেড়াইতেন, তাহার আলোচনায় কোন লাভ নাই । ভারতবর্ষের বর্তমান অধিবাসীরা হিন্দু বৌদ্ধ জৈন খ্ৰীষ্টয়ান মুসলমান শিখ ব্রাহ্ম আৰ্যসমাজী প্রভৃতি নানা সম্প্রদায়ে বিভক্ত। ইহঁাদের প্রত্যেকের অতীত ইতিহাসে এবং বর্তমান জীবনে এমন অনেক জিনিষ আছে, যাহার জন্য প্রত্যেককেই শ্রদ্ধা করিতে পারা যায়। সাওতাল কোল ভীল প্রভূত অসভ্য বন্য ও পাৰ্ব্বত্য জাতিগণের চরিত্রেও অনেক সদগুণ আছে। তজ্জন্য তাহারাও সন্মান পাইবার যোগ্য। তাহাদের সমুদয় সদগুণের কথা না ভাবিয়া যদি কেবল তাহদের অদম্য মনুষ্যত্বের কথাই ভাবি, তাহা হইলেও তাহাদের নিকট মাথা নত হয়। বনে জঙ্গলে তাড়িত হইয়া হাজার হাজার বৎসর ধরিয়া বাঘভালুকের সঙ্গে যুদ্ধ করিয়া প্রতিকুল প্রাকৃতিক শক্তিকে অগ্রাহ্য করিয়া বা অমুকুল করিয়া লইয়া তাহারা বাচিয়া আছে। এই যে শক্ত শ্রমপটু মানুষগুলি ইহাদিগকে অবজ্ঞা করিবার আমাদের কি অধিকার আছে ? আমরা পরস্পরকে সম্মান করিয়া, পরস্পরের সহযোগী হইয়া উন্নতির পথে অগ্রসর হই। মফঃস্বলের কাগজগুলির আলোচ্য বিষয়। কি কলিকাতার কি মফঃস্বলের ক্ষুদ্রতম হইতে বৃহত্তম সকল কাগজেরই কাজ আছে, সকলের দ্বারাই দেশের কল্যাণ সাধিত হইতে পারে। কোনটিই নগণ্য নহে। সুতরাং আমাদের সকলের কৰ্ত্তব্য সম্বন্ধে আলোচনা অনাবশুক নহে। বৈশাখ মাসের প্রবাসীতে প্রকাশিত “দেশের কথ।” উপলক্ষ্য করিয়া এ বিষয়ে “বরিশালহিতৈষী" লিখিয়াছেন— মফঃস্বলের সাপ্তাহিক পত্রিকাসম্বন্ধে প্রকাশিত-মস্তগুলি বেশ কাৰ্যকরী। কিন্তু - - - মফঃস্বলের পত্রিকাগুলিকে বড়ই সীমাবদ্ধ আলোচনার মধ্যে নিবদ্ধ থাকিতে বলা হইয়াছে। মফঃস্বলেৰ সংবাদপত্র-সম্পাদক বিশ্ব-উদার রাজনীতি সম্বন্ধে শুচিন্তিত আলোচনা করিতে পাৰিলে দেশের পক্ষে কোনও অমঙ্গল ত নিশ্চয়ই হয় নাকতক মঙ্গল হইলেও হইতে পারে এবং সেরূপ জালোচনাযুক্ত-পত্রিক