পাতা:প্রবাসী (পঞ্চদশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).pdf/১৮৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

Vogo অবস্থায় ঘটিয়াছে, তাহাই বলিতেছি । অত্যাচারীরা বলিয়াছে, এখন ইংরেজের মুলুক আর নাই, জামেনরা রাজা হইয়াছে। নূতন “ভারতবর্ষ-রক্ষা" আইন অনুসারে অপরাধীদের বিচার হইতেছে। হইতেছে, কিন্তু অধিকাংশই প্রমাণ অভাবে থালাস পাইয়াছে। খালাস পাইয়া তাহারা আবার হিন্দুদিগকে শাসাইয় বেড়াইতেছে । এই সকল ব্যাপারে ভীত হইয়। পঞ্জাবের হিন্দুসভ তথাকার ছোটলাটকে তাহাদের আতঙ্কের কথা জ্ঞাপন করেন, এবং সুবিচার ও ভবিষ্যতে অত্যাচার হইতে রক্ষিত হইবার প্রার্থনা করেন। দারভাঙ্গার মহারাজাও হিন্দুদের পক্ষ হইতে ছোটলাট সাহেবকে অনেক কথা বলেন। ছোটলাটসাহেব হিন্দুসভার প্রতিনিধিদিগকে সিমলায় বলিয়াছেন যে ইতিমধ্যে ৪২০ জনের গড়ে ৫ বৎসর করিয়া কারাদণ্ড হইয়াছে । তিন জেলাতেই পুলিশের বল বৃদ্ধি করা হইয়াছে। আত্মরক্ষার জন্য সম্ৰান্ত লোকদিগকে অস্ত্র রাখিবার অনুমতি দেওয়া হইতেছে। বদমায়েসদের নিকট হইতে জামিন লওয়া হইতেছে । কয়েকজন লোক আইনভঙ্গে উত্তেজনা দিয়াছিল বলিয়া সন্দেহ হওয়ায় তাহাদিগকে "ভারতবর্যরক্ষা" আইন অনুসারে জেলা হইতে সরাইয়া ফেলা হইতেছে। যেসব রাজকৰ্ম্মচারী অত্যাচার লম্বন্ধে নিজের কৰ্ত্তব্য করিতে পারে নাই বলিয়৷ শুনা যায়, তাহাদের কার্য্যাকাৰ্য্য সম্বন্ধে তদন্ত হইতেছে। প্রধান প্রধান পলাতক আসামীদিগকে গ্রেপ্তার করিবার জন্য বেশী বেশী টাকা পুরস্কার ঘোষণা করা হইয়াছে। উপদ্রবের জায়গাগুলিতে নিগ্ৰহ-পুলিশ বসাইবার প্রস্তাব বিবেচিত হইতেছে। নিগ্ৰহ-পুলিশের খরচ নিরপরাধ লোকদের উপর না পড়িয়া অপরাধী শ্রেণীর লোকদের উপরই যাহাতে পড়ে তদ্রুপ ব্যবস্থা করা হইবে। পঞ্জাব-সীমান্তে বহু বৎসর হইতে স্বাধীন বা অৰ্দ্ধস্বাধীন পাঠানের ব্রিটিশশাসিত গ্রামে আসিয়া লুট খুন প্রভৃতি করে। তাহারা হিন্দুদের উপরই এইরূপ অত্যাচার করে। গবর্ণমেণ্ট অনেক সময় দস্থাদিগকে ধরিতে সমর্থ হন ও শাস্তি দেন । গবর্ণমেণ্ট যাহ করেন ও করিতে পাবেন, তাহ ভাল ; কিন্তু তা ছাড়া হিন্দু ও মুসলমান উভয়েরই এ বিষয়ে কৰ্ত্তব্য আছে। হিন্দুরা কি প্রকারে সবল ও আত্মরক্ষায় সমর্থ হইতে পারেন, তাহার উপায় অবলম্বন করা তাহাদের সর্বপ্রধান কৰ্ত্তব্য। এ বিষয়ে গবর্ণমেণ্টের তাহদের সাহায্য করা উচিত। মৌলবী আব্দুল করীম সাহেব সেদিন এক বক্তৃতায় বলিয়াছেন যে কোরান-শরীফে স্ত্রীলোকের সতীত্বনাশ প্রভৃতি পাপের ভীষণ শাস্তির ব্যবস্থা আছে শিক্ষিত মুসলমানগণ প্রধানতঃ খৃষ্টিয়ান সমালোচকদিগের কথার উত্তরে কোরান-শরীফ ও মুসলমান ইতিহাস হইতে প্রবাসী—আষাঢ়, ১৩২২ শত শত লোক ধূত [ ১৫শ ভাগ, ১ম খণ্ড দেখাইয় থাকেন যে মুসলমানদের নারীর সম্বন্ধে ধারণ হীন নহে। ইহা আমরা অবিশ্বাস করি না । কিন্তু ইহাও দেখিতেছি যে দুশ্চরিত্র মুসলমানদের দ্বারা নারীর ধৰ্ম্মনাশের সংবাদ কাগজে প্রায়ই বাহির হয়। তাহাদের অনেকে দণ্ডিত হয়। শিক্ষিত ভদ্র সচ্চরিত্র মুসলমানের বদমায়েসদের কাজের অনুমোদন করেন, এরূপ মনে করিবার কোন কারণ নাই। কিন্তু সাধারণ মুসলমানদের সামাজিক মত এ-সব বিষয়ে কিরূপ, তাহাই বিবেচ্য। যদি তাহ কোরানের অনুরূপ বা আশাতুরূপ না হয়, তাহা হইলে মুসলমান সমাজের নেতারা তাহাদের শাস্ত্রাতুযায়ী সামাজিক মত গঠন ও সামাজিক শাসন প্ৰবৰ্ত্তিত করিতে কি প্রকার চেষ্টা করিতে দেন, আমরা তাহা জানিতে পারিলে সুখী হইব । - পূর্ববঙ্গে স্ত্রীলোকের উপর অত্যাচার। সংবাদপত্র পড়িয়া এবং আদালতে দণ্ডপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের নাম হইতে তামাদের এইরূপ ধারণ জন্মিয়াছে যে পঞ্জাব পূৰ্ব্ববঙ্গ প্রভৃতি অঞ্চলে যেসব দুবৃত্ত লোক স্ত্রীলোকদের উপর অত্যাচার করে, তাহাদের মধ্যে মুসলমানের সংখ্যা এত বেশী যে তাহারা প্রায় সকলেই মুসলমান হঠাৎ এইরূপ মনে হয় । অশিক্ষিত দুশ্চরিত্র নিম্নশ্রেণীর লোক সব সম্প্রদায়েই আছে। কিন্তু নিয়শ্রেণীর মুসলমানদের মধ্যেই এই পাপের এত আতিশয্য কেন, তাহা ভদ্র সচ্চরিত্র মুসলমানদিগের চিন্তনীয়। সামাজিক মত গঠন তাহারাই করিতে পারেন । নারীদের রক্ষার জন্য সকলেরই যথোচিত বাবস্থা করা কৰ্ত্তব্য । যাহার। নারীকে রক্ষা করিতে পারিবেন ন, তাহাদের পৃথিবী হইতে লুপ্ত হওয়াই ভালু। শুনিতে পাই, অনেক যুবক প্রাণের মায়া ত্যাগ করিয়া গৰ্হিত দস্থ্যত করে । নারীর সতীত্ব রক্ষা-রূপ যে অতি মহৎ ও একান্ত প্রয়োজনীয় সাধুকাৰ্য্য, তাহা করিবার জন্য মাতুম মিলিবে না কি ? বঙ্গনারীগণও আত্মরক্ষার জন্য কোমর বাধুন। আত্মরক্ষার জন্য দা বঁটি যে-কোন অস্ত্র থাকে তাহা চালাইতে ধৰ্ম্মও নিষেধ করেন না, আইনও নিষেধ করেন না। নারী আপনাকে অবল মনে করিবেন না । তিনি শক্তি । গাধা ও ফুলবাগান । গর্দভ পুষ্পোদ্যানে গিয়া বলিল, “মানুষ বড় মূখ, পয়সা খরচ করিয়া ফুলগাছ রোপণ করে । আমি বাগানের মালিক হইলে এখানে কেবল ঘাস ও খড় রাথিতাম।” গাধার মনে ছিল না যে মানুষ ঘাস ও খড়ের জন্যও রাথিয়াছে। | ৩য় সংখ্য1] ইতিহাসের ক্রম আমি বিজ্ঞান-ব্যবসায়ী ; কিন্তু ইতিহাসের ক্রম খুজিতে যাইতেছি। ইহাতে আশ্চৰ্য্য হইবার কথা। কিন্তু ইতিহাসবেত্ত নই বলিয়াই ইতিহাস জানিতে চাই। কেমন ইতিহাস চাই, ইহার কি ক্রম হইলে জিজ্ঞাসার নিবৃত্তি হইতে পারে, তাহ বলিতেছি । ইতিহাস শব্দের ব্যাপক অর্থ পরিলে বিজ্ঞানেও, আধুনিক ভৌতিক বিজ্ঞানেও, ইতিহাস আছে, এবং ইতিহাসে বিজ্ঞান না থাকিলেও বৈজ্ঞানিক মার্গ আছে। ইতিহাস শব্দের মূলে ইতিহ অর্থাং পারস্পৰ্য্য-উপদেশ। ইতিহ-ইতি এই, হ নিশ্চয়ে। এই বটে,—এই অর্থে ইতিহ। ইতিহ+ আস—এইরূপই ছিল, ইহাই হইয়াছিল । এই ছিল, এই হইয়াছিল ; অতএব ইতিহাসের নামান্তর পুরাবৃত্ত, পূৰ্ব্বকালের বৃত্তাস্ত। মহাভারত ইতিহাস, অর্থাৎ মহাভারতে যাহা বর্ণিত আছে, তাহা ছিল হইয়ছিল। মহাভারত পুরাকালের এক বৃত্তান্ত । পুরাণও পুরাকালের বৃত্তান্ত । পুরাণ অর্থাং নূতন নহে। লোকে পুরাকালের যে বৃত্তাস্ত শুনিয়া আসিতেছে তাহা পুরাণ। বহু পূৰ্ব্বকালের কথা লোক-পরম্পরায় স্বাহ শুনিয়া আসিতেছি তাহা পুরাণ। অতি পুরাকালে পৃথিবী জলময় ছিল, ইহা লোক-পরম্পরায় শুনিয়া আসিতেছি। সে কথা কেহ লিখিয়াছেন, পুরাণ রচন। করিয়াছেন। ব্যাসদেব অষ্টাদশ পুরাণ প্রণয়ন করিয়াছিলেন। ইহার অর্থ, তিনি যাহা পড়িয়াছিলেন, শুনিয়াছিলেন, তাহা অষ্টাদশ গ্রন্থে নিজের ভাষায় লিথিয়া গিয়াছেন। যেসময়ে তিনি ছিলেন, লিখিয়াছিলেন, সে-সময়ে অপর পুরাণকথা ছিলনা, এমন নহে। তিনি যাহা শুনিয়াছিলেন তাহা লিখিয়াছেন। যাহা শুনিয়াছিলেন সবই লিথিয়াছেন, কিংবা অবিকল লিখিয়াছেন, এমনও না হইতে পারে। ধৃত কথা শুনিয়াছিলেন, হয়ত সব লেখেন নাই, লেখার প্রয়োজন মনে করেন নাই । তিনি শোনেন নাই, অন্তে শুনিয়াছিলেন, এমন কথাও ছিল। অন্যে সে-সব লইয়া অন্য পুরাণ লিখিয়াছেন। ○ ইতিহাসের ক্রম H8) ব্যাসের তিরোভাবের পরে অপর পুরাতল কথা শোনা গিয়াছে। অন্যে সে-কথা লইয়া পুরাণ লিথিয়াছেন। এগুলার নাম উপ-পুরাণ, অর্থাৎ অধিকপুরাণ, ব্যাসের পুরাণের অতিরিক্ত। ব্যাস যত মান্য ছিলেন, তিনি যত অমুসন্ধান করিয়ালিথিয়াছিলেন, অন্য পুরাণ-লেখক তত মান্ত ছিলেন না, তত করেন নাই। এইহেতুও ইহঁদের পুরাণ উপপুরাণ। - ইতিহাসেও শোনা কথা। ইহাতে দেখা ঘটনার কথা অল্প থাকে কিংবা আদৌ থাকেন। অতীত ঘটনা শোন ছাড়া দেখার সম্ভাবনা নাই। বিশেষ এই,-এইরূপ ছিল, এইরূপ হইয়াছিল,—বলিতে পার চাই। নতুবা ইতিহাস হইবে না, পুরাণ হইবে। আমি শুনিয়াছি, তুমি শুনিয়াছ, তিনি শুনিয়াছেন,—সমাজ এইপ্রকার ছিল, লোকেরা এই ধৰ্ম্ম আচরণ করিত, রাজনীতি এই ছিল, যুদ্ধকলহ এইরূপ হইয়াছিল, ইত্যাদি। এই প্রত্যয়হেতু ইহা ইতিহাস • আমাদের জ্ঞানের শোনা ছাড়া দেখা বিষয় আছে। আমরা অনেক ঘটনা স্বয়ং দেখিতে পারি, দেখিয়া থাকি । সেটা আদ্য-জ্ঞান, স্বয়ং-জ্ঞান। সেটা শোনা নহে, অস্তের উপদেশ-লব্ধ নহে, স্বয়ং-লব্ধ। ইহার নাম উপজা। অতএব ইতিহ ও উপজ্ঞা, এই দুইভাগে আমাদের জ্ঞান বিভক্ত করিতে পারি, এবং মানবজাতিসম্বন্ধে এই দুই জ্ঞানকে ইতিহাস বলি। ইতিহাসের প্রয়োজন কি ? এক প্রয়োজন, আমাদের যে স্বাভাবিক ঔংস্থক্য আছে, তাহার নিবৃত্তি । এটা কি সেটা কি, এজাতি কে সেজাতি কে, ইত্যাদি প্রশ্নের উত্তর চাই। অপর প্রয়োজন, অতীত বুঝিয়া বৰ্ত্তমান ও ভবিষ্যৎ বুঝিবার প্রয়াস। বিজ্ঞানেরও জন্ম মানবের ঔংস্থক্যের নিবৃত্তিতে এবং উদেশ্ব ভবিষ্যং জানিতে। ইতিহাস দ্বারা আমাদের বর্তমান ও ভবিষ্যৎ নীতি বুঝিতে পারিলে ইতিহাস সার্থক। অমুক অবস্থায় এই জাতি এই নীতি আচরণ করিত, করিয়া এই ফল পাইয়াছিল; সে অবস্থা আমাদের হইলে আমাদেরও নীতি তাবৎ হইবে, ফলও তদ্ৰবং হইবে, এই ভবিষ্যং হুচনা করিতে না পারিলে ইতিহাস দ্বারা কেবল ঔৎসুকোর নিবৃত্তি হয়।