পাতা:প্রবাসী (পঞ্চদশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).pdf/২০০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

بنانيني রাখিয়া নিজে আহারে বসিল। থাইতে খাইতে রহিম বলিল "পিয়ার সাহেব তোমায় খুজতে এসেছিল।" আন্দু বলিল “কেন ?" “কেন আর, টাকা চাই। আমি ফেরৎ দিয়েছি, বল্লুম আন্দুরই এখন টাকার টানাটানি গেল মাসে যে টাকা ধার নিয়েছে তাই শোধ করতে পারছে না, আবার টাকা । পিয়ারী সাহেবকে আর টাকা দিও না।” আন্দু কথা কহিল না। অন্যমনে পায়চারি করিতে লাগিল। সহসা মুখ তুলিয়া বলিল “চাচা, পিয়ার সাহেবের কোন কাজ কৰ্ম্মই জোটে নি ?" রহিম বলিল “কই আর জুটল ? খালি দেনার মাথায় সংসার আর কতই চলে? অনেকগুলি পুষ্যি, লোকটা যেন ন্যাঞ্জারী হয়ে পড়েছে।" "হু"—বলিয়া আন্দু নীরবে চিন্তান্বিত মুখে গামছাখানি গলায় ফেলিয়া পুষ্করিণীর উদ্দেশে চলিল। দ্বারবানের ঘর পার হইয়া গেটের বাহিরে যেমন আসিয়াছে, অমনি পশ্চাৎ হইতে দুইট লৌহকঠিন হস্ত অকস্মাৎ তাহার হাত দুইটা পিছন দিকে টানিয়া সবলে টিপিয়া ধরিল । হাসিয়া পিছনদিকে চাহিয়৷ আন্দু বিস্মিত হইল, একি ! এ তো পরিচিত লোক নয়! এ যে জুল্পিবহুল প্রকাওপাগড়ীওলা, দীর্ঘাকৃতি বিশাল মূৰ্ত্তি! আন্দু বলিগ “আপনি কাকে খুঁজছেন, আমি অন্য লোক।” কিছুমাত্র বিচলিত না হইয়া লোকটা প্রবল গম্ভীর কণ্ঠে বলিল “ন, তোমাকেই খুঁজছি, পিছমোড়া করে বঁধিব ।” দৃপ্ত স্বরে আন্দু বলিল “কেন ?"—সে হাতটা ছাড়াইবার জন্য ঈষং টানিল। লোকট। তৎক্ষণাং আরো জোরে হাতটা টিপিয়া ধরিয়া বিদ্রুপের স্বরে বলিল “গায়ে জোর কত ? ছাড়াও দেখি !" অপরিচিত লোকটার ধৃষ্টত আন্দুর আর সহ হইল না। সে আড় হইয়া ভূমি পর্যন্ত হইয়া এক প্রচণ্ড হ্যাঁচক মারিল চৰ্ব্বি-থলথলে বিপুল-চেহারা লোকট। সে নিরেট আকর্ষণ প্রতিরোধ কবিতে না পারিয়৷ ঝুকিয়া পড়িল, মল্লবীর আলু চক্ষের নিমিযে হাটুর ও তায় ব৷ शङ छ्प्लईय। 6लाक5ाब ८माछै। घाफ़ ब्रिग्रा शैउिभउ প্রবাসী—আষাঢ়, ১৩২২ ു.സഹ ধাক্কায় ভূমে পাড়িল, লোকট। হাফাইয় তাহার ডান হাত খান ছাড়িয়া দিল, আন্দু ঘুসি পাকাইল শূন্যে উঠাইল,অমনি হা হা করিয়া কয়েকজন লোক ছুটিয়া আসিল, বিস্মিত আন্দুর উদ্যত বজমুষ্টি শিথিল হইয়া গেল! দেখিল তাহার আখড়ার ওস্তাদের সহিত দুইজন খেলওয়ার বন্ধু!আন্দু প্রতিদ্বন্দ্বীকে ছাড়িয়া সোজা হইয়া দাড়াইল। ওস্তাদ হাসিতে হাসিতে বলিল “কেমন সিংহজী, কেমন পালোয়ান দেখলেন ? সখ মিটল তো ?” আন্দু অবাক হইয়া একবার ওস্তাদের মুখপানে একবার সেই লোকটার মুখপানে তাকাইতে লাগিল। সে ওস্তাদকে অভিবাদন করিতে ভুলিয়া গেল। ভূপতিত লোকটা স্থল হইতে উঠিয়া জামাটামাগুলো ঝাড়িয়া ফুকিয়া লইল। আন্দুর কাধে হাত রাগিয়া বলিল "সাবাস জোয়ান, আমা এক লহমায় ফেলেছ, বাহাদুর বটে !" অপ্রতিভ আন্দু কিছুমাত্র উৎসাহিত না হইয়া মাথায় একবার হাত ঠেকাইল মাত্র। ঘন ঘন ব্যগ্র দৃষ্টিতে ওস্তাদের পানে চাহিতে ওস্তাদ বলিলেন “একে চিনতে পারলে ন ? এরই আসবার কথা ছিল, ইনিই আমাদের শিখ ভাই হয়কিষণ সিং বাহাদুর ” আন্দু সসন্ত্রমে ভূমিস্পর্শ করিয়া অভিবাদন করিয়া পুন: পুন: ক্ষমা চাহিল। হরকিষণ সিং গভর্ণমেণ্টের বেতনভোগী একজন সৈন্য ওস্তাদের সহিত তাহার বন্ধুত্ব বলিয়, ছুটিছাট পাইলে মাঝে মাঝে ভাগলপুরে বেড়াইতে আসে, ও এখানকার বাছা বাছা পালওয়ানদের সহিত লড়াই দিয়া আমোদ করিয়া যায়। আন্দু ইহাকে চিনিত না, শুধু নাম শুনিয়াছিল মাত্র। আন্দু ক্ষমা, চাহিতে হয়কিষণ হাসিল। ক্ষৰ্বিদীপ্ত মূখে ওস্তাদজী আলুৱ বিস্তৃত পরিচয় পাড়িয়া বসিল, আর ওস্তাদের সঙ্গী দুটি বক্ষ-সন্নদ্ধ করে হরকিষণের প্রতি গোপনে ব্যঙ্গরঞ্জিত কটাক্ষপাত করিয়া হাসিতে লাগিল। তাহদের রঙ্গ দেখিয়া আন্দু জলিয়া গেল, একে ত নিজের অসহিষ্ণুতার দোষে সামান্য রহস্যের উত্তরে এত বড় মৰ্ম্মান্তিক জবাব পাঠাই৷ সে মহালজ্জায় পড়িয়াছিল, তাহাতে হয়কিষণের আচরণে ক্ষুন্নতার চিহ্নমাত্র না দেখিয়া সে অত্যন্ত বিষ4 হইয়া গেল। হয়কিষণ ওস্তাদের সমস্ত কথা শুনিয়া আলুকে [ ১৫শ ভাগ ..., | ৩য় সংখ্যা } - ാസ হাদিতে হাসিতে বলিল "নয়া দোস্তসাহেব, আমি তোমায় নেওতা কৰ্ত্তে এসেছি, কাল বল-খেলার মাঠে আমাদের দুঘণ্ট। খেলা হবে, ম্যাজিষ্টার সাহেবের কাছে পাশ নিতে লোক গেছে, অনেক সাহেবলোক পেলা দেখতে আসবে, তোমায়ও খেলতে হবে।" আন্দু প্রমাদ গণিল, বুঝিল এ সব ওস্তাদের চাল,— আৰু প্রকাশ্বাস্থলে মল্লযুদ্ধ করিয়া নাম জাকাইতে ভয় থায় বলিয়া, ওস্তাদ কত কৌশলে তাহাকে কতবার খেলাইতে লইয়া গিয়া বিফলমনোরথ হইয়াছেন । তাই এইবার বুঝি এই বিদেশীকে পাকুড়াইয়াছেন ? আব্দু ওস্তাদের দিকে চাহিল, ওস্তাদ তৎক্ষণাং প্রতিবাদ করিয়া বলিলেন “আমি সে ওঁকে বলেছি । উনি বলেন, না খেললে আমি ছাড়ব না। তাইত তোমায় আমন করে আটকেছিলেন। তুমি নেহাৎ হারালে. তাই!” আব্দুর হাত দুইখানা নিজের প্রকাও হাতে মুঠাইয়া রিয়৷ প্রতিপূর্ণ স্বরে হরকিষণ বলিল “বল, তুমি আমার কথা রাখবে ?” আন্দু হাসিয়া বলিল “কি মুস্কিল!” সে একটু আবেগভরে আন্দুর হাতটা নাড়া দিয়া বলিল, "না; তোমার সঙ্গে ভাল করে আলাপ করতে হবে, তোমায় আমি ভালরকম জানতে চাই ।” আন্দুসসন্ত্রমে শুল্কহাসে বলিল “আমার সৌভাগ্য”— কিন্তু মনে মনে সেই সৌভাগ্যের কবল হইতে মুক্তিলাভের জন্য বিলক্ষণ শঙ্কিত হইয়া উঠিল, নাম জাকাইতে যাহার ব্যতিব্যস্ত তাহাদের সংসর্গ আন্দুর কাছে অত্যন্ত অপ্রীতিকর ! ওস্তাদের অনুচর শীতলচাদ আব্দুকে জালাইবার অভি প্রায়ে নষ্টামি করিয়া বলিল "জানেন সিংহজী, এই পালওয়ানের ভারি সথ আপনাদের লড়ায়ে কাজ নেমু !" উৎসাহিত হরকিষণ বলিল “সত্যি নাকি ?” হালিহাসি মুখে ঘাড় নাড়িয়া ওস্তাদজী বলিলেন “হ্যা কথাটা মিছে নয়, কিন্তু এখন সেসব খেয়াল চুকে গেছে, না আন্দু ?" আসল কথা মেহবংসল ওস্তাদ, আব্দুর এসব খেয়াল মোটে পছন্দ করিতেন না, যুদ্ধোংসাহ ওস্তাদের স্বাঞ্ছনীয় নহে, তিনি চান আন্দু আন্দুই থাকিবে। সেখ জাদু = ○や。 শীতলচাদের উপর কৃত্রিম কোপ দেখাইয়া আন্দু বলিল "শোনেন কেন? এটা মহা পাজি ।” চোথ টিপিয়া শীতল বলিল “শোনেন কেন?—সেই জন্যে তুমি আজও বিয়ে করলে না, লড়ায়ে যাবার মতলব তোমার নেই?" মহাদেব মিশ্র আর একটু রসান লাগাইয়া বলিল “তুমিত এতদিন কানপুর চলে যেতে, তোমার সাহেব শুধু তোমায় আটকে রেখেছেন বইত নয় !" আন্দু মহা বিরক্ত হইয়া বলিল "আঃ থাম না।” হরকিষণ একদৃষ্টে আন্দুর মুখপানে চাহিয়া ছিল, এত ক্ষণে সবিস্ময়ে বলিল তুমি সত্যি লড়ায়ে যেতে চাও?’ অকস্মাং সঙ্কোচের পর্দা সরাইয়া পূর্ণ আশায় আন্দুর চক্ষুদুটি উজ্জল হইয়া উঠিল, আন্দু আবেগের সহিত কি বলিতে উদ্যত হইল, কিন্তু আসন্ন বিপদ বুঝিয়া ওস্তাদ তাড়াতাড়ি বাধা দিয়া বলিল “আরে না না ভাই, ও ছেলেমাহুষের কথায় কান দিও না, আমাদের আন্দু আমাদেরই থাক, বাপ পিতামোর নাম খুইয়ে, কি ছাই হানাহানির ব্যবসা শিখতে যাবে ? আন্দু লড়াই করতে গেলে আমাদের রোগে শোকে সেবাম্বশ্ৰুষা করবে কে ? না কাজ নেই, অনেকগুলো মনের কথা, একসঙ্গে জড়াজড়ি, করিয়া, আন্দুর ঠোটের কাছে আসিয়া পড়িয়াছিল, কিন্তু পিতৃস্থানীয় ওস্তাদের ব্যগ্র আপত্তির উপরে সেগুলা ব্যক্ত করা অসঙ্গত বিবেচনায় সব কটাকে দমন করিয়া আন্দু মৃদ্ধস্বরে বলিল "লড়ায়ের কাজে কি বাপদাদার নাম খোয়া যায় ? মরণ তো আছেই, আমি নামের জন্যেও লড়ায়ে যেতে চাই ন, টাকার জন্তও যেতে চাই না, আমি শুধু যেতে চাই-" আন্দু থামিল। হরকিষণ উংস্থক হইয়া বলিল “তুমি শুধু কি জন্তে যেতে চাও?" ক্ষণেক নীরব থাকিয়া, আন্দু একটু জোরের সহিত বলিল “আমি ?--আমি লড়ায়ে যেতে চাই শুধু লড়াইয়ের জন্যে !” উৎসাহভরে আন্দুর পিঠ ঠুকিয়া মাথা নাড়িতে নাড়িতে হয়কিষণ বলিল "ঠিক ঠিক, লড়ায়ে ঢুকতে হয় ত শুধু --