পাতা:প্রবাসী (পঞ্চদশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).pdf/২৬৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

8ミや ছিল। কিছুদিন হইতে দেশে যাইবার জন্য একটু বিশেষ ভাবে আমার ডাক পড়িয়াছিল, এবং সে ডাকের মধ্যে যেবিশেষ উদ্বেগুটি নিহিত ছিল তাহার রহস্যোম্ভেদ করিবার পক্ষে যতটুকু বুদ্ধি এবং অহমান-শক্তির প্রয়োজন তাহার অভাব আমার ঘটে নাই। আমি বুঝিয়াছিলাম বিবাহের জন্ম আমার ডাক পড়িয়াছে। যাহারা অামাকে ডাকিয়াছিলেন তাহাদের প্রতি অথবা তাহাদের ডাকার উদ্বেশ্বের প্রতি আমার বিন্দুমাত্র অশ্রদ্ধা ছিল না। কারণ মেডিকাল কলেজের ছয় বংসরের অনবসরের মধ্যে বিবাহ করিব না, এইরূপ একটা লোমহর্ষণকারী কাপ্য আমার চিত্তের মধ্যে প্রবেশ করিবার স্থবিধ খুজিয়া পায় নাই। শৈশব হইতে নিতান্ত সাদাসিধাভাবেই মানুষ হইতেছিলাম ; লেখাপড়া শেষ করিয়া বিবাহ করিব এবং তাহার পর যথানিয়মে পিতা হইতে পিতামহ হইয়া মানবলীলা সম্বরণ করিব,— এইরূপ একটা নিতান্ত সহজ এবং সাধারণ ধরণের জীবনকল্পনা আপনা-আপনিই আমার মনের মধ্যে গড়িয়া উঠিয়াছিল। তাই প্রথম যেদিন, মেডিকাল কলেজের ছাড়-পত্র পাইলাম, বিলম্ব না করিয়া তাহার পরদিনই তল্পিতল্প লইয়া দেশে রওয়ান হইলাম। দেশে আসিয়া দেখিলাম আমার অনুমান ভূল হয় নাই। বিবাহই বটে। তবে শুধু বিবাহ বলিলে সবটুকু বলা হয় না। তাহার সহিত আরও একটি বৃহত্তর এবং মহত্তর উদেশ্ব সফল হইবার অপেক্ষায় ছিল। আমার পিতা দরিদ্রই ছিলেন, এবং আমার ডাক্তারী পড়ার অমিত ব্যয়ভার বহন করিয়া সে দারিদ্র্য হ্রাস পায় নাই, তাহাও সত্য । সেই বহুকষ্ট-অর্জিত ডাক্তারী-শিক্ষণকে প্রথম হইতেই সার্থক করিবার উদ্দেশ্যে পিতা আমার দ্বারা আমাদের সংসারকে দারিদ্র্য-রোগ হইতে নিরামযু করিয়া লইবার জন্য একটি ব্যবস্থা করিয়াছিলেন। একটি মানুষের পরিবর্তে একটি পরিবারের চিকিৎসার ভার আমার উপর সর্ব প্রথম পড়িয়াझिज्ञ । আমাদের গ্রামের যিনি জমিদার তাহার অবিবাহিত। কিন্তু বিবাহযোগ্য একটি কন্যা ছিল । সেই কন্যাটি তাহার একমাত্র কন্যা, যদিও একমাত্র সন্তান নহে । শুনিলাম সেই কন্যাটির সহিত আমার বিবাহ প্রবাসী—শ্ৰাবণ, ১৩২২ SAMJMJJJMMMMJJJJJJJMMMM MMM [ ১৫শ ভাগ, ১ম খণ্ড স্থির হইয়াছে, এবং রূপে ও গুণে কন্যাটি লক্ষ্মীশ্বৰূপ৷ রূপে লক্ষ্মী সেকথা আমার শুনিয়াই বিশ্বাস করিতে ইচ্ছা হইল, কিন্তু গুণে যে লক্ষ্মী সে বিষয়ে সংশয়ের কোন কারণ ছিল না ; কেননা কথা হইয়াছিল দশ হাজার টাকা নগদ এবং পাচ হাজার টাকার অলঙ্কার লইয়া আমাদের গৃহলক্ষ্মী আমাদের গৃহে শুভাগমন করি, বেন, এবং তাহার পিতা, অর্থাৎ আমার ভাবী শ্বশুর, কলিকাতায় থাকিয়া ডাক্তারী ব্যবসায় চালাইবার মত আমার সমস্ত ব্যবস্থা করিম দিবেন। এমন কথাও নাকি তিনি বলিয়াছিলেন যে যতদিন আমি স্বাবলম্বী না হইব ততদিন তিনি আমাকে মাসহার দিবেন। আমার প্রতি এই বিপুল কৃপাবৰ্ষণ করিবার কারণ এই যে তাহ হইলে তাহার কথাটি | পরের হাতে পড়িয়া ও পর হইবে না, এবং যাহার হাতে পড়িবে তাহার মত দ্বিতীয় পাত্র আমাদের অঞ্চলে বাহির করা যে অসম্ভব ছিল তাহা শক্রপক্ষেরও অস্বীকার করি বার উপায় ছিল না। তখন অকাল চলিতেছিল, তাই দিন পনের পরে কন্যাপক্ষ আমাকে আশীৰ্ব্বাদ করিয়া যাইবেল কথা ছিল, এবং তাহার দশ পনের দিন পরেই বিবাহ। বাঙ্গলাদেশে পুরুষমানুষের বিবাহ কঠিন ব্যাপার নহে, বিশেষত: সেই সকল পাত্রের পক্ষে যাহাদের কপালে বিশ্ব-বিদ্যালয়ের শেষ ছাপ পড়িয়া গিয়াছে। সুতরাং বিবাহের সম্বন্ধ স্থির হওয়ার মধ্যে আনন্দের কথা থাকিলেও বিস্ময়ের কথা কিছু ছিল না। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ের সৰ্ব্বো ন্তম পাত্রের জন্যও প্রেমচাদ রায়চাদ যতটা করিয়া যাইতে পারেন নাই, আমার জন্য পিতা তাহার ব্যবস্থা করিয়া রাথিয়াছিলেন । তাই, যে কিশোরীটির আমাদের অস্তু: | পুরে এবং আমার হৃদয়পুরে আসিয়া প্রবেশ করিবার কথা, তাহার প্রবেশের জন্য আমরা ততটা ব্যগ্ৰ হই নাই, যতটা হইয়াছিলাম সেই-সকল সামগ্ৰীগুলির জন্য যাহাদের লোহার সিন্দুকে আসিয়া প্রবেশ করিবার কথা ছিল। অর্থাং হৃদয়ের কবাট যথাকলে মুক্ত হইবার অপেক্ষায় ছিল, কিন্তু সিন্দুকের কবাট আমরা পূৰ্ব্বাহ্নেই খুলিয়া রাখিয়াছিলাম। নগদ দশহাজার টাকার মধ্যে পছন্দর কোন কথা ছিল ন। আমাদের সংসারের ইতিহাসে এমন কোনও বড়লোক ! জন্মগ্রহণ করেন নাই যিনি তাহা পছন্দ না করিতেন। | ৪র্থ সংখ্যা ] - -്.ബ് - ঠাই টাকা এবং অলঙ্কারের সহিত রক্তমাংসের যে পদার্থটির আসিবার কথা ছিল, সংসারের লাভের থাতে তাহাকে স্থান দেওয়া হয় নাই; সকলেই সোনা এবং রূপার স্বপ্ন দেখিত। এমন কি আমারও কানে মলের রুচুকুন্থ অপেক্ষা bাকার ঝনঝনানিটাই বেশী বাজিত এবং নিরালা গৃহক্ষেণে নোলকপর একটি ঢলঢলে মুখ অপেক্ষা জমিদার শ্বশুর মহাশয়ের পুষ্ট গুহ্মের চিত্র বেশী মনে পড়িত। আমাদের সংসারে সকলের মনের অবস্থা ग%न ठिंक এইৰূপ, তখন ঘটনাস্রোত ধীরে ধীরে অন্যদিকে ফিরিবার উপক্ৰম করিল। স্থবিধার পূর্ণিমায় আমাদের শীর্ণ সংসারে ংে রূপার বান ডাকিবার কথা ছিল, দিনের পর দিন পলি পড়ির তাহার পথ বন্ধ হইয়া গেল। কেমন করিয়া, હાફবার সেই কথা বলিব। ডাক-টিকিট কিনিবার জন্য সেদিন গ্রামের ডাকঘরে গিাছিলাম। দেখিলাম ঘরের মধ্যেস্থলে বসিয়া গৌরবর্ণ গ্রেী একটি ভদ্রলোক সম্মুখে টাকা পয়স माछाष्ट्रय निदिष्ट মনে হিসাব মিলাইতেছেন। বুঝলাম তিনিই পোষ্টমাষ্টার এবং নূতন আসিয়াছেন। পাঁচটা বাজিতে তখন বেশী বিলম্ব ছিল না। আমাকে দেখিয়া তিনি বলিলেন, “कि চাই আপনার ?” আমি কহিলাম, "চারধান৷ দুপয়সার টিকিট।” গণনার মধ্যে ফরমাইস করিয়া ভদ্রলোককে একটু বিরক্ত করিয়াছি তাহ বুঝিতে পারিলাম। তিনি একবার উhবার চেষ্টা করিলেন, একবার হিসাব এবং টাকাপয়সার দিকে চাহিয়া একটু চিন্তা করিলেন, তাহার পর ঘরের এক দিকে দৃষ্টিপাত করিয়া কহিলেন, "মহম, এই চারখানা টিকট বাবুকে দাও ত " একটি তের চৌদ্ধ বছরের মেয়ে পোষ্টমাষ্টারের নিকট হইতে চারখানি টিকিট লইয়া আমার সম্মুখে উপস্থিত হইল। সহসা একটি প্রাপ্তবয়স্ক বালিকার সম্মুখীন হইয়া পড়ায় স্বামি হয়ত একটু খতমত খাইয়া গিয়াছিলাম, কিন্তু তাহার লজ্জা বা সঙ্কোচের কোন লক্ষণ দেখিতে পাইলাম না। সে আমুর হাতে টিকিট কয়েকখানি দিয়া তাহার বড় বড় চক্ষু দুটির গভীর দৃষ্টি আমার মুখের উপর স্থাপিত করিয়া মূল্যের অপেক্ষায় চাহিয়া রহিল ; এবং আমার নিকট হইতে মূল্য অর্থমনৰ্থম ヘヘヘヘヘヘベヘヘヘヘヘヘヘヘヘヘヘ^^^ ാ 85Գ পাইবামাত্র মুহূর্ভের মধ্যে পিতার টেবিলে তাহা স্থাপন করিয়া ঘরের কোণে মিশাইয়া গেল। দুইখানা পোষ্টকার্ড কিনিবারও প্রয়োজন ছিল, কিন্তু পুনরায় চাহিতে পারিলাম না, একটু সঙ্কোচ বোধ হইতে লাগিল। টিকিট ब्रहेग्न বাড়ী ফিরিলাম। দুইদিন পরে পুনরায় টিকিট কিনিবার জন্য ডাকঘরে উপস্থিত হইলাম। সেদিন পোষ্টমাষ্টার ব্যাপৃত ছিলেন না, তিনি স্বয়ং উঠিয়৷ টকিট দিলেন। খামে টিকিট মারিয়া বাক্সর ভিতর ফেলিয়৷ দিয়া গৃহে ফিরিব এমন সময় বৃষ্টি আসিয়া পড়িল। সেই স্বল্প-পরিসর ডাকঘরের বারাওয়ে অপেক্ষা করিব, ন৷ গা-বস্ত্র মাথায় দিয়া গৃহে ফিরিব, ইতস্তত: করিতেছি, এমন সময় পাশের ঘবের দ্বার খুলিয়া পোষ্টমাষ্টার আহবান করিলেন । -so "আশ্বন, ভিতরে বসবেন আসুন। বৃষ্টি থামলে যাবেন ।" on আমি কহিলাম, "আপনি ব্যস্ত আছেন, আপনার সময় নষ্ট করব না।" - পোষ্টমাষ্টার মৃদুহান্ত করিয়া কহিলেন, "সময় নষ্ট হৰে না। আপনি দুমিনিট বহন, আমি মেল রওয়ানা করে দিয়েই আসচি। তারপর আমার ছুটি ।” তখন বাহিরে বৃষ্টি একটু জোরেই আসিয়াছিল, আতিথ্য: গ্রহণ ভিন্ন উপায়ান্তর ছিল না। ঘরের ভিতরে গিয়া একটা চেয়ারে স্থান গ্রহণ করিলাম। পোষ্টমাষ্টার আমার সম্মুখে একখানা খবরের কাগজ আগাইয়া দিয়া একটু উচ্চস্বরে কহিলেন, “মঙ্ক, এখানে পান দিয়ে যাও ত মা !" বলিয়া তিনি মেল রওয়ানা করিতে চলিয়া গেলেন । কিছু পরে পূর্বদিনের পরিচিত সেই মেয়েটি একটি ডিবায় কতকগুলি পান আমার সম্মুখে রাখিয়া দিয়া চলিয়া গেল। তাহার আসা ও যাওয়ার মধ্যে কোন প্রকার সঙ্কোচ বা চঞ্চলতার লক্ষণ প্রকাশ পাইল না। যেমন সহজ, তেমনি ধীর। গঠনটি ছিপছিপে, বর্ণটি অরুণাভ, এবং যতটুকু দেখিতে পাইয়াছিলাম মুখখানি ফুটন্ত ফুলের মত ঢলঢলে। সৰ্ব্বাপেক্ষা অধিক দৃষ্টি আকর্ষণ করে সমস্ত শরীর ব্যাপিয়া সহজ ঋজু ভঙ্গীখানি। খুব যে স্বন্দরী তাহ নহে, কিন্তু দেখিলে তখনি যেন আবার দেখিতে ইচ্ছা করে। o