পাতা:প্রবাসী (পঞ্চদশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).pdf/৩৮৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

* aX 8 সম্ভাষণের পালা। প্রকাও দণ্ড ঘাড়ে করিয়া মহাবীর আসরে নামিলেন। মুখসে মুখের পরিকল্পনা হইয়াছে। সাটিনের পোষাক ফুলমোজা প্রভৃতি ইদানীন্তন সামগ্ৰী সমস্তই আছে, নাই কেবল সেই চিরন্তন লাঙ্গ,ল । রঙ্গমঞ্চে এমন অঙ্গহীন ব্যাপার দেখিয়া বড় আপশোষ হইল। ডেনমার্কের যুবরাজকে বাদ দিয়া হামলেট অভিনয় বরং চলিতে পারে, কিন্তু লেজবর্জিত পবনাত্মজের কল্পনাও করিতে পারি না-লেজ মনে পড়িলেই হমু মনে পড়ে, হতু মনে পড়িলেই লেজ মনে পড়ে। কৰ্ম্মকৰ্ত্তার। ভাবের সাহচৰ্য্যকে এমনভাবে উপেক্ষা করিলেন, ইহাই আশ্চর্য্য ! বারাণসীর বিজয় দেখিবার আশায় নবমীর দিন অপরাহ্লে সেখানে পৌছিলাম। বাঙ্গালীটোলার গলিগুলি একটা গোলকধাঁধ ; সার্থীদের লইয়া আতিপাতি করিয়া খুজিয়া ভরতদাদার বাড়ী আবিষ্কার করিলাম। তিনি মহাখুলী ; রাত্রিভোজনে একেবারে মাংসের বন্দোবস্ত হইয়া গেল। কাশীতে পদার্পণ করিয়াই জীবহিংসা !— মন সংশয়দোলায় দুলিতে লাগিল। "ভরতদাদা অভয় দিলেন, আমরা শাক্তমতের লোক, স্বতরাং ঠিক পূজার উপলক্ষে না হউক, পূজার মধ্যে কাটা পাঠায় দোষ নাই ! সন্ধ্যার পর ঘুরিতে ঘুরিতে দশাশ্বমেধ ঘাটে আসিলাম। এবারে যেমন বর্ষ হইয়াছে এমন নাকি বহুকাল হয় নাই, কাশীর প্রধান শোভা ঘাটগুলি সমস্তই জলের তলে। ছোটখাটে। কয়েকটি মন্দির একেবারে ডুবিয়া গিয়াছে; নীচে যুদ্ধ করিয়া উপরে ক্রুদ্ধ জল পাক পাইয়া ঘুরিতেছে। দুই-একটি মন্দিরের কণ্ঠে ও চূড়ায় প্রতিহত প্রবাহ বিপরীতমুখ ; সেখানে ছোট নৌকা অনায়াসে উজানে চলিয়াছে। সম্মুখে জলোচ্ছ,াসে ছলচ্ছলশব্দময়ী গঙ্গা, আকাশে শুভ্রলঘু মেঘে নবমীর অপরিস্ফুট জ্যোংস্ক। ধন্য তুমি বিশ্বনাথের পুণ্যপীঠ কাশী । আজ এই কলুবনাশিনী গঙ্গার শতসৌধমণ্ডিত তীরে দাড়াই৷ তন্দ্রাময় চন্দ্রালোকে তোমার কি অপরূপ স্বপ্নমূৰ্ত্তি দেখিলাম! অগণিত ঋষির পূত চরণরেণু তোমার পথের ধূলায় পুঞ্জীভূত ; তোমার ঘাটে বাটে মাঠে সহস্ৰযুগের অজস্র কাহিনী ; অনন্ত অস্তরের ভক্তিপুষ্পাঞ্জলি তোমার মন্দিরে মন্দিরে নিৰ্ম্মালম্ফপে সঞ্চিত। জীবনে তোমার প্রবাসী—আশ্বিন, ১৩২২ ১৫শ ভাগ, ১ম খণ্ড যোগমন্ত্র, বিয়োগে তুমি অভয়দাতা । তোমাকে প্রণাম করি। পরদিন প্রভাতে দল বাধিয়া প্রাতঃস্বান করিলাম । থানকয়েক এক্কা এবং একখানি ঠিকাগাড়ীতে সমস্ত সহর প্রদক্ষিণ ক রয়া আস গেল। বিশ্বেশ্বর এবং অন্নপূর্ণর ত কথাই নাই, অন্যান্য মন্দিরেও দেবতাদর্শন হইল। সেন্টাল হিন্দুকলেজটির ঘরে ঘরে ঘুরিয়া ফিরিয়া দেখিলাম। কাশীর সারস্বত ক্ষেত্রে প্রাচ্যপ্রতীচ্য শিক্ষাসমন্বয়ের এই সদনুষ্ঠানটি সকলেরই শ্রদ্ধার উদ্রেক করে । অপরাহ্লে বিসর্জন দেখিবার জন্য কেদারঘাটের কাছে বজরায় উঠিলাম। অতুকুল স্রোতে নৌক মণিকর্ণিকার দিকে চলিল। এবারে লড়াই বাধায় লোকের অর্থব্যয় করিবার সামর্থ কমিয়াছে, তাই কাশীতে বাঙ্গালীর সমাগম আশানুরূপ হয় নাই। তথাপি দেশী ও বিদেশী লোকের খুব ভিড়—তীরে ঘাটে ঘাটে এবং প্রতিসৌধশিখরে লোকারণ। জনতা দশাশ্বমেধেই সৰ্ব্বাপেক্ষ অধিক। কড়া জলে নৌকাচড়ার সখ বেশি লোকের হয় নাই,-নদীতে পানীর সংখ্যা অল্প। কাশীরাজের একখানি মোটর বোট বাহার দিয়া ছুটাছুটি করিতেছিল। সন্ধ্যার সময় আমরা বাড়ীর দিকে ফিরিলাম। মাল্লারা কাছি ধরিয়া বজরাখানা ডাঙ্গার কাছাকাছি টানিয়া লইয়া চলিল। মাঝি অামাদিগকে উপদেশ দিল, একেবারে 'তরাজুকা তোল পর' থাকিতে হইবে, যেন নৌকা কোন দিকে কাং ন হয় । জলেস্থলে পরস্পর প্রতিকূল আকর্ষণে পানী ঘন ঘন হেলিতেছিল ; বারে বারে পাষাণ-ভাঙ্গিয় বসিয়া অনেক কষ্টে নৌকা ঘাটে পৌছিলে অত্যন্ত আসান বোধ কর। গেল । একাদশীর দিন বেল। তৃতীয় প্রহরে বিন্ধ্যাচলে উপস্থিত হইলাম। পাণ্ডাদের হাতে পড়িয়া দফা শেষ হইবার উপক্রম হইয়াছিল ; একজনের সহিত মাথাপিছু দু'আনায় রফ করিয়া বাকী সকলের কবল হইতে মুক্তিলাভ করিলাম। বিন্ধ্যবাসিনীর মন্দির হইতে এক্কার রাজসংস্করণ টোঙ্গায় চড়িয়া প্রায় এক ক্রোশ দূরে পাহাড়ের উপর অষ্টভূজ সন্দর্শনে চলিলাম। পথের দুই ধারে অনেকগুলি ঘর বাটন-বাট শিলে বোঝাই ; পাহাড়ের নীচে গাছের তলায় l পৰ্য্যস্ত ছোট বড় শিলনোড়া ছড়ানে । ইচ্ছা করে কুড়াইয়। বাড়ীর রন্ধনশালায় আনিয়া হাজির করি । কিন্তু দুঃখের বিষয়, কলিকাতার বাজার-দর রেলের মাশুলেই উস্থল হইয়া যাইবে । রৌদ্রে অনেকেরই পিপাসা হইয়াছিল। ঝরণার নিৰ্ম্মল জল অঞ্জলি ভরিয়া পান করিলাম। দেবীদর্শনের পর আমাদের টোঙ্গ। ষ্টেশনের দিকে চলিল স্বৰ্য্য তখন অস্তগত, অগস্তোর বিস্মৃতির মত গোধূলির অন্ধকার যুগযুগাস্তের প্রতীক্ষায় নতশির গিরিকে ধীরে ধীরে আচ্ছন্ন করিতেছিল। বিন্ধ্যাচলে সন্ধ্যাযাপন করিয়া রাত্রি এক প্রহরের সময় চুণারে ফিরিয়া আসিলাম । -- শ্ৰীভূপেন্দ্রনারায়ণ চৌধুরী। কামাখ্যা-ভ্রমণ স্বযোগ পাইলেই মাহুষ একটু আনন্দ উপভোগ করিয়া লইতে চায় । সেইরূপ ইচ্ছা-প্রণোদিত হইয়াই আমরা একবার ছুটিতে কামাখ্যা-দর্শনে বাহির হইয়। পড়িয়াছিলাম । নীলগিরি বা কামাখ্যা-পাহাড়ের শিখরদেশ হইতে প্রকৃতির যে অপরূপ সৌন্দর্য চোখে পড়ে ভাষায় তাহ সম্যক বর্ণনা করা যায় না। সে সৌন্দৰ্য্য যে দেখিয়াছে সে বুঝিয়াছে আমাদের দৈনন্দিন জীবনের কোলাহল ও তুচ্ছতার তুলনায় তাহ কত जैनद्र-बौ भश्ान् । ধাবমান মৃগ ও শৃগাল দেখিতে দেখিতে আসামের জঙ্গল পার হইয়া যখন আমরা ব্রহ্মপুত্রের তীরবর্তী আমিনগাও পৌছিলাম তখন দ্বিপ্রহর উত্তীর্ণ হইয়াছে। নদীর স্বচ্ছ জলের উপর দিয়া আমরা পরপারে পাণ্ডু নামক স্থানে a কামাখ্যা-ভ্রমণ কামাখা-মন্দির । পৌছিলাম এবং সেখান হইতে রেলে কামাপ্য যাত্র করিলাম। পাহাড়ের পাদদেশে রেল-ষ্টেসন। সেখান হইতে কয়েক পদ বাবধানে একটি পথ পৰ্ব্বতশীর্ষে কামাখ্যা-মন্দিরে গিয়া পৌছিয়াছে। কামৰূপ-রাজ নরকাস্থর এই পথটি নিৰ্ম্মাণ করাইয়াছিলেন। নরকাস্বরের পুত্র রাজা ভগদত্তের রঙ্গপুরে একটি প্রমোদোদ্যান ছিল । শোনা যায় এই প্রমোদোদ্যানের নাম রঙ্গপুর হইতেই ঐ জেলার নামের উৎপত্তি। মহাভারতে দেখিতে পাই রাজা ভগদত্ত কুরুক্ষেত্রের মহাসমরে যুদ্ধ করিয়াছিলেন । ইহা হইতে অকুমান হয়