পাতা:প্রবাসী (পঞ্চদশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).pdf/৪১৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

११७ ইতে এবং শক্তিতে চিরস্থায়ী ও উন্নত করিতে চাই। কিন্তু এইটুকুতেই সন্তুষ্ট থাকিলে আমাদের চলিবে না। কেবল আমাদের অধিকার এই মুখেই পৰ্য্যবসিত নয়, কেবল ইহার দাবীই আমাদের কৰ্ত্তব্য নয়। ধনীর অন্তঃপুরে প্রায়ই যে স্বাণময় অবসাদের প্রবাহ দেখা যায়, তাহাতে সন্তুষ্ট থাকিতে ত আমরা কিছুতেই পারি না। যতদিন ন৷ আমরা নিঃস্বার্থভাবে অপরকে মুখী কর ও সেই সুথের উপযুক্ত করাই জীবনের চরম লক্ষ্য বলিয়া বুঝিব ততদিন অপরের নিকট হইতে সুখী হইবার আশা করিবার আমাদের কোনও অধিকার নাই। আমরা যদি প্রকৃত মুখের সন্ধান ন পাই তবে তাহ আমাদের গ্রহদোষ নয়, আমাদের নিজেদেরই দোষ । আমাদের দেশের পুরুষগণ আজ পূর্বাপেক্ষ অনেক পরিষ্কাররূপে দেখিতে পাইয়াছেন যে, আমাদের সমগ্র জাতির ভবিষ্যং মঙ্গল ও সফলতা বহুলপরিমাণে আমাদের অর্থাৎ মাতৃগণ ও কন্যাগণের উপরেই নির্ভর করিতেছে। শিক্ষা, স্বাধীনতা, এবং নৈতিক ও মানসিক উন্নতি ইহাই, আমাদের আকাক্ষিত বস্তু ও উদ্দেগু হইবে। কে আমাদের স্বর্থী করিবে ? এ প্রশ্নের কোনও অবশ্যকতা নাই ; আমরা কেমন করিয়া স্বজাতি ও স্বদেশের কাজে লাগিতে পারি? তাহাই ভাবিতে হইবে।” তুরস্করমণীদের প্রতিনিধিস্বরূপ এই মহিলার প্রবন্ধে স্বদেশ ও স্বজাতিপ্রীতি, আত্মোন্নতির ইচ্ছা ও আপনাদের হীনাবস্থার অতৃপ্তি প্রভৃতি অনেকগুলি গুণ দেখিতে পাওয়া যায়। আত্মতৃপ্তির মূলে কুঠারাঘাত করিতে না পারিলে কখনও কোন জাতির উন্নতি হয় না। সেই সুলক্ষণ ইহাদের মধ্যে দেথা দিয়াছে । উপরোক্ত পত্রিক। স্ত্রী জাতির অধিকাররক্ষা সমিতি হইতে প্রকাশিত। নিম্নলিখিত কয়েকটি বিষয়ে ইহাদের বিশেষ লক্ষ্য :– ১ । তুরস্করমণীর বহির্গমনের পরিচ্ছদের পরিবর্তন। ২। বিবাহপ্রণালীর উৎকর্ষসাধন । ৩ । স্ত্রীজাতি যাহাতে পরিবারের মধ্যে লাঞ্ছিত বা উৎপীড়িত না হন, এরূপ ব্যবস্থা করা, এবং এরূপভাবে তাহাঘের বল বিধান করা . - প্রবাসী—আশ্বিন, ১৩২২ [ ১৫শ ভাগ, ১ম খণ্ড । মাতৃগণকে আধুনিক শিক্ষাবিজ্ঞান অনুসারে সন্তানপালনে ও তাহাদিগকে শিক্ষাদানে সমর্থ করা। ৫ । তুরস্করমণীকে সামাজিক জীবনে শিক্ষিত ও অভ্যস্ত করা । ৬ । তুরস্করমণীর বর্তমান দুঃখ দূর করিবার জন্য তাহাদিগকে স্বীয় জীবিকা-উপার্জনে উৎসাহিত করা ও তাহাদের কাজ খুজিয়া দেওয়া । ৭। তুরস্কবালিকাদিগকে দেশের অভাবমোচনের উপযোগী শিক্ষা দিবার জন্য নূতন বালিকাবিদ্যালয় স্থাপন ও বৰ্ত্তমান বিদ্যালয়গুলির উৎকর্ষসাধন । হঠাৎ দেখিতে গেলে উপরোক্ত উদ্বেগুগুলির মধ্যে প্রথম পাঁচটিই অধিকতর প্রয়োজনীয় এবং অবিলম্বে সাধনীয় বলিয়া বোধ হইতে পারে, কিন্তু শেষোক্ত দুইটিই এই বিরাটসমস্তার সোনার কাঠি, কেননা স্ত্রীজাতির আর্থিক স্বাধীনতা ও মানসিক শিক্ষার মধ্যেই তাহার সামাজিক অবস্থার রহস্য নিহিত । স্ত্রীশিক্ষা ও স্ত্রীজাতির উন্নতির দিকে তুরস্ক গভর্ণমেন্টের দৃষ্টি পড়াতে উপরোক্ত সমিতির কায্যের বিশেষ সুবিধা হইয়াছে । সম্প্রতি শিক্ষাবিভাগের মন্ত্রী একটি বিবরণী প্রকাশ করিয়াছেন ; তাহাতে দেপা যায় গভর্ণমেণ্ট স্ত্রীশিক্ষার বিস্তার করিতে, তাহাকে পূর্ণাঙ্গ ও নির্দোষ করিতে এবং তাহাকে বৰ্ত্তমান শতাব্দীর সভ্যতা ও উন্নতির উপযোগী করিতে অবিশ্রান্ত চেষ্টা করিতেছেন । এই উদ্দেশ্যেই অনেকগুলি সাহিত্যসমাজ (Lycees), শিক্ষকদিগের জন্য নৰ্ম্মালম্বুল ও গার্হস্থ্যবিদ্যাশিক্ষালয় স্থাপনের সংকল্প করা হইয়াছে। তুরস্কের ভাবী বধূ ও মাতৃগণের মানসিক ও নৈতিক উন্নতির জন্য গভর্ণমেণ্ট অশেষপ্রকারে চেষ্টা করিতেছেন। নিয়মতন্ত্রশাসনপ্রণালীর পূৰ্ব্বে বালিকাদিগের শিক্ষার দিকে কাহারও কোনও দৃষ্টি ছিল না বলিলেই চলে। মুসলমানবালিকার এগার বার বৎসর বয়স পর্য্যন্ত মসজিদসংস্থষ্ট বিদ্যালয়ে যাইত, ন হয় ত গভর্ণমেণ্ট স্কুলের নিম্নতম শ্রেণীতে পড়িত ; এখানে তাহারা সামান্য লিখিতে পড়িতে, কিছু অঙ্ক কমিতে, একটু স্থচিশিল্প করিতে ৪ কিঞ্চিং , আজকালকার বাঙ্গালী মেয়ের " কোরান পড়িতে শিথিত । 扈 ৬ষ্ঠ সংখ্যা ] তুকী-রমণীনেত্রী । মাননীয় শ্ৰীযুক্ত আজিজ হাইদার হামুম, তুর্কী-রমণীর স্বত্বসংরক্ষণ সভার নেত্রী, ইনি মাতৃগণের শিক্ষালয় স্থাপনের জন্য আপনাকে নিরাভরণ করিয়া সৰ্ব্বথ দান করিয়া স্বদেশকে অলঙ্কত করিয়াছেন। শিক্ষারই অনুরূপ আর কি। কোন কোন ধনীপরিবারের কন্যারা বাড়ীতে বিদেশী গৃহশিক্ষয়িত্রীর নিকট শিক্ষা করিতেন। কিন্তু মোটের উপর ধরিতে গেলে তাহদের শিক্ষা গান বাজনা, রেপাঙ্কণ, চিত্রাঙ্কণ, স্থচিশিল্প ও ফরাসীভাষা শিক্ষাতেই পৰ্য্যবসিত। নূতন শাসনপদ্ধতি বালিকাবিদ্যালয় ও বালকবিদ্যালয় উভয়কেই নূতন ছাচে গড়িতে চেষ্টা করিতেছেন ; ইতিমধ্যেই বালিকাবিদ্যালয়সমূহকে একটু উচ্চশ্রেণীর করিবার কিছু কিছু উপায় অবলম্বন করা হইয়াছে। সাধারণতঃ গভর্ণমেণ্ট বালিকাবিদ্যালয়ে তিনবৎসর কিণ্ডারগার্টেন ও প্রাথমিক শিক্ষা এবং তিনবৎসর তার চেয়ে উচ্চতর শিক্ষার রাবস্থা আছে। ইস্তাস্থলের বাহিরে বালিকাদের জন্য কেবলমাত্র এইরূপ শিক্ষার বন্দোবস্ত আছে " ইস্তাম্বুলে তিনটি উচ্চতর শ্রেণীর বিদ্যা .লয় আছে ; প্রথম, 'মুলতানী –এখানে উচ্চতর শ্রেণীর সাধারণশিক্ষার ব্যবস্থা আছে ; দ্বিতীয়, ‘দার-উল মুসলমানদেশের নারীসমাজ ११०


- মেীআলিমত –শিক্ষয়িত্রীদিগের শিক্ষার জন্য ; তৃতীয, সেনায়ে’–এখানে জীবিকাঅর্জনের জন্য নানারূপ বৃত্তি শিক্ষা দেওয়া হয় ।

“দার-উল মৌআলিমত হামিদীয় শাসনপ্রণালীর সময় হইতেই ইস্তাম্বুলে বর্তমান আছে। কিন্তু সেই যুগের সকল ব্যাপারেরই মত এতদিন ইহাও একটি নিষ্ফল ব্যাপার মাত্র ছিল। এই বিদ্যালয় এক নিদ্রাতুর বৃদ্ধ গুরুমহাশয়ের তত্ত্বাবধানে থাকিত । তিনি আপনার নির্দিষ্ট কার্যাকক্ষে সটান শুইয়া পড়িয়া ধূমপান ও কফিপান করিয়াই দিন কাটাইয়া দিতেন ; আবশ্বক বোধ হইলে মাঝে মাঝে পাঠ আরম্ভ হইত, বেশী পড়িলে পাছে বালিকাদের স্বকুমার স্বাস্থ্য ও সৌন্দর্ঘ্যের কিছু হানি হয় সেই ভয়ে পড়াও তথৈবচ হইত। নিয়মতন্ত্রশাসনপ্রণালীর পর হইতে বিদ্যালয়টি আবার সম্পূর্ণরূপে নূতন করিয়া গড়িয়া তোলা হইয়াছে । ইহার বাড়ী ও অবস্থান পরিবর্তন করিয়া ইহা একটি সুন্দর বাগানের মধ্যে প্রতিষ্ঠিত হইয়াছে। এখন ইহা একজন স্বইসমহিলা ও একজন তুর্কিসহযোগিনী দ্বারা পরিচালিত । শিক্ষাবিভাগের একজন মন্ত্রী ইহার তত্ত্বাব ধায়ক । গবর্ণমেণ্ট প্রথমে স্থির করিয়াছিলেন যে ইস্তাম্বুলের বালিকাদের এখানে শিক্ষিত করিয়া তাহাদিগকে শিক্ষয়িত্রীরূপে দেশের অন্যান্য স্থানে প্রেরণ করিবেন। কিন্তু তুরস্ক-সমাজে নারীগণ অত্যন্ত নিকট আত্মীয় ভিন্ন কাহারও সহিত মিশিতে পারেন না বলিয়৷ এই সঙ্কল্প কাৰ্য্যে পরিণত হইল না। অগত্য অন্য সকল প্রদেশের বালিকাদের শিক্ষাকালের সমস্ত ব্যয় প্রভৃতি দিবার লোভ দেখাইয়া এই বিদ্যালয়ে আনা স্থির হইল। এইখানে শিক্ষালাভ করিয়া তাহার দেশে ফিরিয়া আপনাদের পরিবারে থাকিয়৷ শিক্ষাদানের কার্য্য করিতে পারে। এই ব্যবস্থা আশ্চর্যারূপ সফল হইয়াছে, এখন প্রায় দেড়শত ছাত্রী এই বিদ্যালয়ে অধ্যয়ন করে। ইহাদের মধো তুরস্কসাম্রাজ্যের সকল প্রদেশের, এমন কি সিরিয়া কুর্দিস্তান ট্রিপোলি প্রভৃতিরও, ছাত্রী আছেন। মুসলমান ও অমুসলমান সকল তুরস্করমণীরই এই বিদ্যালয়ে আসিবার অধিকার আছে। এই বিদ্যালয়ে তুর্কি রীতিনীতি ও প্রথাসকলের প্রতি