পাতা:প্রবাসী (পঞ্চদশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).pdf/৭৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

>S)8 চর্চার পরিধি পাওয়া যাইতেছে। বাৰ্ত্তাশ্রয় বিজ্ঞান শিক্ষার প্রচুর আয়োজন সত্বে চারি বংসর পূৰ্ব্বে বার্লিনে জৰ্ম্মান সম্রাট নিজের নামে এক “ইনষ্টিটিউট" প্রতিষ্ঠা করিয়৷ দেশের যাবতীয় কলার বাৰ্ত্তার বৈজ্ঞানিক গবেষণার মূল দৃঢ় ও পুষ্ট করিয়াছেন। চরক বলিয়াছেন সম্যক প্রয়োগং সৰ্ব্বেষাং সিদ্ধিরাখ্যাতি কৰ্ম্মণাম—সৰ্ব্বকৰ্ম্মে সম্যক প্রয়োগ করিতে পারিলে সিদ্ধি বলা যায়। পূৰ্ব্ব কালে আমাদের দেশে মূত বিজ্ঞান-বলে বাৰ্ত্ত ও কলায় উত্তম সিদ্ধি লাভ হইয়াছিল। প্রাচীন কালে যজ্ঞকুণ্ড নিৰ্ম্মাণে শুস্ব-স্বত্রের আরম্ভ হইয়াছিল, ক্ষেত্রবিভাগে ক্ষেত্র-তত্ত্বের স্বষ্টি হইয়াছিল। নিম্ন সোপান হইতে উচ্চে উঠিতে বাধা হয় না। তেমন মুত-বিজ্ঞান শিথিলে অমৃত-বিজ্ঞান শিখিতে বাধা হয় না। অতএব দাড়াইল এই, অমৃত-বিজ্ঞান যিনি শিপিতে চান শিখুন, কিন্তু মূৰ্ত্ত-বিজ্ঞান শিখিবার আয়োজন আবখক। মূৰ্ত্ত-বিজ্ঞান দ্বারা অমৃত-বিজ্ঞান-জাত বিনয় লাভ হইবে, লৌকিক জ্ঞান হইবে, আর সেই জ্ঞান প্রকৃত হইবে। ইহাতে পারগ ছাত্র হাকিম হউন, উকীল হউন, এই দেশের সম্পর্কে থাকিবেন, তাহার অধীত বিদ্যা প্রয়োগের সুযোগ পাইবেন, এবং যত্ন করিলে মৃত মার্গ ধরিয়া অমৃত মার্গে উপস্থিত হইতে পরিবেন। ফলে দেশে বিজ্ঞান-বিস্তার হইবে। এতদিন অমৃত-বিজ্ঞান শিক্ষার ফল দেখা গো ; এখন মূত-বিজ্ঞান শিখিলে কি হয়, তাহাও ত দেখা কৰ্ত্তব্য । দেশের বিজ্ঞানপ্রচারের তৃতীয় অন্তরায় বিদেশী ভাষায় বিজ্ঞানশিক্ষা । এই বিদেশী ভাষা, ইংরেজী ভাষা এত কঠিন যে, শৈশব হইতে যৌবন পৰ্য্যন্ত দশ বার বংসরের যত্বে ও শ্রমে যৎকিঞ্চিং আয়ত্ত হয় । মস্তিষ্কের শক্তি অফুরন্ত নহে, আমাদের বয়সও নহে। এই ভাষা শিখিতে আমাদের কত রক্ত জল হইতেছে, কত শক্তি তাপ হইতেছে, তাহ চিন্তা করুন। অথচ এই বিদেশী ভাষা শিক্ষা আমাদের কামা নহে ; কাম্য বিজ্ঞান। কাম্যের চতুর্দিকের কন্টকের প্রাকার ভেদ করিতেই শক্তি সামর্থ ক্ষয় হইতেছে। ইহাও সহ হইত ; মাতৃভাষায় না শেখাতে বিদেশী বিজ্ঞান বিদেশী থাকিয়া যাইতেছে । বিজ্ঞান-বিষয়ে কিছু বলিতে কিছু লিপিতে হইলে বিদেশী ভাষায় বুলিতে প্রবাসী—বৈশাখ, ১৩২২ [ ১৫শ ভাগ, ১ম খণ্ড লিখিতে হইতেছে ; চিন্তা করিতে হইলেও বিদেশী শব্দমৃষ্ট্রির উপাসনা করিতে হইতেছে। কারণ, অন্য সাধন জান নাই। ফলে দাড়াইয়াছে সভাসমিতি আপিশ আদালতে যাইতে হইলে গৃহবেশ ত্যাগ করিয়া যেমন সভাবেশ পরিধান করি, এবং সেখান হইতে আসিয়াই সে বেশ ত্যাগে সুস্থ বোধ করি, আমাদের পক্ষে বিজ্ঞানও তেমন হইয়াছে। উহা দেশের ধাতুতে মিশিতেছে ন৷ বাহিরে বাহিরে শোভাসম্পাদনের নিমিত্ত থাকিতেছে। ইংরেজীতে বিজ্ঞান শিখিতে ছাত্রের যত বৎসর লাগিতেছে, মাতৃভাষায় শিথিলে অৰ্দ্ধেক সময় লাগিত না। কয়েক বৎসর আমাকে কটকের মেডিকাল ইস্কুলে রসায়নবিজ্ঞান শিথাইতে হইয়াছিল। ছাত্রদিগের শিক্ষণীয় বিষয় অল্প ছিল না, এখানকার আই-এসসি পরিক্ষার নিমিত্ত যতথানি আছে প্রায় ততখানি ছিল। ছিল না কৰ্ম্মাভ্যাস। কিন্তু কুড়ি দিনের মধ্যে অধ্যাপনা শেষ করিতে হইত। আমরা কলেজে কত কুড়ি দিন দিয়া থাকি, তাহ সবাই জানি। বিশ্ববিদ্যালয়ের আদেশে অনুন সাতকুড়ি দিন অধ্যাপন করিতেছি। এই প্রভেদের প্রধান কারণ ভাষার প্রভেদ। মেডিকাল ইস্কুলের ছাত্র মাতৃভাষায় শিথিত। দেখিয়াছি, ইংরেজিতে যাহা এক ঘণ্টা বুঝাইয়। ছাত্রের হৃদগত করিতে পারি নাই, অল্প বাঙ্গাল কথায় তাহ অক্লেশে পারিয়াছি । জল কেন ছাকি, কি কাজে কেমন ছাকৃনি চাই, ইত্যাদি হাজার বলি, এক "ফিলটার" শৰে একটা বিদেশী অজানা অদেখা বস্তুর আবছায়। মনে ভাসিতে থাকে। বিলাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রের। যে বয়সে যত বিদ্য। আয়ত্ত করে, সে বয়সে তত বিদ্যা আমাদের ছাত্রের পারে না। এই যে ভাষা-বিভীষিক যাহার জন্য আমাদের ছাত্রদিগের দেহ মন জড়ভাবাপন্ন হইতেছে, ইহার প্রতিকার কি হইবে না ? ইংরেজি ভাষা, বিদেশী ভাষা শিথিলে হিত হয় না, কিংবা বিনয় অভ্যাস হয় না, এমন বলি না। বলি, কি মূল্য দিয়া এই হিত ক্রয় করিতেছি ? মাতৃভাষায় শিখিলে বিজ্ঞানের তত্ত্ব মনে গাথা হইয়া যায়, বিদেশী ভাষায় বছ সময় লাগে। আরও দেখুন, বিদেশী ভাষা হেতু শিক্ষার ফল দেশময় ছড়াইয়া পড়িতেছে না। বিজ্ঞান জনকয়েকের অধিকুত থাকিতেছে, সকলের ভোগে আসিতেছে না । ১ম সংখ্য। ] - কৃষি-বাৰ্ত্তার দ্বারা বিজ্ঞান প্রচার কৃষিকৰ্ম্মে যে বিজ্ঞান আবশ্বক, অথবা কৃষিকৰ্ম্মের অন্তঃর্নিহিত বিজ্ঞান, কৃষি-বিজ্ঞান বলা যাইতে পারে। ইহ মূৰ্ত্ত-বিজ্ঞান, এক স্বতন্ত্র বিজ্ঞান নহে । উদ্ভিদবিজ্ঞান ইহার অমূৰ্ত্ত আকার। উদ্ভিদ-বিজ্ঞানেও অপর সমুদয় বিজ্ঞান আবশ্বক হয়। আকাশ হইতে পাতালের স্থাবর অস্থাবর সকল দ্রব্যের কোন স্থলে গভীর কোন স্থলে অগভীর জ্ঞান আবশ্বক হয়। মৃত্তিক-জল-বায়ুর ভৌতিক বিজ্ঞান, পশু পক্ষী কীট পতঙ্গের স্বভাবনির্ণয় প্রভৃতি হইতে উদ্ভিদ-বিজ্ঞান পৃথক্ করিতে পারা যায় না। বৃক্ষের জীবন ধারণ, বৰ্দ্ধন পোষণ, সন্তানজনন প্রভৃতি ব্যাপার ভৌতিক জড়ধৰ্ম্ম বলিয়া অদ্যাপি প্রমাণিত হয় নাই। বস্তুতঃ যখনই জন্মমরণ বলি, তখনই এক অজ্ঞাত অনিৰ্দ্দিষ্ট, বোধহয় চিরঅজেয়, সব স্মরণ হয়। বাহ-প্রকৃতি অর্থাং ক্ষেত্র জীবকে কতদিকে নিয়মিত করিতেছে, তাহারই মধ্যে জীব জন্মিতেছে বাড়িতেছে মরিতেছে, কিছু রাথিয়াও যাইতেছে। ইহার তুলনার ভানুমতী বাজি কিছুই নয়। আচাৰ্য বস্তুর জগৎ বিখ্যাত আবিষ্কারে জঙ্গমের সহিত উদ্ভিদের বিলক্ষণ সাদৃশ্য স্পষ্ট হইতেছে। রাসায়নিকের গোটাদশবার মূল পদার্থ পাইলে এক-একটা বৃক্ষ জীবিত বৰ্দ্ধিত ফলপ্রস্থ হইতে পারে, কিন্তু রসায়নবিজ্ঞানের অতিরিক্ত কিছু আছে । সেটা কি, কে জানে। কিন্তু জানি সর্ষপবীজ ও বটবীজ একক্ষেত্রে উপ্ত হইলেও সর্ষপ ও বটবৃক্ষ এক হয় না। কৃষক ভূয়োদর্শনে ভর করিয়া শস্য জন্মাইতেছে, বীজ সংগ্ৰহ করিতেছে, মাটি বিচার করিতেছে, বৃষ্টির সম্ভাবনা দেখিতেছে, ক্ষেত্র বীজাঙ্গুরোৎপত্তির যোগা করিতেছে, বৃক্ষের শত্রু বিনাশ করিতেছে, নবজাত বৃক্ষশিশু পালন করিতেছে, মাটি জল বায়ু রবিকর তেজ অব্যাহত রাগিয়া ফলের প্রত্যাশ করিতেছে, একটি বীজ হইতে বহু পাইতেছে। বীজের সেটা কি শক্তি যাহাতে তাহ বহুধা বিভক্ত হইয়াও পূর্ণ থাকিতেছে ? যে সর্ষপ সে সর্ষপ, যে বট সে বট থাকিতেছে, সঙ্গে-সঙ্গে বহু হইতেছে। জীবন ত দ্রব্যগুণ বলিতে পারা যায় না। অথচ সরিষা-ক্ষেতের দুইটি সরিষা-গাছ অবিকল এক নহে ; আমবাগানের সব গাছের আম সমান দেশে বিজ্ঞান-প্রতিষ্ঠা ᎼᏬᏦ☾ -- ---- ും বড় সমান মিষ্ট নহে। তবে, বৃক্ষের আকার-প্রকার স্বভাব চরিত্র পরিবৃত্তিশীলও বটে। দেখিলে বোধ হয়, প্রকৃতি জাতিভেদ করেন নাই ; আমরা করিয়াছি। আমাদের স্বল্প জ্ঞানে ভেদাভেদ আসিয়াছে। যাহা বিজ্ঞান বলি, বিজ্ঞানের স্বত্র বলি, তন্ত্র বলি, তাহ মাহুষের কল্পিত রচিত; প্রকৃতির তন্ত্র আমরা জানিতে চাই, জানিতে পারিতেছি না । এ কথা প্রাণী-সম্বন্ধেও সত্য। উচ্চ প্রাণী সৰ্ব্বাঙ্গসম্পন্ন হইয়৷ এক সত্ব । ইহার আয়ু নিৰ্দ্দিষ্ট আছে। ইহার যাবতীয় অঙ্গ সেই একের জীবন-নিৰ্ব্বাহ করিতেছে, সত্ত্ব রক্ষা করিতেছে। একটা অঙ্গ ছিন্ন হইলে উহা বিকলাঙ্গ হয়, হয়ত মরিয়া যায়, ছিন্ন অঙ্গ গজায় না, বাড়ে না, আর-একটা সত্বের উৎপত্তি করেন। গাছের এরূপ নহে। গাছের আয়ু স্থির নাই ; ইহার ডাল মাটিতে পড়িলে গজায়, পাতা ফুল ফল ধরে, বীজ উৎপাদন করে। অথচ উদ্ভিদ ও প্রাণীদেহের যে ভূতপদার্থে জীবন ব্যক্ত হইতেছে সে প্র-পঞ্চ রাসায়নিক উপাদানে ও প্রাকৃতিক লক্ষণে এক বোধ হইতেছে। ফলোংপত্তির পক্ষে বীজ প্রধান কি ক্ষেত্র প্রধান, তাহা লইয়৷ পূৰ্ব্বকাল হইতে একাল পৰ্যন্ত বিলক্ষণ বিতর্ক চলি তেছে। বৃক্ষের, ইহার ডাল-পালার ফুলফলের বীজের স্থিরতা আছে নাই-ও। একের মধ্যে বহুরূপতার দৃষ্টান্ত জীবেই পাই । যখন ডাল হইতে গাছ হয়, এবং বহু বৃক্ষ বীজ বিনা অরণ্য হইয়া পড়ে, তখন বীজোংপত্তির বিচিত্র ব্যবস্থা কেন হইয়াছে ? ইয়ুরোপ ও আমেরিকায় পশু-বৰ্দ্ধক ও বৃক্ষবৰ্দ্ধক জনক-জননী নিৰ্ব্বাচন করিয়া, কখনও ক্ষেত্র নিৰ্ব্বাচন করিয়া অদ্ভুত অদ্ভুত সস্তান জন্মাইতেছে। পিতা মাতা হইতে সন্তান কি কি গুণ হরণ করে, তাহার পরিসংখ্যান সমাপ্ত হইতে বিলম্ব আছে। এই হারিতার কারণ কি, কে জানে ? এ বিষয়ে কে কি বলেন, তাহার ব্যাখ্যা নিম্প্রয়োজন। জন্মদ হইতে জাতের প্রভেদ হয়, জাত অধিক হয়, সকলের থাইবার থাকিবার সম্ভাবনা হয় না, যোগ্যের জয় হয়, এবং যে পরিবৃত্তি হেতু জয় তাহার কিছু কিছু হারিত হয়। এসব কথা জীববিজ্ঞানে পুরাতন হইয়া গিয়াছে। যোগ্যের জয় বলি, প্রাকৃতিক নিৰ্ব্বাচন বলি, এসব কথার-কথা মাত্র । অসং হইতে সতের উদ্ভব হয় না, যাহা নাই তাহার সঞ্চয় হইতে পারে না। অতএব বীজে কিছু