পাতা:প্রবাসী (পঞ্চদশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).pdf/৯১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

১৬২ প্রবাসী—বৈশাখ, ১৩২২ [ ১৫শ ভাগ, ১ম খণ্ড SMSMSMSMMMMSMMMMMM MMMMMMJJMJMMSMMSMMSMSMSMSMSMSMMMMS পিছনে বৈশ্বের ও শূদ্রের অৰ্দ্ধেক অৰ্দ্ধেক করিয়া স্থান, সেখানকার থাম হলদে ও কাল। সম্মুখের সারির অপেক্ষ পিছনের সারি ১ হাত উচা—তাহার পিছনে আর ১ হাত উচা—তাহার পিছনে আর ১ হাত উচ—এইরূপে গেলারি করা ছিল। দোতালার অবস্থাও এইরূপ। ষ্টেজের পিছনে সাজঘর ও বাজনার ঘর, তাহার পিছনে বিশ্রামঘর, তাহারও পিছনে দেবতাদের পূজা করিবার স্থান। ষ্টেজে চিত্র থাকিত ; কিন্তু সেগুলি নড়ান যাইত না। ষ্টেজের দেওয়ালের গায়ে উজ্জল বর্ণে কোথাও বাগান, কোথাও বাড়ী, কোথাও শেবার ঘর, কোথাও নদীতীর, কোথাও পৰ্ব্বত আঁকা থাকিত । ষ্টেজের উপরে জর্জরের পূজা হইত ও নান্দী পাঠ হইত। ষ্টেজের দুই পাশে দুই দরজা থাকিত, সেইখান দিয়া পাত্রের প্রবেশ হইত। যাহারা অভিনয় করিতেন, তাহারা প্রথম প্রথম ব্রাহ্মণই ছিলেন। ঋষিদের উপর কটাক্ষ করিয়া কয়েকখানি প্রহসন করায় ঋষিরা শাপ দেন–তোমরা শূদ্র হইয়৷ যাইবে। সেই অবধি উইার শূদ্র হইয়া যান। চাণক্যের অর্থশাস্ত্রে উহাদিগকে শূদ্রই বলা হইয়াছে। থিয়েটারের কথা বলিতে গিয়া ভরত মুনি উহার কতকটা ইতিহাস দিয়া গিয়াছেন। তিনি বলেন, অনেক সম্প্রদায়ের নটসূত্র ছিল। প্রত্যেক সূত্রেরই ভাষ্য ছিল, বার্ষিক ছিল, নিরুক্ত ছিল, সংগ্রহ ছিল, কারিকা ছিল। এই সমস্ত স্বত্র একত্র করিয়া ভরত-নাট্যশাস্ত্র হইয়াছে। এই নাট্য-শাস্ত্রখানি বোধ হয় খ্ৰীষ্টের দুই শত বৎসর পূৰ্ব্বে লেখা হইয়াছিল। কারণ, উহাতে শক যবন ও পহলব এই তিনটি জাতির নাম একত্র পাওয়া যায়। ভরতস্বত্র যদি ॐीtछेद्भ ২০০ শত বৎসর পূৰ্ব্বে লেখা হয় তাহা হইলে তাহারও পূৰ্ব্বে অনেক নাট্যসম্প্রদায় ছিল। পাণিনিতে আমরা দুইখানি নটসূত্রের নাম পাই, একথানি শিলালির, অপরটি কুশাশ্বের। ভাসের নাটকে আছে যে, বৎসরাজ উদয়ন স্বত্রকার ভরতকে আপনার পূর্বপুরুষ মনে করিয়া অত্যন্ত গৰ্ব্বিত হইয়াছিলেন"। তিন্ন ভিন্ন দেশের লোকের প্রবৃত্তির অনুসারে নাটকের প্রবৃত্তি চারি রকম ছিল। সেই চারিটি প্রবৃত্তির নাম-আবর্তী, দক্ষিণাত্য, পাঞ্চালী, ও ওড মাগধী। দাক্ষিণাত্যের লোকে নাটকে নৃত্য গীত বাদ্য বেশী বেশী

  • ~

দেখিতে ভাল বাসিত, তাহার অভিনয়ও ভাল বাসিত, কিন্তু উহা চতুর মধুর ও ললিত হওয়া আবশ্বক ছিল। এইরূপ পূৰ্ব্বাঞ্চলের লোকেরও একটা প্রবৃত্তি ছিল, তাহার নাম ওড় মাগধী। ওড় মাগধী প্রবৃত্তি যেসকল দেশে প্রচলিত ছিল, তাহার মধ্যে বঙ্গদেশ প্রধান। কারণ বঙ্গদেশ হইতেই মলচ, মল্ল, বর্ষক, ব্রহ্মোত্তর, ভার্গব, মার্গব, প্রাগজ্যোতিষ, পুলিন্দ, বৈদেহ, তাম্রলিপ্তি প্রভৃতি দেশ নাটকের প্রবৃত্তি গ্রহণ করিত। এই নাটকের প্রবৃত্তি এই যে, ইহার প্রহসন ভাল বাসিত, ছোট ছোট নাটক ভাল বাসিত, পূৰ্ব্ববঙ্গে আশীৰ্ব্বাদ ও মঙ্গলধ্বনি ভাল বাসিত, কথোপ কথন ভাল বাসিত, আর সংস্কৃত পাঠ ভাল বাসিত ; স্ত্রীর অভিনয় তাহাদের আদৌ ভাল লাগিত না, পুরুষের অভিনয়ই তাহাদের পছন্দ ছিল। তাহার। নাটকে গান বাজনা নাচ—এ সব ভাল বাসিত না। খ্ৰীষ্টের দুই শত বংসর পূৰ্ব্বেও যদি বাঙ্গলায় নাটকের একটা স্বতন্ত্র রীতি চলিয়া থাকে, তবে তাহা বাঙ্গালীর কম গৌরবের কথা नव | - ষষ্ঠ গৌরব—নৌকা ও জাহাজ বাঙ্গলায় যেরূপ বড় বড় নদী আছে, তাহাতে বাঙ্গালীরা যে অতি প্রাচীন কালেও নৌক গড়িত, সে বিষয়ে সন্দেহ নাই। নৌকাও অনেকরুপ ছিল—দোণ, দুণি, ডিঙ্গি, ভেল, নৌকা, বালাম, ছিপ, ময়ূরপন্থী ইত্যাদি। এ সকলই ছোট ছোট নৌকা, সকল দেশেই আছে। বাঙ্গলা কিন্তু বড় জাহাজও ছিল। বুদ্ধদেবেরও আগে বঙ্গদেশে বঙ্গনগরে এক জন রাজা ছিলেন। এক সিংহ রাজকন্যাকে, বিবাহ করিল। রাজকন্যার এক পুত্র ও এক কন্যা হইল। পুত্রের হাত দুইখানি সিংহের মত হইল, এইজন্য তাহার নাম হইল সিংহবাহু। সিংহবাহু বড় হইলে মা ও ভগিনীকে লইয়া সিংহের গুহা হইতে পলায়ন করিল। বাঙ্গলার সীমানায় উপস্থিত হইলে সীমারক্ষক রাজার শালা রাজকন্যা ও তাহার ছেলে মেয়েকে বঙ্গনগরে পাঠাইয়া দিলেন। সিংহবাহু রাজা হইল। তাহার বড় ছেলের নাম হইল বিজয় । সে বড় দুরন্ত, লোকের উপর বড় অত্যাচার করে। লোকে উত্যক্ত হইয়া উঠিল, রাজাকে বলিল, | ১ম সংখ্যা ] ছেলেটিকে মারিয়া ফেল ।” রাজা ৭০০ অনুচরের সহিত বিজয়কে এক নৌকা করিয়া দিয়া সমুদ্রে পাঠাইয়া দিলেন । বিজয়ের ও তাহার অনুচরবর্গের ছেলেদের জন্য আর-এক নৌকা দিলেন ও তাহাদের স্ত্রীদের জন্য আরও একথানা নৌকা দিলেন। ছেলেরা একটা দ্বীপে নামিল, তাহার নাম হইল নগ্নদ্বীপ ; মেয়েরা আর-একটি দ্বীপে নামিল, তাহার নাম হইল নারদ্বীপ। বিজয় ঘুরিতে ঘুরিতে, এখন যেখানে বোম্বাই, তাহার নিকটে স্বল্পরাক নগরে আসিয়া উপস্থিত হইল, সংস্কৃতে উহার নাম স্থপরার্ক, এখন উহার নাম সুপার। বিজয় সেখানেও অত্যাচার আরম্ভ করিল। লোকে তাহাকে তাড়া করিল, সেও আবার নৌকায় চড়িয়৷ পলাইয়া গেল ও লঙ্কাদ্বীপে আসিয়া নামিল । সে যেদিন লঙ্কাদ্বীপে নামে, সেদিন বুদ্ধদেব কুশীনগরে দুই শালগাছের মাঝে শুইয়া নিৰ্ব্বাণ লাভ করিতেছিলেন। তিনি ইন্দ্রকে ডাকিয়া বলিলেন, “আজ বিজয় লঙ্কাদ্বীপে নামিল । সে সেখানে আমার ধৰ্ম্ম প্রচার করিবে, তুমি তাহাকে রক্ষা করিও।” যে তিনখানি নৌকায় সিংহবাহু বিজয় ও তাহার লোকজন, উহাদের ছেলেপিলে ও পরিবারবর্গ পাঠাইয়া দেন, সে তিনখানিই খুব বড় নৌকা ছিল। ৭০০ লোক যে নৌকায় যায়—সে ত জাহাজ । আড়াই হাজার বৎসর পূৰ্ব্বে বাঙ্গল দেশে বড় বড় নৌকা তৈয়ার হইত। বিজয় যে জাহাজে লঙ্কা যান, সে জাহাজের একখানি ছবি অজস্তগুহার মধ্যে আছে। তাহাতে মাস্থল ছিল, পাল छ्लि, ষ্টীম এঞ্জিন হইবার আগে যে-সব জিনিষ তাহাতে দরকার, সবই ছিল । সে ছবিও অল্প দিনের নয়, অন্তত ১৪০০ বংসর হইয়া গিয়াছে। তখনও লোকে মনে করিত, বিজয় এই ভাবে এইরূপ নৌকায় লঙ্কায় নামিয়াছিলেন । বুদ্ধের আগেও ভারতবর্ষের অন্যত্র এরূপ অনেক বড় বড় নৌকা ছিল। এক জাহাজে ৭০০ লোক যাইবার কথ। অনেক জায়গায় শুনা যায়। কিন্তু তাম্রলিপ্তি বা বাঙ্গল হইতে এরূপ জাহাজ যাইবার কথা বুদ্ধদেবের আগে বা পরেও অনেক বৎসর ধরিয়া আর শুনা যায় না । তথাপি ইউরোপীয় পণ্ডিতেরা মনে করেন, বুদ্ধের সময়ও তাম্রলিপ্তি একটি বড় বন্দর ছিল। অর্থশাস্ত্রে বলে যে, যিনি রাজার "নাবধ্যক্ষ" থাকিতেন, তিনি “সমুদ্রসংঘানের" ও অধ্যক্ষত৷ বাঙ্গলার প্রাচীন গৌরব ہمارا\. AASAASAASAASAASAAASMMSMSMS করিতেন। স্বতরাং তখনও যে বঙ্গ মগধ হইতে সমুদ্রে জাহাজ যাইত, সে বিষয়ে আর সন্দেহ নাই। বঙ্গ মগধ হইতে জাহাজ ঘাইতে হইলে, তাম্রলিপ্তি ছাড়া আর বন্দরও নাই। দশকুমারচরিত একখানি প্রাচীন গ্রন্থ। উইলসন সাহেব মনে করেন যে, উহ। খ্ৰীষ্টের জন্মের ছয় শত বৎসর পরে লিথিত । অনেকে কিন্তু মনে করেন, উহ খ্ৰীষ্টের জন্মের পূর্বেই লেখা হইয়াছে। উহাতে তাম্রলিপ্তি নগরের বিবরণ অাছে। সেখান হইতে অনেক পোত বঙ্গসাগরে যাইত। দশকুমারের এক কুমার তাম্রলিপ্তি হইতে সেইরূপ এক পোতে চড়িয়া দূর সমুদ্রে যাইতেছিলেন। রামেৰু নামে এক ঘবনের পোত তাহার পোতকে ডুবাইয়া দেয়। রামেষু নামে যবনস্ত পড়িয়া ইজিপ্টের রাজা রামেসিসের কথা মনে পড়ে। দশকুমার যখন লেখা হয়, তখনও বোধ হয় রামেসিসের স্মৃতি কিছু জাগরূক ছিল। খ্ৰীষ্টের জন্মের চারি শত বৎসর পরে ফাহিয়ান তাম্রলিপ্তি হইতে এক জাহাজে চড়িয়া চীনযাত্রা করিয়াছিলেন। সে জাহাজে নানা দেশের লোক ছিল। চীন-সমুদ্রে ভয়ঙ্কর ঝড় উঠে, জাহাজ ডুবুডুবু হয়, ফাহিয়ান বুদ্ধদেবের স্তব করিতে আরম্ভ করিলেন ও ঝড় থামিয় গেল। তাহার পরও তাম্রলিপ্তি হইতে চীন ও জাপানে জাহাজ ঘাইত শুনা যায়। কিছুদিন পর হইতেই স্বমাত্রা, জাব, বালি প্রভৃতি দ্বীপে ভারতবাসীরা যাইয়া বাস করেন এবং তথায় শৈব, বৈষ্ণব ও বৌদ্ধ ধৰ্ম্ম প্রচার করেন। কিন্তু তাহার কলিঙ্গ ও ভরুকচ্ছ হইতেই গিয়াছিলেন, তাম্রলিপ্তি হইতেও যাওয়ার সম্ভব, কিন্তু এখনও তাহার কোন প্রমাণ পাওয়া যায় নাই। ব্ৰহ্মদেশের প্রাচীন বৃত্তান্তে লেখা আছে যে, মগধ হইতে অনেকবার লোকে যাইয়া । ব্ৰহ্মদেশ দখল করে ও তথায় সভ্যতা বিস্তার করে। ড্র সেল সাহেবের রিপোটো প্রকাশ ষে, পেগানে বহু পূৰ্ব্বে মগধ হইতে লোকজন গিয়াছিল ও তথায় ভারতবর্ষের ধৰ্ম্ম প্রচার করিয়াছিল। কালিদাস বলিয়া গিয়াছেন, বাঙ্গুলার রাজারা নৌকা লইয়া যুদ্ধ করিতেন। পালরাজাদের যে যুদ্ধের জন্য অনেক মোক থাকিত, সে বিষয়ে আর সন্দেহ নাই। থালিমপুরে ধৰ্ম্মপালের যে তাম্রশাসন পাওয়া গিয়াছে, তাহাতে ধৰ্ম্মপালের যুদ্ধের জন্য অনেক নৌকা প্রস্তুত