পাতা:প্রবাসী (পঞ্চবিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৬৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

&e প্রবাসী—বৈশাখ, ১৩৩২ { ২৫শ ভাগ, ১ম খণ্ড । মুক্তির বাপ নিৰ্ব্বংশ হোক। হিন্দুর এই দার্শনিক আদর্শ . আহসারে প্রতিবাসীর ধৰ্ম্মমত লইয়া মস্তিষ্ক আলোড়ন করা পগুপ্ৰম মনে হওয়ারই কথা। ধৰ্ম্মগত ঐক্যপ্রস্থত শহাইস্কৃতি এক্ষেত্রে বিকাশের অবসর লাভ করিতে পারে না । এস্থলে হিন্দুর উদাসীনতার আর-একটি হেতু এই যে, জাতিভ্ৰষ্ট হিন্দুর স্বধর্শ্বে পুনঃপ্রতিষ্ঠা এতকাল একেবারেই অসম্ভব ছিল। ব্রাত্যদোষ অলঙ্ঘনীয় ও ঘুরপনেয়, কিছুতে সে কলঙ্কের কালিমা মুছিবার নয়, বিগত কয়েক শতাব্দী খাবৎ এই মতই হিন্দু-সমাজে উত্তরোত্তর প্রবল হইয়া উঠিতেছিল। হিন্দু একবার অহিন্দু হইলে চিরকাল তাহাকে অহিন্দু থাকিতে হইবে, ধর্শ্বচু্যত হিন্দুর পক্ষে পুনরায় হিন্দু-সমাজে স্বাধিকার-লাভকল্পনার অতীত বলিয়া বিবেচিত হইয়া আসিতেছিল। স্বতরাং একবার পাতিত্য দোষ ঘটিলে তাহা লইয়া বাদামুবাদ নিতান্তই সময়ের অপব্যবহার, সে সম্বন্ধে চিস্তা করা একেবারেই নিরর্থক । কারণ পতিত যে, সে চিরকালই পতিত থাকিবে, হিন্দুসমাজ কিছুতে তাহাকে পুনগ্রহণ করিতে পারে না । এই যখন হিন্দু-সমাজের সনাতন রীতি, তখন স্বধৰ্ম্মভ্ৰষ্ট ব্যক্তির সম্বন্ধে ঔদাসীন্যই বুদ্ধিমানের ব্যবস্থা। হিন্দুসমাজে ইহাই সনাতন রীতি কি না, পরে দেখা যাইবে । আপাততঃ দেখা যাউক, যৌন আসক্তি ব্যতীত আর কি-কি কারণে সচরাচর হিন্দু স্বধৰ্ম্ম পরিত্যাগ করিয়! ধৰ্ম্মান্তর গ্রহণ করিয়া থাকে। আদমসুমারির বিবরণে জানা যায়, নিম্নশ্রেণীর হিন্দুগণের ধৰ্ম্মান্তর গ্রহণের প্রধান হেতু ব্রাহ্মণাদি উচ্চবর্ণের তুচ্ছ তাচ্ছিল্য, ঘৃণা, এবং স্থলবিশেষে নিপীড়ন। নিম্নস্তরস্থ হিন্দুর পক্ষে অবস্থা পরিবর্তন দ্বারা সমাজে উচ্চস্থান গ্রহ৭ একরূপ অসম্ভব । স্বীয় জাতির গণ্ডী অতিক্রম করিয়া সে কখনো উচ্চবর্ণের সম্মানিত আসনের দাবি করিতে পারে না। যোগ্যতাকে একেবারে ঠেকাইয়া রাখা যায় না, হিন্দুও তাহ পারে নাই, তবে তাহার স্থায্য প্রাপ্য হইতে অনেকটা বঞ্চিত করিয়াছে। মুসলমান-সমাজ সাম্যের আদর্শে গঠিত, খৃষ্টীয় সমাজে যোগ্যতার সমাদর আছে। চর্শ্বকার প্রভৃতি হিন্দুসমাজের সৰ্ব্বনিম্নস্তরের জাতিসমূহের মধ্যে যেরূপ ব্যাপকভাবে খৃষ্টধৰ্মগ্রহণের হুজুগ দেখা দিয়াছে, হিন্দুধর্শ্বে থাকিয়! তাহাদের সামাজিক মৰ্য্যাদা লাভের অসম্ভাব্যতা ও হীন বর্ণ বলিয়া তাহাদের প্রতি উচ্চ-বৰ্ণসমূহের দুগুঞ্চ উহার প্রধান হেতু । যোগবাশিষ্ঠ রামায়ণ জীব ও ব্রহ্মের অভেদ প্রতিপাদক জনসাধারণের বোধগম্য ভাষায় লিখিত বৈদাস্তিক গ্রন্থ। সেখানেও চণ্ডালের প্রতি যে বিজাতীয় ঘূণা জন্মান্তরবাদের দৃষ্টান্তগুলির মধ্য দিয়া স্থপরিস্ফুট হইয়া উঠিয়াছে, তাহাতে মনে হয় অবনতজাতিসমূহের আত্মসন্মানবোধ জাগরিত হইলে হিন্দুদর্শনের সাহায্যে তাহাদের স্বধৰ্ম্মে আস্থারক্ষা করা সহজ হইলে না । শুভ্রাদির বেদে অনধিকার সম্বন্ধে বেদাস্তাচাৰ্য্য মহাত্মা শঙ্করের মতবাদ ও মোটেই উদার নহে। ভাবরাজ্যে ও পারলৌকিক ক্ষেত্রে আর্ধ্যদর্শন পরম উদার হইলেও লৌকিকক্ষেত্রে জাতিভেদের দৃঢ়নিগড়ে আবদ্ধ। সুতরাং হিন্দুজাতির এক-একটি সমগ্ৰ উপবিভাগের মধ্যে, খৃষ্টধর্মের দ্রুত বিস্তারে আশ্চর্য্যের বিষয় কিছুই নাই। এই অগ্রসরের বেগ যে কত দ্রুত, তাহা IDr. Maurice T. Price ofte Christian Missions and Oriental Civilization—A Study in Culture-contact ains গ্রন্থ হইতে জানা যায়। এক পঞ্চনদ প্রদেশে ১৮৯৫ খৃষ্টাব্দে ৪,• • • অবনত হিন্দু খৃষ্টধৰ্ম্ম গ্রহণ করে ; ১৯৭১ সালে ৩৭,০০০, ১৯১১ সালে ১৬৩,০•• হিন্দু খৃষ্টান হয় । ইলোর প্রদেশে দশ বৎসরে দেশীয় খ্ৰীষ্টানদিগের নিকট হইতে মিশনরিদের আয় ৪•••২ টাকা হইতে ২১,• • •২ টাকায় বর্ভুিত হইয়াছে। তথাকথিত অস্ত্যজজাতীয় হিন্দুদের মধ্যেই এই মিশনরিগণ সমধিক কৃতকাৰ্য্যত লাভ করিতেছেন। প্রথমতঃ দুইচারিজন করিয়া খ্ৰীষ্টধৰ্ম্ম গ্রহণ করিত, পরে দশে-দশে, শতে-শতে করিত, অবশেষে হাজারে-হাজারে করিতেছে, এবং এক-একটি সমগ্র গ্রাম যিশুখ্ৰীষ্টের ধৰ্ম্মে দীক্ষিত হইবার জন্ত প্রার্থী হইতেছে । At first the baptisms were by units, thon tens and hundreds and then, at last, by thousands, and even whole villages came forward and asked to be enrolled in the Christian Church.”