পাতা:প্রবাসী (ষট্‌ত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/১০০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

Ե-Յ এই জলে মানবগণ নিত্য প্রীতি লাভ করুক, ভূমিগ ও খগগণ প্রীতি লাভ করুক, লতা বনস্পতি বৃক্ষ ও জলবাসা জীবগণ সকলেই তৃপ্তি লাভ করুক । কীট পতঙ্গ ও অন্য যে সব দৃষ্ট ও অদৃষ্ট প্রাণী, যাহারা জন্মলাভ করিধাছে ও জন্মলাভ করিবে এমন সৰ্ব্ব জন্তুই এই জলে প্রীতিলাভ করুক । প্রবাসী $N98Nరి পুষ্করিণীকে প্রণতি শুভা; সুভদ্ৰাং পুষ্টিং ত্বং প্রাণদাং পদ্মমালিনীম্। সৰ্ব্বশাস্তিং নমস্কুমঃ সৰ্ব্বকল্যাণকারিণীম্। শুভ, সুভদ্রা, পোষণদায়িনী, প্রাণদা, পদ্মমালিনী, সব শাস্তিপ্রদী, সৰ্ব্বকল্যাণকারিণী (পুষ্করিণীকে) আমরা নমস্কার করি । অভিভাষণ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর আজকের অল্পষ্টানসূচির শেষভাগে আছে আমার অভিভাষণ । কিন্তু যে-বেদমন্ত্রগুলি এইমাত্র পড়া হ’ল, তার পরে আমি আর কিছু বলা ভাল মনে করি না । সেগুলি এত সহজ এমন স্বন্দর এমন গম্ভীর যে তার কাছে আমাদের ভাষা পৌছয় না । জলের গুচিত, তার সৌন্দর্য্য, তার প্রাণবত্তার অরুক্ৰিম আনন্দে এই মন্থগুলি নিৰ্ম্মল উৎসের মত উৎসারিত । আমাদের মাতৃভূমিকে স্থজল সুফলা ব’লে স্তব করা হয়েছে। কিন্তু এষ্ট দেশেই যে-জল পবিত্র করে সে স্বয়ং হয়েছে অপবিত্র পঙ্কবিলীন, যে করে আরোগ্য বিধান সে-ই আজ রোগের আকর ৷ ছাৰ্ভাগ্য আক্রমণ করেছে আমাদের প্রাণের মূলে, আমাদের জলাশয়ে, আমাদের শস্তক্ষেত্রে। সমস্ত । দেশ হয়ে উঠেছে তুযাওঁ মলিন রুগ্ন উপবাসী। ঋষি বলেছেন— হে জল, যেহেতু তুমি আনন্দদাতা, তুমি আমাদের অন্নলাভের যোগ্য কর । সৰ্ব্ববিধ দোষ ও মালিন্ত দূরকারী এই জল মাতার হ্যায় আমাদের পবিত্র করুক —জলের সঙ্গে সঙ্গে আমাদের দেশ আনন্দের যোগ্যতা, অন্নলাভের যোগ্যত, রমণীয় দৃপ্তলাভের যোগ্যতা প্রতিদিন হারিয়ে ফেলছে। নিজের চারি দিককে আমলিন অল্পবান অনাময় ক’রে রাখতে পারে না যে বর্বরতা, তা রাজারই হোক আর প্রজারই হোক, তার গ্লানিতে সমস্ত দেশ লাঞ্ছিত । অথচ একদিন দেশে জল ছিল প্রচুর, আজ গ্রামে গ্রামে পাকের তলায় কবরস্থ মৃত জলাশয়গুলি তার প্রমাণ দিচ্ছে, আর তাদেরই প্রেত মারীর বাহন হয়ে মারছে আমাদের । দেশে রাজনৈতিক প্রচেষ্টা ও রাষ্ট্রচিন্তা আলোড়িত। কিন্তু আমাদের দেশাত্মবোধ দেশের সঙ্গে আপন প্রাণাত্মবোধের পরিচয় আজও ভাল ক'রে দিল না । অন্য সকল লজ্জার চেয়ে এই লজ্জার কারণকেই এখানে আমরা সবচেয়ে দুখকর বলে এসেছি । অনেক দিন পরে দেশের এই প্রাণান্তিক বেদন-সম্বন্ধে দেশের চেতনার উদ্রেক হয়েছে। ধরণীর যে অস্তঃপুরগত সম্পদ, যাতে জীবজন্তুর আনন্দ, যাতে তার প্রাণ, তাকে ফিরে পাবার সাধনা আমাদের সকল সাধনা গোড়ায়, এই সহজ কথাটি স্বীকার করবার শুভদিন বো হচ্ছে আজ অনেক কাল পরে এসেছে । - যে জলকষ্ট সমস্ত দেশকে অভিভূত করেছে তার সব চেয়ে প্রবল দুঃখ মেয়েদের ভোগ করতে হয়। মাতৃভূমির মাতৃত্ব প্রধানত আছে তার জলে,—তাই মন্থে আছে, আপো অম্মান মাতরঃ শুদ্ধয়স্তু। জল মায়ের মত আমাদের পবিত্র করুক। জলাভাবে দেশে যেন মাতৃত্বের ক্ষতি হয়, সেই ক্ষতি মেয়েদের দেয় বেদন । পদ্মাতীরের পল্লীতে থাকবার সময় দেখেছি চার পাচ মাইল তফাৎ থেকে মধ্যাহ্ন-রৌদ্র মাথায় নিয়ে তপ্ত বালুর উপর দিয়ে মেয়ের বারে বারে জল বহন ক’রে নিয়ে চলেছে । তৃষিত পথিক এসে যখন এই জল চায় তখন সেই দান কী মহাৰ্য্য দান। অথচ বারে বারে বন্য এসে মারছে আমাদের দেশকেই । হয় মরি জলের অভাবে নয় বাহুল্যে। প্রধান কারণ এই, যে, পলি ও পাকে নদীগর্ভ ও জলাশয়তল বহুকাল থেকে অবরুদ্ধ ও অগভীর হয়ে এসেছে। বর্ষণজাত জল যথেষ্ট পরিমাণে ধারণ করবার শক্তি তাদের নেই। এই কারণে যথোচিত আধার অভাবে সমস্ত দেশ দেবতার অষাচিত দানকে অস্বীকার করতে থাকে, তারই শাপ তাকে ডুবিয়ে মারে । আমাদের বিশ্বভারতীর সেবাব্রতীগণ নিজেদের ক্ষুদ্র সামর্থ্য অনুসারে নিকটবর্তী পল্লীগ্রামের . অভাব দূর করবার চেষ্টা করছেন। এদের মধ্যে এক জনের নাম করতে পারি প্রভাতকুমার মুখোপাধ্যায়। তিনি এই সম্মুখের