পাতা:প্রবাসী (ষট্‌ত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/২০৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

قف عضواخ জগদ্ধাত্রী-প্রতিমা ক্রমে ক্রমে বৃহৎ হইতে বৃহত্তর করিয়া বাজারের প্রতিমার সমান করা হইলে মোটের উপর তিনখানি বড় প্রতিমা হইল। ১৩৪১ সালে বাজারের চাউলপটার বারোয়ারির কর্তৃপক্ষের মধ্যে মতানৈক্য হওয়াতে চাউলপটার বারোয়ারি দুই ভাগে বিভক্ত হইয়াছে, অর্থাৎ বাজারে ছুইখানির পরিবর্তে তিনখানি বড় প্রতিমা হইতেছে। চন্দননগরে এই বারোয়ারিতে জগদ্ধাত্রী-পূজা এক শত বৎসরেরও পুরাতন। বাজারের বারোয়ারি পূজার চাদ ব্যবসায়ীরা নিজ নিজ লভ্যাংশ হইতে দিয়া থাকেন। যেখানেই বাজারে বারোয়ারি পূজা হয়, সেইখানেই এই উপায়ে অর্থ সংগৃহীত হয়। পূজার জন্ত পৃথক রক্ষিত ঐ লভ্যাংশ দেবতার ‘বৃত্তি' নামে অভিহিত হইয়া থাকে। বাগবাজারের বারোয়ারির উৎপত্তি সম্বন্ধে এক কৌতুককর ব্যাপার আছে। এক শত বৎসরেরও পূৰ্ব্বে, চন্দননগর বাগবাজারে ঈশ্বর দাস নামে এক স্বত্রধর বাস করিত। সে একটু কৃপণস্বভাব ছিল । তাহার বন্ধুরা তাহার কিছু অর্থব্যয় করাইবার উদ্দেশুে, জগদ্ধাত্রী-পূজার কয়েক দিন পূৰ্ব্বে, একটি ছোট জগদ্ধাত্রী প্রতিমা রাত্রিকালে ঈশ্বর দাসের বাটীতে রাখিয়া আসে। গুহস্বামীর অজ্ঞাতসারে তাহার বাটতে এইরূপ প্রতিমা রাখাকে লোকে “ঠাকুর ফেলা" বলে । কোন গৃহস্থের পাটীতে এইরূপ “ঠাকুর ফেলিলে।” গৃহস্থকে সেই ঠাকুর পূজা করিতে হয়, না করিলে পাপ হয় এবং চাই কি সেই গৃহস্থের অমঙ্গলও হইতে পারে, লোকের এইরূপ ধারণা ছিল । অশিক্ষিত ঈশ্বর দাস কিন্তু পাপের ভয় বা পারিবারিক দুর্ঘটনার আশঙ্কা না করিয়া সেই রাত্রিতেই প্রতিমাকে সন্নিহিত পুষ্করিণীতে বিসর্জন করিল, কেহই জানিতে পারিল না। পরদিন প্রাতঃকালে প্রতিমনিক্ষেপকারী বন্ধুরা যখন দেখিল যে, ঈশ্বর দাসের বাটতে প্রতিমা নাই, তখন তাহারা প্রতিমার আম্বেষণ করিতে লাগিল। অবশেষে সেই পুষ্করিণী হইতে সেই প্রতিমার কঙ্কাল অর্থাৎ খড়-জড়ান কাঠাম বাহির হইল। যাহারা ষড়যন্ত্র করিয়া প্রতিমা নিক্ষেপ করিয়াছিল, তাহারা, প্রতিমার পূজা না হইলে তাঁহাদেরই অমঙ্গল হইবে মনে করিয়া প্রত্যেকে কিছু কিছু চাদ দিয়া সেই প্রতিমার সংস্কার করিয়া পূজা করাইল। ইহার পর হইতে প্রতি বৎসরই বাগবাজারে বারোয়ারিতে জগদ্ধাত্রীপূজা হইয়া আসিতেছে। প্রৰণসী - sNesశ్రీ চন্দননগরে এই বারোয়ারি পূজা ব্যতীত আরও অনেকগুলি বারোয়ারি পূজা হইত। তন্মধ্যে গড়ের বাজারে রাজরাজেশ্বরী পূজাতেই সৰ্ব্বাপেক্ষ অধিক জাক হইত। এই পূজা উপলক্ষে গড়ের বাজারে কয়েক দিন ব্যাপী মেলা হইত। প্রতিমার সম্মুখে আটচালাতে তিন-চারি দিন যাত্রা, পাচালি, কবির লড়াই হইত। প্রতিমার উভয় পাশ্বে গ্যালারি বা বাশের মাচা বাধিয়া তাহার উপর দ্রৌপদীর স্বয়ম্বর, দময়ন্তীর স্বয়ম্বর, ইন্দ্রজিৎ-বধ, এবং কৃষ্ণলীলার বিবিধ দৃপ্ত পুতুল গড়িয়া দেখান হইত। সে-সকল পুতুল ছোট নহে, এক জন মানুষের আকৃতির সমান করিয়া নিৰ্ম্মাণ করা হইত। শুনিয়াছি কৃষ্ণনগর হইতে শিল্পী আনাইয়া ঐ সকল মূৰ্ত্তি নিৰ্ম্মাণ করা হইত। ঐ সকল পৌরাণিক বিষয় ব্যতীত, পথের ধারে ছোট ছোট দরমার ঘর বাধিয়া নানা প্রকার সামাজিক ব্যঙ্গচিত্রও পুতুল নিৰ্ম্মাণ করিয়া দেখান হইত। কোনটাতে এক জন নব্য যুবক, যুবতী পত্নীকে স্বন্ধে লইয়া বৃদ্ধা জননীর কেশাকর্ষণপূর্বক টানিয়া লইয়া যাইতেছে ; কোনটাতে একজন গণিকা একটা ভূপতিত মাতালের মুখে পদাঘাত করিতেছে, এইরূপ কত দৃশুই থাকিত। ঐ গড়ের বাজার নামক পল্লীতেই আমাদের স্কুল অবস্থিত ছিল। আমরা প্রত্যহ স্কুলে যাইবার সময় এবং স্কুলের ছুটির পর ঐ সকল সং দেখিবার জন্ত আধ ঘণ্টা তিন কোয়ার্টার দাড়াইয়া থাকিতাম। মনে আছে, এক বৎসর, চন্দননগরের একটা সামাজিক ব্যাপার ঐ বারেয়ারিতে সং গড়িয়া দেখান হইয়াছিল। চন্দননগর মানকুণ্ডার খা-বাবুরা বিশেষ ধনশালী ছিলেন। র্তাহারা ধৰ্ম্মামুরাগ ও দানের জন্য বিখ্যাত ছিলেন। কিন্তু তাহারা জাতিতে শৌণ্ডিক,সেই জস্তকোন সদব্ৰাহ্মণৰ্তাহাদের দ্বান গ্রহণ করিতেন না বা তাহাদের বাটতে জল গ্রহণ করিতেন না। র্তাহারা এক বার কি একটা কাৰ্য্য উপলক্ষে, রূপার ঘড়া বিতরণ করিয়াছিলেন। স্থানীয় কয়েক জন লোভী ব্রাহ্মণ, রূপার ঘড়ার লোভ সংবরণ করিতে না পারিয়া গোপনে সেই ঘড়া গ্রহণ করিয়াছিলেন। পরে সেই ব্যাপার প্রকাশ হইয়া পড়িলে সেই সকল ব্রাহ্মণকে সমাজচ্যুত করিবার চেষ্টা হয়। এক জন ব্ৰাক্ষণ-পণ্ডিতও নাকি সেই দান গ্রহণ করিয়া পরে বলিয়াছিলেন “উপটৌকনে দোষং নাস্তি”। পর বৎসর গড়ের বাজারে বারোয়ারিতে এই ঘটনা উপলক্ষে একটা সং দেওয়া হইলকয়েক জন ব্রাহ্মণ রূপার ঘড়া হাতে করিয়া দণ্ডায়মান জার