পাতা:প্রবাসী (ষট্‌ত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/২০৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

অগ্রহণয়ণ তাহাদের কোন আত্মীয়স্বজন হয়ত লেউস্মিথে অবরুদ্ধ হইয়াছেন। আমি দুই-এক জন সাহেবকে জিজ্ঞাসাও করিয়াছিলাম যে, যখন র্তাহাদের কোন আত্মীয় বন্ধু অবরুদ্ধ হয়েন নাই, তখন র্তাহারা এত বিষণ্ণ হইয়াছেন কেন ? উত্তরে এক জন সাহেব বলিয়াছিলেন, লের্ডাস্মিথ শত্রুপক্ষের স্বারা অবরুদ্ধ হওয়াতে ইংরেজ জাতির মধ্যাদা ক্ষুণ্ণ হইতে বসিয়াছে, ইহাই তাহাদের বিষাদের কারণ ; যদি তাহার ভ্রাতা বা পুত্র যুদ্ধে নিহত হইতেন, তাহা হইলে বিষাদের পরিবর্তে গৌরব বোধ করিতেন। সেই সময় আমাদের vettfor f cuarta org (Mr. Dangerfield ) otros এক সাহেব কাৰ্য্যাধাক্ষ ছিলেন। তাহার মত খিটখিটে এবং বদমেজাজি লোক আমি অল্পই দেখিয়াছি ; আমরা কখনও তাহাকে হাসিতে দেখি নাই। অনেকের স্মরণ থাকিতে পারে যে বুয়ার-যুদ্ধের সময় “ইংলিশম্যান” সংবাদ পত্রের আপিস হইতে প্রত্যহ চারি-পাচ বার করিয়া ক্রোড়পত্র বা অতিরিক্ত সংখ্যা প্রকাশিত হইত। সেই সকল অতিরিক্ত সংখ্যায় কেবল তারযোগে প্রাপ্ত যুদ্ধের সংবাদ প্রকাশিত হইত। এক দিন দেখিলাম, আপিসের দ্বারবান একখান অতিরিক্ত সংখ্যা “ইংলিশম্যান” আনিয়া ভেন্‌জারফীল্ড সাহেবের হাতে দিয়া চলিয়া গেল। সেই অতিরিক্ত সংখ্যাগুলি থামের মধ্যে থাকিত ; সাহেব খাম ছিড়িয়া কাগজে দৃষ্টিপাত মাত্র এক বিকট গর্জন করিয়া এক প্রকাও লম্ফ প্রদান করিলেন এবং দৌড়াইয়া বড়সাহেবের কক্ষে প্রবেশ করিলেন। যাহার মুখে কখনও হাসি দেখি নাই বা যাহার মুখে কখনও মিষ্ট কথা শুনি নাই, সেই ভীষণদর্শন ডেনজারফীল্ড সাহেবের বালকোচিত চপলতা দেখিয়া আমরা বিশ্বয়ে অবাক হইলাম। ক্ষণকাল পরে অন্ত এক জন সাহেব বড়সাহেবের কক্ষ হইতে আসিয়া আমাদিগকে বলিলেন, “টেলিগ্রাম আসিয়াছে, লেউস্মিথ বুয়ারদিগের অবরোধ হইতে মুক্ত হইয়াছে। তাই বড়সাহেব আজ আপিস বন্ধ করিবার আদেশ দিয়াছেন, আপনার বাড়ী যান।” আমরা তখন মিঃ ডেনজারফীল্ডের গর্জন এবং উল্লম্ফনের কারণ বুঝিতে পরিলাম। আরও বুঝিলাম যে, জীবিত জাতির শোক বা আনন্দ বোধের যেরূপ শক্তি আছে, আমাদের মত স্বত জাতির তাহা নাই ; আমরা শোক প্রকাশ করিতেও সেকালের উৎসৰ SbsS জানি না, আনন্দ প্রকাশ করিতেও পারি না। তাই শোকসভাতে গিয়া পাশ্বে উপবিষ্ট পরিচিত লোকের সহিত খোসগল্প করি, আরউৎসবে যোগদান করিয়াও সাংসারিক অভাবঅভিযোগ, অশান্তির বিষয় আলোচনা করি । সেকালে বাঙালীর মধ্যে প্রাণ ছিল, তাই তাহাদের নানা প্রকার উৎসবও ছিল। পূৰ্ব্বেই বলিয়াছি যে সেকালে বারোয়ারি পূজার সংখ্যা অনেক অধিক ছিল, এবং প্রায় সকল বারোয়ারিতেই যাত্রা, পাচালি, কবি, তরজা প্রভৃতি হইত। অনেক স্থলে কথকতাও হইত। সেকালের যাত্রার মধ্যে একমাত্র গোপাল উড়ের দল ব্যতীত সকল যাত্রাতেই পৌরাণিক নাটকের অভিনয় হইত। দাশরথি রায়ের পাচালির মধ্যে দুই-চারিট পালা সামাজিক ব্যাপার অবলম্বনে রচিত, অবশিষ্ট সমস্ত পালাই পৌরাণিক ঘটনা অবলম্বনে লিখিত। কথকতার সমস্ত পালাই পৌরাণিক । এই সকল যাত্রা, পাচালি এবং কথকতার দ্বারা অশিক্ষিত জনসাধারণের মধ্যে যেরূপ উপদেশ এবং ধৰ্ম্মভাবের প্রচার হইত, সেরূপ আর কিছুতেই হইত না । সেকালের যে-কোন পল্পীগ্রামের অশিক্ষিত কৃষক বা শ্রমিক রামায়ণ-মহাভারতের গল্পাংশ মুখে মুখে বলিতে পারিত। এখন যেরূপ “শিশুরামায়ণ” “শিশুমহাভারতের” সাহায্যে বিদ্যালয়ের বালকবালিকাদের মধ্যে পৌরাণিক আখ্যান প্রচার করিবার চেষ্ট করা হইতেছে, সেকালে এরূপ ছিল না । যাত্রাওয়াল এবং কথকেরাই লোকশিক্ষক ছিলেন, তাহারাই অশিক্ষিত জনসাধারণের শিক্ষক ছিলেন। তাহাদের মুখে রামায়ণমহাভারতের কাহিনী শ্রবণ করিয়া সেকালের প্রাচীনপ্রাচীনারা বালক-বালিকাদিগকে রামায়ণ-মহাভারতের গল্প বলিয়া ঘুম পাড়াইতেন। স্থতরাং সেকালের উৎসবে যে কেবল “দীয়তাং ভূজ্যতাং” হুইত তাহ নহে, উৎসব উপলক্ষে যাত্রা এবং কথকতা দ্বারা লোকশিক্ষারও সহায়তা হইত, জনসাধারণের মধ্যে ধৰ্ম্মভাব প্রচারিত হইত। এই সকল যাত্রা এবং কথকতা প্রভৃতি প্রায়ই বারোয়ারিতলার আটচালায় হইত, কোন কোন স্থানে ধনবানদিগের বহিৰ্ব্বাটীর প্রশস্ত অঙ্গনেও যাত্রা বা কথকতা হইত এবং তাহার ব্যয়ভার গৃহস্বামীরাই বহন করিতেন, সেজন্ত গ্রামবাসীকে চাদ দিতে হইত না । বারোয়ারির আট