পাতা:প্রবাসী (ষট্‌ত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/২০৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

పాశ36 প্রবাসী >N&gN● চালাতেই হউক আর ধনবানের অঙ্গনেই হউক, যাত্রা বা কথকতা প্রভৃতি শ্রবণের জন্ত সকলের পক্ষেই অবারিতদ্বার ছিল ; যাহার ইচ্ছ, স্ত্রীপুরুষ, ইতরভত্রনির্বিশেষে সকলেরই তথায় গমনের অবাধ অধিকার ছিল। যাত্রা প্রভৃতি উপলক্ষে নিমন্ত্রণপত্র বা কাড ছাপান হইত না । যেখানে কথকতা হইত, সেখানেই কেবল ব্রাহ্মণ এবং শূত্রদের জন্ত পৃথক আসনের ব্যবস্থা হইত। কারণ, সকলের ধারণা ছিল যে, ব্রাহ্মণ এবং শুদ্রকে এক আসনে বসিয়া শাস্ত্রকথা শ্রবণ করিতে নাই। স্ত্রীলোকদিগের বসিবার স্থান পৃথক এবং চিকের অন্তরালে হইত। যাত্রা উপলক্ষে কোন কোন স্থানে চার-পাচ হাজার নরনারীর সমাগম হইত, কথকতা উপলক্ষে অবশু এত লোকের সমাগম হইত না। কথকতা কোন কোন স্থানে একাদিক্রমে এক মাস, তিন মাস বা ছয় মাস ধরিয়া হইত, সাধারণতঃ এক মাসের কমে কোথাও হষ্টত না। যাত্রা বড়জোর দুই দিন বা তিন দিন হইত। এক দিন যাত্রাতে যে অর্থব্যয় হইত, সেই অর্থে এক মাস কাল কথকতা হইতে পারিত। যাত্রা অপেক্ষা কথকতা ঘন ঘন হইত, কারণ কথকতা যে কেবল বারোয়ারি-তলাতে হইত তাহা নহে, অনেক মধ্যবিত্তশালী গৃহস্থের বাটতেও হইত। বাটতে রামায়ণ, মহাভারত বা শ্ৰীমৎভাগবত প্রভৃতি পুরাণের অন্তষ্ঠান করা সেকালের লোকে ধৰ্ম্মাচরণ বলিয়া মনে করিতেন ; এমন কি অনেক অনাথ দরিত্র বিধবা চরকায় স্থত কাটিয়া বা অন্তের বাটতে শ্রমসাধ্য কাৰ্য্য করিয়া যে অর্থ উপার্জন করিত, তাহার উদ্ধৃত অংশ “কথা” দিয়া ব্যয় করিত। অনেক স্থলে এরূপও হইত যে কোন গ্রামে এক জন কথক কোন গৃহস্থ কর্তৃক এক মাসের জন্ত নিযুক্ত হইলেন। সেই এক মাস অতীত হইতেনা-হইতে অন্ত এক গৃহস্থের কোন বৃদ্ধ প্রস্তাব করিলেন ষে আরও পাচ দিন কথকতা হউক, তিনি সেই পাচ দিনের ব্যয়ভার বহন করিবেন। আবার সেই পাচ দিন শেষ হইতে-নহইতে এক জন কৃষক, কথকঠাকুরকে আরও তিন দিন কথকতা করিবার জন্ত অনুরোধ করিলে আরও তিন দিন কথা হইল। এইরূপে অনেক সময় কথক-মহাশয়ের এক মাসের জন্ত কোন গ্রামে গমন করিলে তিন-চারি মাসের কমে সেই গ্রাম ত্যাগ করিতে পারিতেন না। যাত্র শুনিবার জন্ত মফস্বলে অনেক দূরবর্তী গ্রাম হইতেও লোকসমাগম হুইত, কিন্তু কথকতা শুনিবার জন্ত লোকে গ্রাম ছাড়িয়া অঙ্গ গ্রামে বড় যাইত না । সেই জঙ্ক, ষাত্রা অপেক্ষা কথকতার স্থানে লোকসমাগম অনেক অল্প হইত এবং শ্রোতাদের মধ্যে পুরুষ অপেক্ষ নারীর সংখ্যাই বেশী হইত। সেকালে কথকদিগের “উপরি-পাওনা” তাহাদের নির্দিষ্ট পারিশ্রমিক অপেক্ষ অনেক অধিক হইত। কথকদের পারিশ্রমিক সাধারণতঃ দৈনিক দুষ্ট টাকা হইতে তিন টাকা ছিল । কোন কোন খ্যাতনামা কথকের পারিশ্রমিক দৈনিক পাচ-সাত টাকাও ছিল । কিন্তু অধিকাংশ কখকের আয় উপরি-পাওনা হইতেই বেশী হইত। কথকেরা কথ কহিবার সময় মস্তকে ও গলদেশে পুষ্পমাল্য ধারণ করিতেন। কথা আরম্ভ হইবার পর কোন শ্রোতা, বেদীতে যৎকিঞ্চিৎ রজতথও অর্থাৎ টাকা দিয়া প্রণাম করিলে কথক-ঠাকুর স্বীয় মস্তকের বা গলদেশের পুষ্পমাল্য খুলিয়া আশীৰ্ব্বাণী-স্বরূপ সেই প্রণত ব্যক্তিকে প্রদান করিতেন । তাহার পরেও শ্রোতৃমণ্ডলীর মধ্যে অনেকেই টাক, আধুলি বা সিকি দিয়া কথককে প্রণাম করিত, কারণ, কখকের মুখে শাস্ত্রকথা বিনা দক্ষিণায় শুনিতে নাই, সেই জন্ত কথককে কিছু প্রণামী দিবার প্রথা ছিল । আমাদের কোন আত্মীয় এক মাস আশী হইতে এক শত টাকা পারিশ্রমিক লইয়া কথকতা করিতেন, কিন্তু তিনি সেই এক মাসে প্রায় দেড় শত টাকা প্রণামী পাইতেন। ইহার উপর বস্ত্র, অলঙ্কার, সিধা এবং মিষ্টান্ন যে কত পাইতেন তাহার সীমা ছিল না। এই সকল দ্রব্য কথকেরা অযাচিত উপহার রূপে পাইতেন । বস্ত্রহরণের দিন কথক-ঠাকুরকে বস্ত্র ( শাড়ী) দেওয়া, শ্ৰীকৃষ্ণের অন্নপ্রাশনের দিন বা শ্ৰীকৃষ্ণের অল্পভিক্ষার দিন, লক্ষ্মণ-ভোজনের দিন নানা প্রকার ভোজ্য সাজাইয়া সিধা দেওয়া এবং দুৰ্ব্বাসার পারণ দিনে নানাবিধ মিষ্টান্ন উপহার দেওয়া সকলে অবশুকৰ্ত্তব্য বলিয়া মনে করিত। গুনিয়াছি, কোন কোন ধনবতী মহিলা, কখক-ঠাকুরকে বেনারসী শাড়ী এবং নানা প্রকার অলঙ্কারে স্থসজ্জিত করিয়া বেদীতে বসাইয়া কথা শুনিতেন। বলা বাহুল্য যে, সেই সকল বস্ত্র ও অলঙ্কার কথক-ঠাকুরেরই প্রাপ্য হইত। যাত্র বা থিয়েটারে অভিনয় করা অপেক্ষা কথকতা করা