পাতা:প্রবাসী (ষট্‌ত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/২৩২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ఇSఆ শয্যা হইতেই চঞ্চল হইয়া বলেন, “বাল্পটা ওরই হাতে বার করে দাও না গা, যা পারে ওই দেবে থোবে ।” নীলের উপর সোনালী লাইন-কাটা হাত-বাক্সটা বাহির করিয়া দিয়া চন্দ্রকান্ত বলেন, “মা মণি, এবার তুমি মা, আমরা ছেলে, খাওয়া পরার ব্যবস্থা যা হয় করে৷ ” সুধা ঝিকে ভয়ে ভয়ে বলে, “কত দিতে হবে ?” কিসের যে কত দাম সে ত কিছু জানে না । ঝি হাত নাড়িয়া বলে, “টাকা একটা ফেলে দাও না, যা ফিরবে তা ত আর আমি খেয়ে ফেলব না ? হিসেব বুঝে নিও এখন। একটা পয়সাও যদি গরমিল হয়, তখন আমার গলায় গামছা দিয়ে আদায় ক’রে ” ঠিক রাধুনী এক গাল পান-দোক্তার রসে মুখ ভৰ্ত্তি করিয়া অল্প ই করিয়া অস্পষ্ট ভাষায় বলে, “দিদিমণি, যাহোক একটা কিছু কুটে কেটে দাও নাগ, স্বজুনি কি বাল ঝোল কিছু ততক্ষণ চড়াই।” মৃধা বঁটি পাতিয়া তরকারি কুটিতে বসে। ঝুড়ি ত শূন্ত। আলু আর পেয়াজ ছাড়া কিছু নাই। স্বধা কুটিয়া দিয়া বলে, “এইটে তত ক্ষণ পোস্ত দিয়ে রাধ ” রাধুনী ঝঙ্কার দিয়া উঠে, “হ্যা, ন’টায় ভাত দেব, আবার বসে ব’সে পোস্ত বাটব, এত আমার গতরে কুলোবে না। ও সব ছুটির দিনে হবে’খন। আজ আমনি ভাজাভুজি করে দি, বাবুকে আপিসে বেরোতে হবে ত!” স্থধা ভীতভাবে বলে, “আচ্ছ, আমি পোস্তটুকু বেঁটে দিচ্ছি, তুমি শুধু ভাজা দিয়ে বাবাকে ভাত দিও না। একটুখানি কেবল খোকাকে ধর । রাধুনী মুখটা ভার করিয়া বলিল, “এমন অনাছিষ্টি দেখি নি মা, আমি বামুনের মেয়ে, ছেলের ধাই হওয়া কি আমার কাজ ? দাও, পোস্তটা আজ আমিই বেঁটে নি, কাল থেকে ঝি মাগীকে বাজারে যাবার আগে বাটাঘসা সব ক’রে যেতে বলবে। উনি নবাবের নাতনী ক্ষবৃক্ষর ক'রে বাজার করতে চললেন, আর আমি মরি এখানে হাত পা ছেচে ।” চন্দ্রকান্ত তাড়াতাড়ি ভাত খাইয়া ইস্কুলে যাইবার সময় বলিয়া যান, “মামণি, তোমার মাকে দেখো । আর পিসিমাকে একটা চিঠি লিখতে ভুলো না।” চন্দ্রকান্ত চলিয়া ধান, স্বধা খোকাকে কোলে করিয়া জানালা হইতে দেখায়৷ "প্রবাসী ১ৎ - ঝি রাধুনীর তবু সয় না, বলে, “দিদিমণি, নেয়েখেয়ে নাও নাগা, আমাদেরও ত মানষের পেট, বাড়ী গিয়ে রেখে বেড়ে তবে ত খাব। এইথেনে এগারটা বাজিয়ে দিলে তোমার পেটে হাত বুলিয়ে কি আমাদের পেট ভরবে ?” স্থধা সন্ত্রস্ত হইয়া উঠে ; সে ইহাদের ভয় করে। ইহারা যেন ঠিক বন্য জন্তু, কখন কোন দিক দিয়া কি খুৎ ধরিয়া যে আক্রমণ করিবে তাহার ঠিক নাই । করুণা বির মত মমতা ইহাদের কাছে আশা করা যায় না, কিন্তু আর একটু কম প্রখর হইলে কি চলিত না ? স্বধার অবস্থা বুঝিয়া মহামায়া মাঝে মাঝে বলেন, “ষ্ট্যাগ, তোমরা সারাক্ষণ ছেলেমানুষের পিছনে টিক টিক কর কেন বল ত ? তোমরা যেন মুনিব, ওই যেন ঝি ” ঝি একহাত জিভ কাটিয়া বলে, “আমন কথা মুখে এনেন মা, কচি ছেলেকে শিখিয়ে পড়িয়ে তুলতে হবে ত, তাই বলি, নইলে কথা কিসের ? আমাদের ছোট লোকের গলা, মিষ্টি কথাও ক্যার ক্যার করে ।” সুধাকে বলে, “দিদিমণি, ম’ব কাছে লাগিয়েছিলে আমাদের নামে ? এই কলকেতা শহরে চোদ্দ বছর গতর খাটাচ্ছি, কেউ বলতে পারবে না যে ননীর মা কারুর এক আধলী চুরি করেছে কি কাউকে গাল মন্দ করেছে। তোমাদের সংসারের মাথা নেই, তাই পাচ রকম কথ কইতে হয়, সেটা কি আমার দোষ বাছা ?” স্বধা তর্ক করিতে ভয় পায়। দোষ যাহারই হউক, ননীর মা আর বামুনদি যদি সপ্তমে গলা তুলিয়া সকল দোষের জন্ত স্বধাকেই আসামা স্থির করিয়া দেয়, স্বধার ক্ষীণ কণ্ঠের আপত্তি সেখানে দাড়াইতে পারিবে না। তা ছাড়া হাতবেড়ি ঝর্ণটা বালতি আছাড় দিয়া তাহারা যদি সমস্বরে বলে, “দাও, আমাদের হিসেব মিটিয়ে দাও।” তাহা হইলে । স্থধা এ সংসার ঠেলিবে কি করিয়া ? বামুনদির অগ্নিবষিণী দৃষ্টি আর ননীর মা’র অমৃত-নিঃস্যন্দিনী বাণী বরং সহ করা যায়, কিন্তু খোকনের মুখে দুধ না উঠিলে, মা’র স্বানের জল না জুটিলে, শিবুর পেটে ভাত না পড়িলে সে সহ করিবে কেমন করিয়া ? কাজকে সে ভয় পায় না । কিন্তু এত কাজ একলা কি করা যায় ? খোকনকে কোলে করিয়া বসিতে হইলেই ত পৃথিবীর সব কাজ বন্ধ ? তৰু ত তাহারই