পাতা:প্রবাসী (ষট্‌ত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/২৩১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

-অঞ্জহাঙ্কণ মহামায়াকে বুঝাইতে গিয়া দিদির সঙ্গে খেলাধূলার তাহার আর সময়ই হয় না । মহামায়া বলেন, “বাপু, ছেলেটাকে তুমি ভাঙা বছরেই ইস্কুলে ভর্তি করে দাও, হাই-জম্প করে করে ত আমার বাক্স পেটরা সব গুড়িয়ে গেল, তার উপর আবার স্বধীনবাবু একটা তালের মত ফুটবল কিনে দিয়ে একেবারে সোনায় সোহাগা হয়েছে। পরের দরজা জানালা কাচ ভেঙে ষে নির্মুল কচ্ছে, তার দাম দেব কোথা থেকে ?” চন্দ্রকান্ত বলেন, “নিতে ত পারি আমাদেরই ইস্কুলে ; কিন্তু পাছে হেডমাষ্টারের ছেলের নমুনা দেখে ইস্কুল স্বদ্ধ বিগড়ে যায় তাই সাহস হয় না।” মহামায় বলিলেন, “তবে তুমি একটা ছাতুখোর পালোয়ান রেখে দাও, সকালে উঠেই সাত শ’ বার কান ধরিয়ে ‘উঠ, বোস করাবে, তাহলে আর ছেলের এত ধিঙ্গীপনা করবার জোর থাকবে না ।” শিবু বলিল, “ডনবৈঠক ত? তা করলে ত আমার আরও জোর বাড়বে। আজই রাখ না পালোয়ান ।” মহামায়া বলিলেন, “তবে তোকে একটা ঘানি গাছে যুতে দেব, আমার পয়সাও রোজগার হবে, জিনিষও নষ্ট হবে না।” শিবু বলিল, “আচ্ছ, তাই দিও, কিন্তু এখানে ঘানিগাছ বসাবার ত জায়গা নেই, তাহলে আবার নয়ানজোড়ে ফিরে যেতে হবে ।” বাড়ীতে প্রায় প্রত্যহই হাট-কোট-প্যান্ট-পরা নূতন নূতন ডাক্তার আসিতে আরম্ভ করিল। সঙ্গে তাহাদের দুই-তিনটা করিয়া চামড়ার ও ষ্টিলের বড় বড় বাক্স। একঘণ্টা ধরিয়া দরজা বন্ধ করিয়া তাহারা মহামায়াকে পরীক্ষা করে, যাইবার সময় প্রতিদিন সাবান গরম জল দিয়া হাত ধুইয়৷ পকেটে এক মুঠ টাকা পুরিয়া অনেকগুলা দুৰ্ব্বোধ্য কথা বলিয়া ও এক টুকরা সাদা কাগজে ওষুধ লিখিয়া হান্তমুখে ব্যস্ত দ্রুত গতিতে গাড়ীতে গিয় উঠে, কিন্তু মহামায়ার মুখ ক্রমশঃই শীর্ণ বিষণ্ণ হইয় আসে। একজন চিকিৎসকের কথামত দুই-এক সপ্তাহ বিছানায় গুইয়া থাকিয়া তিন-চার বোতল ঔষধ শেষ করিয়াও যখন মহামায়ার কোনও বাহ উন্নতি দেখা যায় না, তখন চন্দ্রকান্ত ক্লিষ্ট মুখে আরও একজন অলখ-বোরা_ হSক বিশেষজ্ঞকে লইয়া আসেন। এবারও সেই বড় বড় বাক্স, সেই হাত ধোয়া, টাকা গোনা, ঔষধ লেখা, বন্দিনী মহামায়াকে আরও বন্দীকরণ, কিন্তু কিছুই হয় না, অবশ অঙ্গ স্ববশে আসে না । মাথায় কড়া ইস্ত্রী করা সাদা রুমাল বাধিয়া স্বশুভ্ৰ বিলাতী পোষাক-পরা নস দিন কতক আনাগোনা করিয়া সাদা এনামেল-করা গামলা, ভুল, রবারব্যাগ, স্পঞ্জ, তোয়ালেতে ঘর ভরাইয়া দিল, ক্ষুদ্র রান্নাঘরে মাস খানেক খাওয়া-দাওয়ার চেয়ে গরম জলের আয়োজনই বেশী হইল, তবু মহামায়ার দুৰ্ব্বল অঙ্গে রক্তের জোয়ার ফিরিয়া আসিল না। কালে মোট হিন্দুস্থানী দাই চোখে দড়ি বাধা চশম ও গায়ে পেট বাহির-করা জামা পরিয়া দুই ঘণ্টা ধরিয়া প্রত্যহ মহামায়াকে তৈল স্নান করাইল, ঘরের মেঝে মাছর ও বালিশ তৈল-পঙ্কিল্প হইয়া উঠিল কিন্তু সেও মহামায়ার পদক্ষেপ অবাধ করিতে পারিল না। একখানি ঘরের একখানি মাত্র তক্তার উপর তাহার ওঠ-বসা, ঐ টুকুতেই র্তাহার অধিকার ক্রমে সঙ্কীর্ণতর হইয়া আসিতে লাগিল । ছোট খোকা আসিয়া হাত ধরিয়া টানে, “মা, পা পা, চল।” মা খোকাকে টানিয়া বিছানায় তুলিয়া লন। খোকার চঞ্চল দেহের সতেজ রক্তস্রোত তাহাকে স্থির থাকিতে দেয় ন, সে কোল ছাড়িয়া ছড় মুড় করিয়া মাটিতে নামিয়া পড়ে। মহামায়া বিছানা হইতেই তাহার জামার পিছনটা চাপিয়া ধরিয়া চীৎকার করেন, “স্বধী, স্বধী, ধৰ্ব দস্থ্যটাকে, আমায় স্বদ্ধ নইলে টেনে ফেলে দেবে।” স্বধা ছুটিয়া আসিয়া খোকাকে লইয়া যায়। মা’র ঘরে ডাক্তার নসের ভৗড়, এদিকে ইস্কুলের বেলা বহিয়া যায়, ঠিক ঝি উচু কুটি বাধিয়া লাল গামছা হাতে করিয়া বলে, “দিদিমণি, বাজারের পয়সা দাও নাগ, বাবুর আপিসের বেলা হয়ে গেল, উকুনে এতগুলো কয়লা পুড়ে থাক হয়ে যাবে, বামুন-দি বকে ভূত ঝাড়া করে দেবে।” পয়সা ত স্বধার কাছে থাকে না, নয়ানজোড়ের মত ধানের কারবারও নাই ষে যাহাকে তাহাকে এক পাই ধান ঢালিয়া দিয়া মাছটা দুধটা যোগাড় হইবে। সে গিয়া দরজার কাছে দাড়ায়। মহামায়া বুঝিতে পারেন কিসের প্রয়োজন,