পাতা:প্রবাসী (ষট্‌ত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৩৭৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

NOAO অর্থাৎ ১০ই সেপ্টেম্বরের মধ্যে বাদী আর কোন সাক্ষী হাজির করিতে পারিল না। স্বতরাং ১৫ই সেপ্টেম্বর সে আবার প্রার্থনা করিল তারিণী দেবী, জগন্নাথ মজুমদার, রাধানাথ চৌধুরী এবং রামনিধি পাল এই চারি জন দরকারী সাক্ষীকে (material witnesses) sffr, «FR urtarq-st Fāfstątą জন্ত আরও পনর দিন সময় দেওয়া হউক। এই তৃতীয় বারের চেষ্টার ফলেও বাদীপক্ষ কোন দরকারী সাক্ষী হাজির করিতে পারিল না। চতুর্থবার সময়চাহিতে সাহস করিল না। এখন জিজ্ঞাস্ত, বাদী গোবিন্দপ্রসাদের পক্ষের সাক্ষীরা জবানবন্দী দিল না কেন, এবং যে কয়জন জবানবন্দী দিল তাহারাও বাদীর দাবী সমর্থন করিল না কেন। এই প্রশ্নের সহজ উত্তর হইতে পারে, প্রতিবাদী রামমোহন রায় বাদীর মানিত সকল সাক্ষীকে বশীভূত করিয়াছিলেন। কিন্তু এইরূপ বণীকরণ অসম্ভব। আমরা কাগজ পত্রে দেখিতে পাইব, হীরারাম চট্টোপাধ্যায় এবং সভাচন্দ্র রায় জগমোহন রায়ের হিতকারী ছিলেন এবং সকল অবস্থাই জানিতেন। ইহাদের মত সাক্ষীকে বশীভূত করা সহজ নহে। অন্তান্ত সাক্ষী সম্বন্ধে বলা যাইতে পারে, তখন দলাদলি চলিতেছিল, এবং বাদী পক্ষ নিজের দলের লোকই সাক্ষী মানিয়াছিল। প্রতিবাদীর পক্ষে এককালে বেদলের এতগুলি লোককে বশীভূত করা সম্ভব মনে হয় না। গোবিন্দপ্রসাদ রায়ও দরকারী সাক্ষীগণকে হাজির করিবার জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করেন নাই। যে সাক্ষী সপিনা পাইয়া হাজির না হয়, তাহাকে হাজির করিবার জন্ত মাল ক্রোক করিবার নিয়ম ছিল । ১৮১৯ সালের ১৭ই জুন স্থপ্রিম কোটের রেজিষ্ট্রার সার্টিফিকেট দাখিল করিয়াছিলেন ষে রামতন্থ রায়, হীরালাল চট্টোপাধ্যায়, তারিণী দেবী, বিপ্রপ্রসাদ রায়, এবং সভাচন্দ্র রায়ের বিরুদ্ধে মাল ক্রোকের পরোয়ানা বাহির করা হয় নাই। অন্ত কোন সাক্ষীর বিরুদ্ধে যে ক্রোকের পরোয়ানা বাহির করা হইয়াছিল তাহারও প্রমাণ নাই। যথাযোগ্য তদ্বিরের অভাবই সাক্ষীগণের গরহাজিরের প্রধান কারণ। গোবিন্দপ্রসাদ রায়ের মানিত সাক্ষীগণের জবানবন্দী না দেওয়ার আর এক কারণ হইতে পারে, বেচারাম সেন প্রভৃতি বাদীর যে চারিজন সাক্ষী জবানবন্দী দিয়াছিল তাহদের মত বাদীর অন্তান্ত সাক্ষী ও বাদীর দাবী সমর্থন করিতে প্রস্তুত ছিল না ; অর্থাৎ তাহারা প্রৰণসী মনে করিত, বাদীর দাবী সমর্থন করিতে গেলে মিথ্য কথা বলিতে হয় ; তাহারা মিথ্য সাক্ষ্য দিতে প্রভত ছিল না । বাদীর মাতামহী তারিণী দেবীও সাক্ষী দিলেন না। তাহাকে জেরার জন্ত দাখিল করা প্রশ্নে রামমোহন রায়ের পক্ষে ইজিত করা হইয়াছে, তিনিই বাদীর দ্বারা মোকদমা করাইয়াছেন। তবে তিনি কেন সাক্ষী দিতে সন্মত হইলেন না ? এদেশে এখনও অনেক হিন্দুর সংস্কার অাছে, একান্নবৰ্ত্তী পরিবারভুক্ত কোন ব্যক্তিবিশেষের উপার্জিত এবং নিজ নামে খরিদ-করা সম্পত্তির অংশ ঐ পরিবারভুক্ত অস্তান্তেরও প্রাপ্য। সম্ভবতঃ এই ধারণার বশবর্তী হইয়া, স্বধৰ্ম্মত্যাগী পুত্রকে শাস্তি দিবার জন্ত, তারিণী দেবী এই মোকদমা করাইয়াছিলেন। কিন্তু মোকদ্দমার আর্জিতে গোবিনাপ্রসাদ রায়ের দাবী প্রতিষ্ঠিত করিবার জন্ত যে সকল কথা লিখিত হইয়াছিল তাহা বোধ হয় তিনি ভাল করিয়া বুঝিতে পারেন নাই। যদি তারিণী দেবী অার্জির কথা ঠিক বুঝিতে পারিতেন, এবং তদনুসারে সাক্ষ্য দেওয়াইতে চাহিতেন, তবে তিনি বাদীর সাক্ষী অভয়চরণ দত্তকে বলিতেন না, “রামমোহন রায় রামতম রায়ের এবং গঙ্গাধর ঘোষের নিকট হইতে গোবিন্দপুর এবং রামেশ্বরপুর তালুক খরিদ করিয়াছিলেন” ; তিনি বলিতেন, “র্তাহার স্বামী রামকান্ত রায় এই দুইখানি তালুক পুত্র রামমোহন রায়ের নামে বিনামায় খরিদ করিয়াছিলেন।” পূৰ্ব্বোঙ্কত বেচারাম সেনের জেরার প্রশ্নে দেখা যায়, প্রতিবাদী পক্ষ মনে করিত, এই মোকজমায় বাদীপক্ষের প্রধান মন্ত্রণাদাতা ছিল কুমারসিংহ চৌধুরী। এক শ্রেণীর দায়িত্বজ্ঞানশূন্ত দুষ্ট স্বভাব মোকদ্দমার দালাল আছে, যাহাদের ব্যবসাই হইতেছে কোন প্রকারে মামলা বাধাইয়া দিয়া টাকা উপায় করা। কুমারসিংহ চৌধুরী বা আর কোন পালাল গোবিন্দপ্রসাদের আৱির মোসাবিদার উপদেষ্ট ছিল। গোবিন্দপ্রসাদ যাহাদিগকে সাক্ষী মাস্ত করিয়াছিল তাহাদের মধ্যে অধিকাংশ লোকই বোধ হয় জাজির মূল কথা বুঝিতে পারিত না, এবং আদালতে হুলপ করিয়া মিথ্য সাক্ষী দেওয়ার অভ্যাস ছিল না। তাহারা আসিয়া সাক্ষ্য দিল না। গোবিন্দপ্রসাদের দাবী প্রমাণিত হইল না। তাহার ষে কয়জন সাক্ষী জবানবী জিতে দাড়াইল, তাহারাও বিরুদ্ধ কথা বলিয়া ফেলিল। • প্রবাসী,১৩৪৩, জাহারণ, ২৬৬ ו ני