পাতা:প্রবাসী (ষট্‌ত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৩৯৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

\eg প্রবাসী ১৩৪৩ শুভ্রাংগু মুখে এক প্রকার শব্দ করিয়া বলিয়া উঠিল, বড্ড কাহিল হয়ে পড়েছেন যে আপনি। আমি কোথায় ভাবতে ভাবতে এলুম যে, মিষ্টর বিয়েতে আপনাকে ধরে নিয়ে বাব—দিনকয়েক আগের মত হৈ হৈ করব, আর এই সময় আপনি—একটু থামিয়া পুনশ্চ কহিল, তাছাড়া আপনার রামার আমি একজন কত বড় ভক্ত ছিলাম তা নিশ্চয় আপনি ভোলেন নি, সেদিক থেকেও এক প্রচণ্ড লোকসানের মধ্যে পড়ে গেলাম। কিন্তু অস্থখটা কি ? বলিয়া শুভ্রাংগু স্বশাস্তর প্রতি মুখ ফিরাইল । —ওঘরে চল—স্থশাস্ত কহিল। রাণীর মুখে মান ক্ষীণ হাসি । পাছে রাণীর স্বমুখেই শুভ্রাংশু একটা কাও করিয়া বসে এই আশঙ্কায় স্বশাস্ত চঞ্চল হইয়া উঠিল। বাহিরের ঘরে আসিয়াও শুভ্রাংশু একই প্রশ্ন করিল। নির্লিপ্ত গলায় স্থশাস্ত কহিল, যক্ষ্মা । যক্ষ্মা | শুভ্রাংশু চমকিত হইল। বলিল, অথচ একে নিয়ে এমন সহজ ভাবে মাখামাথি করছ ? কোন স্বাস্থ্যকর জায়গায় পাঠালেও ত পারতে ? —ইচ্ছে করলেই পারতাম না-পয়সার অভাব, তা ছাড়া তোমার বৌদির অন্তৰ যাবার ইচ্ছে নেই। ওর মতে আমার তাতে অস্থবিধের শেষ থাকবে ন-স্বশাস্ত কহিল । —তার মানে ? উনি ত একেবারেই বাতিল হয়ে গেছেন। ওঁর সংসৰ্গও যে প্রত্যেক মানুষের কাছে ছুষ্ট। শুভ্রাংগু ঈষৎ উষ্ণ কণ্ঠে উত্তর করিল। স্বশাস্ত মান হইয়া উঠিল। একটু আস্তে কথা বল গুঞ্জ, রাণী শুনতে পাবে। একটু থামিয়া একটু হাসিয়া সে পুনরায় কহিল, আমার কথা আলাদ, সাত-আট দিন পূৰ্ব্বেও আমি ওরই হাতের রান্না খেয়েছি। গুস্ৰাংগু উত্তেজিত কণ্ঠে কহিল, খুব বাহাদুরি করেছ—এ যে কতবড় ছোয়াচে রোগ তা বুঝবার মত বয়স এবং অভিজ্ঞতা তোমার নিশ্চয় হয়েছে। স্বশাস্ত শাস্ত সংষত কণ্ঠে কহিল, সে কি আমি বুঝি না, কিন্তু তবুও দেখ, সকলেই আমায় উপদেশ দিতে আসে। তোমাদের মত স্বল্প বিচার-লিঙ্গ যদি আমার না-থাকে তা বলে জামায় অবিচার করো না। আমার সব চেয়ে বড় দুঃখ যে সকলেই আমায় ভুল করে—তারা বোঝে না যে ওকে সামান্ত অবহেলা করতেও জামি কত বেশী ব্যথা পাই। একটু থামিয়া স্থশাস্ত কহিল, রাণীর কথা তুমি ছেড়ে দাও শুভ্ৰ—মরণের যাত্রী, কটা দিন আর বেঁচে জাছে । আমাদের প্রথম পরিচয়ের দিনে তোমার বৌদির কোন অস্তিত্বই ছিল না। মনে কর আজও কেউ নেই—কেবল তুমি আর আমি মুখোমুখি বসে গল্প করছি। রাণীকে নিয়ে অনৰ্থক তোমরা ব্যস্ত হয়ে ন-এ আমার অনুরোধ । অত্যধিক উত্তেজিত কণ্ঠে শুভ্রাংগু কহিল, বিয়ে শুধু তুমিই কর নি—আমরাও করেছি। স্বশাস্ত নীরব। শুভ্রাংশু অপেক্ষাকৃত সংযত কণ্ঠে কহিল, না-হয় মেনে নিলাম সকলেই জন্তায় করছে, কিন্তু এর থেকে এক সময় তুমি নিজেও ষে আক্রান্ত হতে পার সে-কথা একবার ভেবে দেখেছ কি ? স্বশাস্ত উদাসীন চোখে বাহিরের দিকে চাহিয়া রহিল এবং সেই দিকে দৃষ্টি রাখিয়াই কহিল, আমি স্থবিধেবাদী নই। তা ছাড়া ভেবে দেখেই বা লাভ কি ? শুভ্রাংশু জিজ্ঞাস্থ দৃষ্টিতে চাহিয়া রহিল। স্বশাস্ত বলিয়া চলিল, যাকে তোমরা এড়িয়ে চল আমি তাকে কোল দিয়েছি । আমার স্ত্রীর ব্যাধি আমাকেও আক্রমণ করেছে। শুভ্রাংগু ক্ষণকালের জন্ত স্তন্ধ হইয়া গেল এবং পর মুহূর্ভেই তীয় ব্যঙ্গোক্তি করিয়া উঠিল, স্ত্রীর কালব্যাধিটাও তোমার আধাআধি ভাগ করে না নিলে চলত না এমনি পীভক্তি । —তুমি ঠাট্টা করছ শুভ্ৰ, কিন্তু আমার মত অবস্থায় পড়লে বোধ হয় প্রত্যেক মানুষই এ-কাজ করে থাকে। রাণীর জন্তে আমি যা করেছি এবং করছি তা মোটেই বেশী নয়। সবাই ওকে ত্যাগ করেছে—তুমিও বাবার জন্তে ব্যস্ত হয়ে উঠেছ। আমি তোমাকে দোষ দিই না, কিন্তু যে ওর দেহের চাইতে অস্তরের সমাদর করতে চায়, তাকে অন্তত তোমাদের উপহাসের সীমার বাইরে সরিয়ে রেখো। শুভ্রাংগু বারেকের তরে একবার তার হাত-ঘড়ির উপর