পাতা:প্রবাসী (ষট্‌ত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৫১২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ইহার অর্থ এই নহে যে ‘খ’ নোটে ও মুত্রায় এক লক্ষ টাকা ব্যাঙ্ক হইতে তুলিয়া বাড়ী লইয়া যাইবে। আধুনিক কালে ঋণ করিয়া কেহই নগদ অর্থ নিজ গৃহে লইয়া যায় না। সেই অর্থ দ্বারা ব্যাঙ্কেই আমানতী হিসাব খোলা হইয়া থাকে। এই কারণে ব্যাঙ্ক যত টাকা ঋণ দান করে প্রায় সেই টাকাই ডিপোজিট হিসাবে ফিরিয়া পায় এবং এইরূপে ঋণের টাকা ও আমানত টাকা বৃদ্ধিপ্রাপ্ত হয়। ইতিপূৰ্ব্বে ব্যাঙ্কের হিসাবে দেনার ঘরে যে ১০,০০০ টাকা আমানত দেখান হইয়াছে তন্মধ্যে এক হাজার টাকাই প্রকৃত ক্যাশ আমানত, বাকী নয় হাজার টাকা শুধু ‘পেপার আমানত ; ফেটাকাটা ‘ক’, ‘খ’, ‘গ’, ‘ঘ’-কে ধার দেওয়া হইয়াছে ( পাস-বই ও চেক-বই মূলে ), তাহাই আমানতক্ষপে ব্যাঙ্কের হিসাবে জমা পড়িয়াছে। ধারও যেমন নগদ দেওয়া হয় নাই, তেমনই অামানতের টাকাও নগদ পাওয়া যায় নাই। সুতরাং যেমন নোটের বেলা তেমনই চেকের বেলায়ও ব্যাঙ্ক নগদ মাত্র হাজার টাকা সম্বল করিয়া স্বচ্ছন্দে নয় দশ হাজার টাকা স্বাদন করিতে পারিতেছে। এখানে কথা উঠতে পারে, আমি যে টাকা ধার করিব, তাহার সমস্তটাই যে ব্যাঙ্কে ফেলিয়া রাখিব তাহার নিশ্চয়তা কি ? ঠিক কথা। কিন্তু আমি যেমন আমার প্রয়োজনমত চেক দ্বারা টাকা তুলিয়া লইয়া আমার পাওনাদারকে দিব এবং তিনি উহা তাহার ব্যাঙ্কে জমা দিবেন, তেমনই আবার অপরের দেওয়া অন্ত ব্যাঙ্কের চেকও ত আমার ব্যাঙ্কে আসিয়া জমা হইবে । সুতরাং হরেদরে বিভিন্ন ব্যাঙ্কের মধ্যে চেকেরই আদানপ্রদান হইবে বেশী, নগদ টাকার প্রয়োজন অতি সামান্তই হইবে। ক্যাশ তহবিল ও দাদন অবগু এখানে একটা কথা তুলিলে চলিবে না। বর্তমান সময়ে নগদ টাকার ব্যবহার ও প্রয়োজন হ্রাস পাইয়াছে সত্য, কিন্তু একেবারে উঠিয়া যায় নাই। দশ হাজার টাকা আমানতের জন্ত হয়ত এক হাজার টাকার অধিক ক্যাশ তহবিল আবশ্বক হয় না। কিন্তু বিশ হাজার টাকা অামানত স্বলে, অন্ততঃ দুই হাজার টাকার নগদ দাবী মিটাইবার প্রয়োজনও ব্যাঙ্কের হইবে না, এইরূপ মনে করিবার সঙ্গত কারণ নাই। সেই জম্ভ নগদ তহবিলের প্রতি দৃষ্টি না রাখিয়া ইচ্ছামত ধার দিয়া আমানত বৃদ্ধি করা মোটেই নিরাপদ নহে । তাহা করিতে গেলে, নগদ তহবিলের অনুপাতে অত্যধিক নোট স্বাক্ট করিয়া ব্যাঙ্কগুলি যেমন এক কালে বিপদগ্রস্ত হইয়াছিল, এ-ক্ষেত্রেও সেইরূপ ঘটিবার সম্ভাবনা হইবে। তাই, কি পরিমাণ নগদ তহবিল রাখিয়া কত টাকা ধার দেওয়া যাইতে পারে, সাধারণ অভিজ্ঞতা হইতে ব্যাঙ্কগুলি তাহার একটা সীমা নির্দেশ করিয়া লইয়াছে। বিলাতী ব্যাক্ষগুলি সাধারণতঃ গচ্চিত অর্থের এক-দশমাংশ নগদ তহবিলে রাখিয়া নয়-দশমাংশ ধার দিয়া থাকে। অর্থাৎ আমানত যদি দশ হাজার টাকা হয়, তাহা হইলে নগদ এক হাজার টাকা হাতে রাখিয়া নয় হাজার টাকা পৰ্য্যস্ত ব্যাঙ্ক ধার দিতে পারে। ভাষাস্তরে মাত্র এক হাজার টাকার ক্যাশ আমানত সম্বল করিয়া ব্যাঙ্ক নয় হাজার টাকা দাদন দিতে ও নূতন আমানত স্বষ্টি করিতে পারে। সাধারণ অবস্থায় আমানতের এক-দশমাংশের অধিক টাকা তুলিয়া লণ্ডয়া হয় না, বহুদিনের অভিজ্ঞতা হইতে ইহাদের এই জ্ঞান লাভ হইয়াছে। কিন্তু কোন কারণে ব্যাঙ্কের উপর আমানতকারিগণের আস্থা হ্রাসপ্রাপ্ত হইলে, অথবা ব্যবসা-বাণিজ্যের অবস্থা মন্দ হইলে, এই নিয়মের ব্যতিক্রম ঘটতে পারে। সেই জন্ত পারিপাখিক অবস্থার উপর সজাগ দৃষ্টি রাখিয়া, প্রয়োজন হইলে ব্যাঙ্ককে তাড়াতাড়ি নগদ তহবিল বাড়াইতে হয় এবং তজ্জন্ত নুতন ধার দেওয়া বন্ধ করিয়া দিতে কিংবা পুরাতন ধারের টাকা অবিলম্বে আদায় করিয়া লইতে হয়। ব্যাঙ্ক কি পরিমাণ টাকা ধার দিবে তাহা শুধু তাহার নগদ তহবিলের উপরই নির্ভর করে না। ব্যবসা-বাণিজ্যের সাধারণ অবস্থা, বড় বড় শিল্পপ্রতিষ্ঠানের প্রয়োজন এবং যাহারা টাকা ধার করিবে তাহাদের অবস্থা ও যোগ্যতা—এই সবের উপরও নির্ভর করে। কেন্দ্রীয় বা সেন্টাল ব্যাঙ্ক কিন্তু সৰ্ব্বাপেক্ষা অধিক নির্ভর করে কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্কের ইচ্ছার উপর। অধুনা প্রত্যেক দেশে একটি করিয়া সরকারী বা আধা-সরকারী 'সেন্টাল ব্যাঙ্ক প্রতিষ্ঠিত হইয়াছে। বিরাট