পাতা:প্রবাসী (ষট্‌ত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৫৪৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

মণঘ ভারতের স্ত্রীপুরুষের লজ্জা নিবারণের বস্ত্র জোগাইয়া আসিয়াছে, কল আজ তাহাদের কাজ কাড়িয়া লইয়াছে । বৰ্ত্তমানে থাদির জন্য চেষ্টা চলিতেছে, কিছু স্বতা কাটান হইতেছে । যে-সূৰ্য্য নিবিয়া গিয়াছিল তাহার চিহ্নস্বরূপ একট। মাটির প্রদীপ জালান হইয়ছে মাত্র । একবার একটা শিল্প লুপ্ত হইলে প্রতিকূল জন-মনোভাবের ভিতর তাহাকে পুনরায় দাড় করান যে কত কঠিন তাহ খাদিতেই দেখা যাইতেছে । আজ বিশেষ করিয়া একটা শিল্পের কথা বলিব যাহা এখনও সম্পূর্ণ লুপ্ত হয় নাই, কিন্তু লুপ্ত হইতে চলিয়াছে। ঘানির কথা বলিতেছি । তেল রায়ার জন্ত চাই, গায়ে মাথার জন্য চাই । ‘ভেলে জলে বাঙালীর শরীর কথাট সত্য । গৃহশিল্প হিসাবে বলুরা আবহমান কাল ঘানি হইতে তেল প্রস্তুত করিয়া আসিতেছে । কিন্তু কলওয়ালা কলুকে নিশ্চিস্ত থাকিতে দিবে কেন । তাহারা বলুর ঘানিখানা, ধেমনটি ঠিক তেমনই লয়—গরুর বদলে এঞ্জিন জুড়িয়া দেয় । কাঠের জাট ফেলিয়া লোহার জাট বসায় । এঞ্জিন দ্বারা গরুর কাজ করাইয়া কতকটা সস্তায় তেল হয়—কিন্তু বিশেষ স্ববিধা হয় না । গ্রামে গ্রামে ঘরে ঘরে ঘানি চলে । শহরে কল বসাইয়া সে তেল দূরে দূরে জোগাইয়া ঘানিকে পরাজয় করা কঠিন হইয়া পড়ে। কলের তেল শহরের সীমানাতেই প্রায় বদ্ধ থাকে । কিন্তু কলওয়াল ব্যবসার প্রসার চাহে । সমস্ত ঘানিই কলের ঘানি হউক—সবটা তেল কলওয়ালাই দিবে, এই ত কলওয়ালার কাম্য । কিন্তু যেখানে কুটারশিল্প হিসাবে ঘানি চলে সেখানে কলের তেল সস্তায় পৌছান কঠিন হইয়া পড়ে । তখন কল গ্রাম্য ঘানির সহিত প্রতিযোগিতা করিয়া তেলে ভেজাল দিতে আরম্ভ করে । লোকে সস্তী চায়, খণটি ভেজাল বিচার করে না। কলের তেল নিকৃষ্ট হইলেও সস্ত। বলিয়া মাত্র শহরের লোকে কিনিত, কিন্তু ভেজাল দেওয়ায় গ্রামেও প্রবেশ করিয়া ঘানিকে পরাজিত করিতে লাগিল । একটা উদাহরণ দ্বারা বিষয়টা স্পষ্ট করিব । অতীত কালের শিল্প-প্রধান গ্রাম কলিকাতার জনসংখ্যা যখন বাড়িতে থাকে তখন নিকটবর্তী অনেক স্থানে নূতন নূতন ঘানি বসিতে থাকে। مة بسسسة منه কুচীরশিল্পে কলুর ঘানি gss আজ কলিকাতা হাওড়া মিলিয়া লোক ধ্যা বারো লক্ষ এই বারো লক্ষ লোকের তেল জোগাইতে শূরে হাজার গ্রাম ঘানি ত দরকার। প্রতি শত লোকে একথানা ঘানি ধরিয় লইতেছি । দশ-বার হাজার ঘানি কলিকাতার উপকণ্ঠে কোনও দিন বসিয়া গিয়াছিল এ-কথা মনে করার হেতু নাই । কলিকাতায় কলের ঘানি বহু বর্ষ হইতে চলিতেছে, তথাপি কলের ঘানির সঙ্গে সঙ্গে গ্রাম্য ঘানিও ষে খুব বাড়িয়া গিয়াছিল তাহাতে সন্দেই নাই। কেবল কলুর ব; কলু-প্রধান গ্রাম কলিকাতার কাছাকাছি অনেক আছে। এত তেল সে-সকল গ্রামে উৎপল্প হইতে পারে যে সে-গ্রামের বা পাশ্ববৰ্ত্তী গ্রামের লোক কোনও মতেই তাহ ব্যবহার করিয়া উঠিতে পারে না । ইহাদের প্রধান কাজ ছিল কলিকাতার তেল জোগান ৷ দেউলে নামে এমনই একটি গ্রাম দেখিতে গেলাম । গ্রামে চল্লিশখান ঘানি ছিল, যদিও লোক চল্লিশ ঘর হইবে না। কলু ভিক্স অন্ত জাতের লোক, নাপিত ধোপ চামার সামান্ত কয় ঘর মাত্র গ্রামে আছে । আজিকার দিনে চল্লিশখানার মধ্যে মাত্র ছয়-সাতখানা ঘানি চলিতেছে—তাহাও নিয়মিত চলে না । নিকটেই একটা বড় রকম হাট আছে । তেল ও খইল এই হাটে বরাবর খুব উঠিত। তেল যাইত শহরে আর খইল লাগিত গরুর জন্য ও চাষের জন্য গ্রামের কাজে । কলুদের অবস্থা এককালে খুব ভালই ছিল । কাহারও কাহারও প্রাচীর-দেওয়া পাকা বাড়ী আছে । জমিজমা মন্দ ছিল না । এ সমস্তই ঘানি হইতে হইয়াছিল । এখন কিন্তু গ্রামখানি নিরানন্দ ও অবসাদগ্ৰস্ত, কোনও জীবন নাই । প্রতিপদে অলসভার ও দারিদ্র্যের ছাপ চোখে পড়ে । গ্রামে প্রবেশ করা মাত্রই এক দল বালক-বালিকা আমাদের সঙ্গ লইল । আমাদের মধ্যে কিছুই বিশেষত্ব ছিল না, তবে আমরা যে গ্রাম্য লোক নহি, শহর হইতে কিছু দেখিতে আসিয়াছি তাহা ছোট ছেলেও বুঝিতে পারে। আমর! যত গলি গলি ঘুরিতে লাগিলাম ছেলেপুলের সংখ্যা তত বাড়িতে লাগিল । গণিয়া দেখি যে পচিশটি সঙ্গ লইয়াছে । যে-বাড়ীতে ঘানির খোজ করিতে যাই ছেলেরা সে-বাড়ীর প্রাক্ষণ ভরিয়া ফেলে, ভিড় করিয়া দাড়ায়, ঘরে ঘানি দেখিতে গেলে সঙ্গে সঙ্গে যায়। ঘানি-ঘর অনেকগুলি