পাতা:প্রবাসী (ষট্‌ত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৫৫০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

(RR দেখি অন্ধকার, ঘ\নও বন্ধ আছে । তখন বেলা সাড়ে চারটা, বর্ষা কাল, তথাপি আলো জালাইয়া ঘরের ঘানি দেখিতে হয়। ঘানি আমরা দেখি, ছেলেরা আমাদিগকে দেখে, নিজের বলাবলি করে, তাহার পরে কোন বাড়ী যাইব সে-জল্পনা করে—আমাদের পূর্বেই ত তাহাদের পৌছিয়া থাকা চাই। ঘানি দেখিলাম। সুন্দর নিপুণ ভাবে তৈরি যন্ত্র । অযত্বে পড়িয়া আছে । সৰ্ব্বত্রই এক কথা । তেল-বিক্রয়ে আর পোষায় মা, সেই জন্ত ঘানি বন্ধ। “ঐ যে কয়খানা চলিতেছে ?” কি করিয়া চলিতেছে সে-আলোচনা নিম্প্রয়োজন । আমরাও তত ক্ষণ তাহা বুঝিয়াছি। কিন্তু ঘানি অপেক্ষ এই ছেলের দল আমার মন অধিক আকৃষ্ট করিয়াছিল। গ্রামে আমাকে যাইতে হয়। এমন গ্রামে দুভিক্ষ বা বন্যার সাহায্য দিতে গিয়াছি যেখানে বিদেশী ভঞ্জলোক কদাচিৎ দেখা যায়। আমরা হয়ত তিন জন এক দলে । পথে দেখা পাইয়া ছেলেমেয়েরা উদ্ধশ্বাসে বাড়ীর দিকে দৌড়াইয়াছে। বুনো জানোয়ার দেখিলে যে-অবস্থা হয় তাহাদের সেই অবস্থা হইয়াছে। চীৎকার করিতে করিতে ছুটিয়াছে, পড়িয়া গিয়া আহত হইয়াছে। নিকটে গেলে আরও ভয় পাইয়া বিহবল হইয়া পড়িয়াছে। এ তেমন নয়। কলিকাতার উপকণ্ঠেই গ্রাম। আমাদিগকেই ইহারা পৰ্য্যবেক্ষণের বস্তু করিয়াছে। গ্রাম্য পথপ্রদর্শককে জিজ্ঞাসা করিলাম, ছেলের এমন ভাবে উচ্ছ,জ্বল হইয়া আছে কেন—পাঠশালা নাই বুঝি ? চৌদ্দ বছরের ছেলেও ত কয়টি দেখিতেছি। কোনও কাজ নাই নাকি ? গরু চরান, ঘাস কাটা, বাড়ীর কাজ ? না, কোনও কাজ নাই। পাঠশালায় যাইবে কি, ঘরে থাওয়াই জোটে না । বেতন দেওয়ার শক্তি নাই । ছেলেমেয়েগুলির কথাবাৰ্ত্তা ও চালচলন দেখিয়া কষ্ট হইল। সমস্ত গ্রামটার শ্রীহীন ভাব উহাদের ভিতর দিয়া দেখিতে পাইলাম । এমন কেন হুইল ? তাহারা বলিল যে এমন ছিল না । এক কালে গ্রামের শ্ৰী ছিল—তখন ঘানি চলিত। বাপ-দাদা বাড়ী ঘর রাখিয়া গিয়াছে, জমিজমাও কিছু ছিল, আজ বড় নাই। এখন আর ঘানি চলে না । “জমিজমা ষে সামান্ত আছে তাহা নিজেরাই চাষ করত ?” প্রবাসী SNご8いこ “নিজের চাষ করিব কি, চাষ করিতে ত কখনও শিখি নাই ।” “বসিয়া থাক অথচ নিজের জমি অপরকে দিয়া চাষ করাও ?” “ই, কি করিব। চাষ ত জানা নাই। পূৰ্ব্বে অবস্থা ছিল ভাল, ঘানির কাজ করিতাম, তাহাই জানি । চাষ শিখিতে হয়, হাল-গরু রাখিতে হয়। আর কতটুকুই বা জমি আছে তাহাতে চাষ করাও পোষায় না— বরোগা দেওয়া হয়।” “তাহ হইলে চলে কি করিয়া ?” “কেহ কেহ এ-কাজ সে-কাজ করে, কেহ বা বসিয়াই কাটাইতেছি।” “ভৰুও সংসার চলে কি করিয়৷ ” নারিকেল গাছগুলি দেখাইয়া বলিল, “উহারাষ্ট বঁাচাইয়া রাখিয়াছে। সকল বাড়ীতেই কয়টা করিয়া গাছ আছে । ডাবগুলি ভাল দামে বিক্রয় হয়। কতক নারিকেল ঝুনা করা হয়, উহা বেচিলে দাম উঠে না—শুকাইয়া তেল বাহির করা হয়। নিজেদের ঘানিতে ভাঙাইয়া লক্ট, সময়ে অপরের নারিকেলও ভাঙাইয়া দিই—দুই পয়স তেলের সের হিসাবে মজুরি পাওয়া যায়। তাহার পর নারিকেলের পাতা আছে, উহ! হইতে ঝণটা হয়, সেগুলিও বেশ বিক্রয় হয়। এই ভাবে চলে ।” দেখিলাম, চলে না। একটা ব্যথা লইয়া ফিরিলাম । লোকগুলি মিষ্টভাষা ও ভদ্র । দারিদ্র্য এ-পর্য্যন্ত তাহাদের বিনয় ও সদাশয়তা নষ্ট করিতে পারে নাই । কিন্তু ইহাদের পরবর্তীর, গ্রামের ছেলেরা, ভিন্ন জিনিষ গড়িয়া উঠিতেছে। যাহারা কল বসাইয়া একটা কুটারশিল্প নষ্ট করে, যাহার কুটারজাত বস্তু ত্যাগ করিয়া কলে উৎপন্ন দ্রব্যাদি ব্যবহার করে তাহাদের ভিতর এই ভাবে কলের প্রচলন দ্বারা কি সৰ্ব্বনাশ হইতেছে এ-কথা র্যাহাদের বুঝিতে পারা উচিত র্তাহারাও বুঝিতে চান না। গ্রাম দেখিয়া দেখিয়া হতাশার শ্বাস ফেলিতে হয় । কলের ভেজাল তেলের কথা জানিলাম। কলের তেলও বাজার-চলতি দরে পোষায় না ভেজাল না দিলে। কলওয়ালার তেল