পাতা:প্রবাসী (ষট্‌ত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৫৫১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

&SNరి সস্তা করিতে করিতে প্রতিষোগিতায় এমন অবস্থা আনিয়াছে যে বিস্তর ভেজাল দেওয়া প্রয়োজন, নহিলে প্রতিযোগিতায় টিকা যায় না। কলিকাতাতেই তেলের কল অনেক। এখানে কলঘরের সম্মুখে বিজ্ঞাপন আঁটা হয়—“মিশ্রিত তৈলের কারখানা”। আইন বঁাচাইবার জন্য এই বিজ্ঞাপন আবশ্বক। মিশ্রিত মানে ভেজাল সরিষার তৈল । কলে প্রথমতঃ খাটি সরিষা হইতেই সাধারণতঃ তেল বাহির করা হয় এবং সেই তেলে রুচি ও লাভ করার ইচ্ছা অনুযায়ী নানা সস্তা তেল মিশান হয়। ভেজাল দেওয়ার সব চাইতে সস্তা একটা তেল হইতেছে ‘হোয়াইট অয়েল’ । ইহা কেরোসিন ও ভেঙ্গেলিনের মাঝামাঝি মোট খনিজ তেল। ইহার মূল্য ছয় টাকা, সাড়ে ছয় টাকা মণ। এই পদার্থের রং ঠিক সরিষার তৈলের মত এবং তেলে মিশাইলে তেলের বর্ণবিকার হয় না, গন্ধ কমিয়া যায়। কিন্তু সেজন্য কলে ‘প্লাই” সরিষা বেশী মিশ্রিত করিয়া ভাঙান হয়। উহার ঝাজ বেশী। যথেষ্ট হোয়াইট অয়েল মিশাইলেও চলিয়া যায়। এক প্রকার বাজালো দ্রব্য কিনিতে পাওয়া যায়—উহাতে সরিষার তেলের তীব্র গন্ধ থাকে। উহা মিশাইয়। কেবল হোয়াইট অয়েলকেও সরিষার তেল করা যাইতে পারে, কিন্তু কাৰ্য্যতঃ কতকটা সরিষার তেল মিশান হষ্টয়াই থাকে। এক মণ সরিষার তেল যদি ২০২ টাকা হয়, আর এক মণ হোয়াইট অয়েল ৬<, তবে সমান সমান মিশাইলে দুই মণ তেলের মূল্য হইল ২৬২ টাকা । ১৩২ টাকা মণ পড়িল । তখন ১৪২ টাকা মণ বিক্রয় করিয়াও লাভ থাকে । কলুর বিপদ এই মিশ্রিত তেল মফস্বলের বাজার ছাইয়া ফেলিয়াছে। শহরে যে-পাড়ায় কলের ভেলের কারখানা আছে, তাহার নিকটেই খনিজ তেলের দোকানও বসিয়া গিয়াছে । গ্রামে সরিষার তেলের নামে কলিকাতা হইতে এই তেল যায় । উহা দোকানদারের রাখে। কলুর বিপদ কে বুঝিবে। তাহার জীবিকা বজায় রাখিবার জন্ত এক সের তেল ঘানিতে করে ত তিন সের কলের তেল কিনিয়া মিশাইয়। সামান্ত অধিক দামে ঘানির তেল বলিয়া বিক্রয় করে। গ্রামের হাটে কলের তেল অপেক্ষা কলুর তেল এখনও সামান্ত বেশী দামে বিক্রয় হয় । কিন্তু সে-ভেদ এত সামান্ত যে তাহাতে কলুরা থাটি ঘানির তেল দিতে পারে না। :াহাকেও ভেজাল দিতে হয়। আর, একবার চরিত্র নষ্ট হইবে ব্যবসার ধারা দুষ্ট হটলে, পারিলেও অনেকে পারিতে চায় না। অধিক লাভের লোভ প্রতিবন্ধক হয়। এই জন্ত খণটি সরিষার তেল বলিয়া কোনও বস্তু বাংলার হাট-বাজার হইতে বহুদিন অন্তহিত হইয়াছে। যেখানে রেলের মাল পৌছিতে পারে সেইখানেই এই অবস্থা। আজ যে-ঘানিগুলি আছে তাহ মৃতকল্প। সেগুলির সম্বন্ধে সাধারণভাবে বলা যায় যে লোকের বিশ্বাস ভাঙাইয়াই সেগুলি চলিতেছে। লোকে জানিয়া না-জানিয়া, কতকটা সন্দেহ সত্ত্বেও, কলুর তেল তবুও কতকটা থাটি, এই বিশ্বসে ক্রয় করে। কিন্তু এই লোকদেখান ঘানির সংখ্যাও কমিয়! যাইতেছে। যদি কল পাটি সরিষার তেল বিক্রয় করিত, তবে ঘানি মরিত না । লোকের রুচি বদলাইয়া সস্তা ভেজাল তেল খাইতে লোককে অভ্যস্ত করিয়াই কল তাহার প্রতিযোগী ঘানিকে নষ্ট করিতেছে । কল্প ওয়ালাদের ভিতরেও যাহার ভেজাল দিতে চায় না, তাহাদের পক্ষে কারবার টিকাতীয় রাখা শক্ত। ঘানি অপরাজেয় যতগুলি গৃহশিল্পের যন্ত্র কলের নিকট হার মানিয়াছে ঘানি তাহাদের একটি নয়। কল-চালিত যন্ত্র কেবল গতিবেগ বাড়াইয়া ও মানুষ বা পশুর পরিবর্তে এঞ্জিন জুড়িয়া দিয়াই ছাড়ে নাই। দ্রব্যপ্রস্তুতের প্রথার আমূল পরিবর্তন করিয়াছে । হাতে-সুত-কাট চরখা, ও কলের চরথায় সমস্ত পদ্ধতিতেই আমূল প্রভেদ। টেকিতে চাউল ছাট। হয় মুষলের সহিত ধানের ঘর্ষণে। কলে মুঘলের ব্যবহার নাচ। কিন্তু ঘানিতে তেমন কিছু ঘটে নাই। গ্রামের ঘানি অন্ততঃ বাংলায় যে-ভাবে চলে, কলের ঘানিও ঠিক তাহার নকলে চলে। সেই ঘানি, সেই জাট, বলুর ঘরে ও কলম্বরে ঠিক এক রকম। তৈলবীজ ভাঙাইতে সম্পূর্ণ নূতন পদ্ধতির চেষ্টা যে হয় নাই বা প্রচলিত নাই এমন নহে। কিন্তু সে-সকল পদ্ধতি সরিষার বেলায় ঘানির সহিত প্রতিযোগিতায় আজও পারিয়া উঠিতেছে না। কল দ্বারা চালিত যন্ত্র নূতন ভাবে প্রস্তুত করিয়া ঘানিকে পরাজয় করার চেষ্টা আজও খুব চলিতেছে যদিও সে-সংবাদ আমাদের কলুদের জানাও নাই।