পাতা:প্রবাসী (ষট্‌ত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৫৬১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

সঙ্গে। তার পর নিখিল জেলে যাবার পর আর তার খোজ খবর রাখে নি। ইতিমধ্যে পুলিস-সংস্কারের স্বযোগে কবে যে সে পরীক্ষা দিয়ে পুলিসের কাজে বহাল হয়েছে তার সংবাদ তার জানা ছিল না । হস্তাখানেক পরে বিকেল বেলার দিকে সেদিন নিখিলের কোনও কাজ ছিল না। নারীভবন থেকে ফিরে এসে মনটা তাঁর অত্যস্ত ভারাক্রান্ত হয়েছিল। কমলাকে অধ্যাপনার ছলে সে প্রতিদিন একবার করে নারীভবনে যেত। সীমাকে দেখবার স্বযোগলাভ করার চেয়েও কমলাকে ধীরে ধীরে বিপ্লববাদের রূপ, পরিচয় এবং তার বিরুদ্ধে অকাট্য যুক্তি তর্কে তাকে দীক্ষিত করতে অভ্যস্ত করা তার বিশেষ প্রয়োজন ছিল। ছাত্রীটিও মন্দ নয়। কমলা স্বভাবতঃ শাস্ত স্থিরবুদ্ধি, এবং সংরক্ষণপন্থী। তা ছাড়া নারীসুলভ স্বাভাবিক কৌতুহল এবং নিখিলনাথের মনোভাবের প্রতি তার আস্তরিক শ্রদ্ধা ও সহানুভূতি তাকে এই উদ্যমে আগ্রহাম্বিত করেছিল কম নয়। অভিনিবেশ সহকারে সে নিখিলনাথের প্রত্যেকটি কথা শুনত, বুঝতে চেষ্টা করত এবং ইতিমধ্যে দু-এক দিন কথার ছলে সীমার সঙ্গে সামান্ত দু-একটা বিষয়ে আলোচনা হয়েছিল তাতে নিজের গুছিয়ে বলবার ক্ষমতায় সে নিজেই অবাক হ’ল ; মনটা প্রসন্নও হ’ল তার। কিন্তু সবচেয়ে আশ্চৰ্য্য হ’ল সীমার মনের একাস্ত নিষ্ঠায়, অবিচলিত বিশ্বাসে এবং দেশের পরাধীনতায় কারও ব্যথা যে সত্যই এমন নিবিড় এমন গভীর এমন অতলস্পর্শ হ’তে পারে তা প্রত্যক্ষ করে। ও অমুভূতির তীব্রতার সামনে তার যুক্তির চেষ্টা যেন খেলো হয়ে পড়ে–কথা যেন হান্ধ হয়ে যায় । আজ সীমাকে দেখে নিখিলনাথের মনে কেমন একটা আশঙ্কার মেঘ ঘনিয়ে উঠেছে । সীমার কথায় বা ব্যবহারে যে কোনরূপ উৎকণ্ঠার কারণ ছিল তা নয়, তবু তার সমস্ত চেহারার মধ্যে তার অন্তনিহিত কি এক অগ্নিদাহের পরিচয়ে নিখিলের চিত্ত যেন শঙ্কান্বিত হয়ে উঠেছিল। এ সম্বন্ধে যে-কোন প্রশ্নই যে বাচালতার পর্য্যায়ে গিয়ে পড়বে বারংবার আহত হয়ে নিখিলনাথের তা শিক্ষা হয়েছিল। কিন্তু তার তন্ত্রদেহের স্বম্পষ্ট কৃশতা, তার দৃষ্টির-অস্বাভাবিক শুষ্ক তীব্রত ক্ষণে ক্ষণে তার উন্মনা চিত্তকে সন্নিবিষ্ট করার গোপন প্রয়াস নিখিলের সীমা সম্বন্ধে সচেতন দৃষ্টির পক্ষে অগোচর ছিল না। অনাগত বিপূর্ব্যয়ের ধূমায়িত কল্পনায় তার চিত্তাকাশ সমাচ্ছন্ন হয়েছিল। এ কয়দিন সীমাকে এক রকম এড়িয়েই চলেছে সে–পাছে তার শঙ্কিত চিত্তের ক্ষুব্ধ দুৰ্ব্বলতা সীমার পরিহাসের আঘাতে পযুদস্ত হয়। পাছে তার ভীরুতার আভাসে সীমার মন কঠিনতর প্রতিজ্ঞায় নিজেকে অধিকতর বিপদের পথে জিদ ক’রে নিয়ে যায়। পাছে জ্যোৎস্নার বিতর্কের স্বর ও কথা তার নিজের অতর্কিতে উচ্চারিত কোনও ভাবের সঙ্গে মিলে গিয়ে সীমার মনে কোন সন্দেহ জাগায়। নিজের কামরায় বসে চিস্ত করতে করতে তার অত্যন্ত প্রাস্ত অসহায় বোধ হতে লাগল। বিপ্লবীদের নানা জটিল এবং বিপদসঙ্কুল কৰ্ম্মধারার কথা চিন্তা করতে করতে হঠাৎ মনে হ’ল যে ভুলু দত্ত সেদিন বলেছিল যে সি. আই. ডি. থেকে কিছুদিনের জন্ত তাকে ধার নেওয়া হয়েছে। শীগগিরই তাকে আবার নিজের কাজে ফিরে যেতে হবে । সে মনে মনে সংকল্প করলে যে ভুলু দত্তের সঙ্গে বন্ধুতার সম্পর্কট। ভাল ক’রে ঝালিয়ে নিতে হবে। যদি বিপদের সঙ্কেত কোন রকমে পূৰ্ব্ব হতে সংগ্ৰহ ক’রে সীমাকে রক্ষা করা সম্ভব হয়। এতে পরোক্ষ ভাবে সে যে বিপ্লবেরই সহায়তা করছে এ যুক্তি ক্ষীণ বিবেকের মত তার মনকে ক্ষুন্ন করলেও, সীমাকে রক্ষা করতে পারার প্রবল মোহে সে কথা তার মন আমল দিতে চাইলে না। সে উঠে তৎক্ষণাৎ ভুলু দত্তের বাড়ী গেল । বাইরের প্রশস্ত বারান্দায় বিস্তৃত চায়ের সরঞ্জাম সামনে রেখে ভুলু দত্ত খবরের কাগজ পড়ছিল। নিখিলকে দেখে অত্যন্ত হৃদ্যতার সঙ্গে বললে, “আরে, এস এস । আমি ত ভেবেছিলাম যে পুলিসের কাজ নিয়েছি বলে তুমি আর : আমার মুখদর্শনই করবে না। তার পর r বস, চা খাও। : অারে এ তেওয়ারী—” নিখিল বললে, “ব্যস্ত হ’ম্বো না ভাই। হবে’খন । হাতে কাজ ছিল না, তাই ভাবলাম একবার তোমার এখানে এসে গল্পস্বল্প করা যাকু। তার পর আছ কেমন ? কতদিন ঢুকেছ সি. আই. ডি-তে "