পাতা:প্রবাসী (ষট্‌ত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৫৬২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

“হচ্ছে, হচ্ছে, সব বলছি। এই তেওয়ারী, মী-জীকে বোলো একঠো বাৰু আয়, হাম বোলাত, সমৃঝা ?” নিখিল সসঙ্কোচে বাধা দিয়ে বললে, “না ভাই আজ থাকৃ, আজ তোমার সঙ্গেই একটু গল্প করি। ও আর একদিন এসে আলাপ করে যাব’খন।” সেদিন বাড়ী যাবার সময় ভুলু দত্ত বারংবার তাকে আসতে অনুরোধ করে বিদায় দিলে। বললে, “এস ভাই মধ্যে মধ্যে। পুলিসের কাজ করে মনে মনে ত দেশের লোকের কাছে একঘরে হয়েইছি। তোমরাও ঐ সঙ্গে একেবারে পরিত্যাগ ক’রো না। তাহ’লে মর্যাসঙ্গবিহনে যদি অমানুষ হয়ে উঠি তার জন্তে তোমরাও দায়ী কম হবে না।” ব’লে হাসতে হাসতে বললে, “তা ছাড়া তোমার বৌদিত পুলিস নয়, কি বল ?” এমনি ক'রে ভুলু দত্তের উৎসাহে এবং নিগিলের নিজের দরকারে আত্মীয়তা ক্রমে জমে উঠতে লাগল। এমনি অভিনয় ক’রে যেতে প্রথম প্রথম মিথিলের মনে যেটুকু মানি ছিল সেটা ভুলু ও তুলু-পত্নীর হৃদ্যতায় একসময় কেটে গেল। নিখিল ভাবলে যে, মানুষকে দূরে রাখি বলেই কল্পনায় তাকে বীভৎস ক’রে দেখি। তার মনে পড়ল, পাড়ায় একদিন ‘চোর ধরা পড়েছে গুনে একটি ছোট মেয়ে তাকে দেখতে গিয়েছিল। ঐ ছোট মানুষটির মনে চোরের অপরূপ মূৰ্ত্তির যে একটি ছবি ছিল তাই স্মরণ করেই বোধ হয় সে ভয়ে এবং কৌতুহলে তার প৷ ঘেসে দাড়িয়ে বিস্ময়বিস্ফারিত চোখে তাকে দেখছিল। তখন চোরকে সবাষ্ট আপনাপন বীরত্বের নমুনা স্বরূপ চাদা করে কিছু উত্তমমধ্যমের ব্যবস্থা করেছে ; কারুরই উৎসাহের অভাব নেই। হঠাৎ তার বাবাকে দেখে সে কেঁদে ছুটে গিয়ে র্তার হাত ধরলে, “ও বাবা, চোর কই, ও ত মানুষ ; ওকে মারছে কেন ?” বৃদ্ধ পিতা কন্যাকে তৎক্ষণাৎ জড়িয়ে কোলে নিয়ে বললেন, “হ্যা মা মানুষই ত। ঐ কথাটাই আমরা ভুলে যাক্ট ’ বলে তাকে নিয়ে চলে গেলেন। ঘটনাটা সামান্ত কিন্তু মিপিল কথাটা কখনও ভুলতে পারে নি। ক্রমে ভুলু দত্তের সঙ্গে নিখিলনাথের বেশ একটা ঘনিষ্ঠতা দাড়িয়ে গেল। একদিন কথাপ্রসঙ্গে ভূলু দত্ত নিখিলকে বললে, “তোমাকে একটা অদ্ভুত খবর দিতে পারি।” নিখিল মনে মনে কান খাড়া ক'রে বসল। বাইরে উদাসীন কণ্ঠে জিজ্ঞেস করলে, “বটে ! কি রকম ?” “সত্যদাকে মনে আছে ?” নিখিল গলার স্বরে স্বাভাবিক আগ্রহ বজায় রেখে বললে, “কে সত্যবান ? নিশ্চয়। খবর জান না কি তার ?” “লাফিও না । জানি, তাও স্বখবর নয়। কিংবা তাই হয়ত স্থখবর। শোন, মাস আষ্টেক আগে একটা বিশেষ সংবাদ পেয়ে শ্রীরামপুরে একটা তল্লাসে যাই। একজন খবর দিয়েছিল যে ওখানে একটা পোড়ো বাড়ীতে বিপ্লবী কোন একটা ছোট দল আডডা নিয়েছে । সঙ্গে একটা মেয়ে ছিল । অনেক তোড়জোড় ক’রে গিয়ে যা দেখলুম তাতে পুলিসের দিক দিয়ে বিশেষ কিছু ফল হ’ল না। আমার সঙ্গে আমার স্কপিরিয়র ছিল । তার রিপোর্ট টাই বলব। রিপোটে লিখেছে যে “একটা মুতদেহ বাড়ীটাতে পাওয়া গেছে, বোধ হয় কোন ভিখারীর । বাড়ীটাতে মনুষ্য-বসবাসের অল্প যা চিহ্ন আছে তা ঐ ভিখারীটার বলেই মনে হয়। একটা লণ্ঠন, দুটো ভাড়, একটা বাট আর কলসী প্রভৃতি দু-একটা বাজে জিনিষ ছাড়া আর কিছু নেই । মিঃ দত্তকে পরদিন ভাল করে অনুসন্ধান করবার জন্যে রেখে এলাম।” মিঃ দত্ত অবশু তোমাদের বুলডগ । জানষ্ট ত আমার মাথায় একটা কিছু ঢুকলে তার হদিস না করে আমার শাস্তি হয় না। সাহেবের বোধ হয় কলকাতায় ফেরবার তাড়া ছিল। বাড়ীর ভাঙা ঘরগুলো এবং বাড়ীর চতুদিকে ঘুরে তার কাজ শেষ করে সে চলে গেল। আমিই ইচ্ছে ক'রে সাহেবকে বলে আরও অনুসন্ধানের অল্পমতি নিয়ে রয়ে গেলাম। একটু কারণও ছিল তার। বাড়ীটাতে ঢোকবার আগে বাড়ীটা ঘেরাও করা হয়। তার পর আমিই প্রথম হল ঘরটাতে যাই ; মৃতদেহটাকে দেখে আমিও প্রথম ভিখারীর মড়াই ভেবেছিলাম ; তবু শব্দ না করে আমার সঙ্গের কনসটেবলটাকে দিয়ে সাহেবকে ডাকতে পাঠিয়ে দিলাম। হঠাৎ আমার চোখ টর্চের আলোয় একটা ইনজেকশানের এমপিউলের উপর পড়লো। চুপি চুপি সেটা পকেটে পুরলাম। এইটাই আমার ভিখারীর থিওরীটা পাণ্টে দিলে। তবু সাহেব কি বলে তার জন্তে অপেক্ষা করতে লাগলাম। সাহেবও অনেকক্ষণ দেখে তাকে ভিখিরী বলেই ঠিক করলে। একবার ভাবলাম