পাতা:প্রবাসী (ষট্‌ত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৬১৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

(Uూమి ক্ষুদ্র মুক্তি রহিয়াছে এবং পাশের কক্ষে শত শত স্বন্দর ছোট পিত্তলের মূৰ্ত্তি সাজানো আছে। ভারতের অনেক প্রসিদ্ধ বৌদ্ধ আচার্ষ্য ও সিদ্ধ পুরুষের মূৰ্ত্তিও ইহার মধ্যে আছে । অঙ্গহীনকে সাধুশ্রেণীভুক্ত করা বিনয়ের মতবিরুদ্ধ, কিন্তু এখানে কাণা প্রমণ দেখিলাম। এক দিকে ভোটায় ভাষায় স্বত্রপাত হইতেছে শুনিলাম, স্বর নেপালী স্বত্রগীতের অনুরূপ। অন্তান্ত মন্দিরও অতি স্বন্দর এবং স্বর্ণরৌপ্য মণি-মাণিক্যে পূর্ণ। আজ সময় ছিল না এবং পুনৰ্ব্বার এখানে আসিতে হইবে, স্বতরাং শীঘ্ৰ দেখা সাঙ্গ করিয়া ফিরিলাম। ফিরিবার পথে খচ্চরওয়ালাদের সঙ্গে দেখা হইল । ভোজনের আয়োজন ঠিক ছিল কিন্তু তাড়াতাড়িতে খাওয়া হইল না । নয়টার মধ্যে মালপত্র লইয়া খচ্চরওয়ালাদের নিকট পৌছিলাম এবং সঙ্গে সঙ্গে শীগচী ত্যাগ করিলাম। চারি দিকে শুামল ক্ষেত্র, মধ্যে মধ্যে নহরের ( সেচনালী) জলস্রোত চলিয়াছে, ধব ও গমের চারা উঠতেছে এবং সরিষার ফুলের পীত শোভায় চারি দিক আলোকিত। কোথাও বা লাল ফুলে পূর্ণ মটরের ক্ষেত, কৃষকেরা কোথাও জলসেচনে, কোথাও বা ঘাস নিড়াইতে ব্যস্ত। পথের চারি দিকে ক্রোশব্যাপী ক্ষেত, খচ্চরের যাহাতে ক্ষেতে চরিতে না-পারে সেই জন্ত তাহাদের মুখে কাঠের চুপড়ি বাধিয়া দেওয়া হইয়াছিল। গ্রামগুলির নিকট সাদ ছাল এবং সবুজ পাতায় আচ্ছাদিত সফেদ বৃক্ষের ছোট ছোট বাগান ছিল। বিরি গাছের কাট মাথা হইতে পাতলা সবুজ পাতায় ঢাকা লম্ব বেতের মত সৰু শাখাগুলি পিশাচের মাথার চুলের মত দেখাইতেছিল। মনে হইতেছিল যেন আমরা মাঘ মাসে ভারতের যুক্তপ্রদেশের প্রাস্তস্থিত কোনও অঞ্চলে রহিয়াছি। এক ঘণ্ট। পথ চলার পর তুরিং গ্রামে পৌছিলাম, আজ আমাদের এখানেই বাসা। আমাদের তিন জন খচ্চরওয়ালার মধ্যে এক জন ছিল সদার, উহার খচ্চরের সংখ্যাই অধিক। সে কিছু লেখ+ পড়া জানিত এবং নিজেকে উচ্চবংশীয় প্রমাণ করিবার জন্ত ফিরোজাপাথর-বসানো প্রায় আড়াই তোলা ওজনের সোনার মাকড়ী কানে পরিত, হাভের বাম অঙ্গুষ্ঠেও চওড়া সবুজ পাথরের সিল আংটি ছিল। অন্ত দুই জনের প্রবাসী SN98N9 কানে পাচ-ছয় তোলা ওজনের রূপার আংটা ছিল । মাথায় পুরানো ইংরেজী ফেন্ট হাট ত এখন তিব্বতে সাধারণ ব্যবহারের জিনিষ । আমরা গ্রামে পৌছিলে খচ্চরগুলি বাহিরে বাধ হইল এবং তাঁহাদের খাওয়ানো চলিল। আমরা ভিতরে কৰ্ত্তার সঙ্গে দেখা করিতে গেলাম। র্তাহার বাম কর্ণে লম্বিত প্রবালমুক্ত-জড়িত সোনালী পেন্সিল তাহার সরকারী উচ্চপদের পরিচয় দিতেছিল। তাহার সঙ্গে দেখা হইবামাত্র সঙ্গীরা লম্ব জিহবা বাহির করিয়া ডান হাতে টুপি খুলিয়া দুই-চার বার উপর নীচে সঞ্চালন করিল ; এইরূপে অভিবাদনের পালা শেষ হইলে সকলে মাটিতে বিছানো গদীর উপর বসিলাম। যদিও আগেকার ন্যায় আমার পরিধেয় ভিখারীর মতই ছিল, এখন নেপালী সাহর নিকট এত সম্মান পাওয়ার ফলে সঙ্গীদের নিকটও সম্মান পাইতেছিলাম। আমিও মাঝে মাঝে নিজের ভিক্ষুক-বেশের উপযোগী আচরণ ভুলিয়া যাইতেছিলাম। এক্ষেত্রেও আমাকে বিশেষ আসন এবং চা-পানের জন্য চৈনিক চীনা দেওয়া হইল, অন্যদের দেওয়া হইল শুকানো মাংস ও ছণ্ড । সর্দার মদ্যপান করিত না, সে চা-পান করিল, অন্যেরা খচ্চর-আগলানোর মাঝে ক্রমাগত ছড় চালাইল, গৃহকৰ্ত্তার চাকরাণী তাহাদের তাম-পিতলের চণ্ড দানে সৰ্ব্বদা মদ ঢালিতে থাকিল। ক্লাস্ত হইয়াও সন্ধ্যা পৰ্য্যস্ত তাহারা পান থামাঈল না, পেটে স্থান ছিল না স্বতরাং টুপি খুলিয়া জিহব। বাহির করিয়া অবিরাম অধিকারী মহাশয়কে সেলাম জানাঙ্গতে লাগিল, কিন্তু “উহাদের আরও দাও” হুকুম পূৰ্ব্ববৎ চলিল। স্বৰ্য্যাস্তের সঙ্গে ছঙের পালা শেয হইল । ভোটিয়দিগের মধ্যে সৌন্দৰ্য্যজ্ঞান ও কলারুচি সাধারণ ভাবে ব্যাপ্ত। এই ঘরের দেওয়ালের হাসিয়া (dado) স্বন্দর এবং লাল সবুজ বালরে স্থসজ্জিত। সৰুর কাষ্ঠপাত্র নানারূপে অলঙ্কত, চায়ের চৌকী নানা বর্ণেরঞ্জিত এবং তাহার পায়াগুলির বর্ণবিজ্ঞাস স্বরুচির পরিচায়ক, বসিবার গদী ঘাসে ঠাস। কিন্তু তাহার খোল নানা বর্ণের উলের পট্টি দিয়া সুন্দর ভাবে সাজানো এবং তাহার উপর চীনদেশীয় ছাপ। ফরাস পাতা। সন্ধ্যার সময় বৃষ্টি হওয়ায় অঙ্গনে কালপাড়-যুক্ত মাটির পেয়াল