বিষয়বস্তুতে চলুন

পাতা:প্রবাসী (ষট্‌ত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৬২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ՅՆ প্রবাসী $wరిgN9 একবাক্যে বলিল বে না পরী, পরেশের বহু জন্মের ভাগ্যে এমন বে মিলিয়াছে। বিবাহের কিছু দিন পরে পরেশ-কাকার বে বাপের বাড়ী চলিয়া গেলেন। মাস-দুই পরে আবার আসিলেন । সকালে পরেশ-কাকাদের বাড়ী বেড়াইতে গেলাম। তাহাদের বাড়ীর সকলে তখন কি-একটা ছুটিতে বাড়ী আসিয়াছে। অনেক আমার বয়সী ছেলেমেয়ে। নতুন খুড়ীমা বারান্দায় বসিয়া কুটুনো কুটিতেছেন। জরিপাড় শাড়ী পরনে, আমাদের স্কুলে সরস্বতী-প্রতিমা গড়ানো হইয়াছিল এবার, ঠিক যেন প্রতিমার মত মুখশ্ৰী । আমরা সামনের উঠানে ছুটাছুটি করিয়া খেলা করিতেছিলাম। পরেশ-কাকার বে ওখানে বসিয়া থাকাতে সেদিন আমার যেন উৎসাহ দ্বিগুণ বাড়িয়া গেল। ইচ্ছা হইল, কত কি অসম্ভব কাজ করিয়া খুড়িমাকে খুশী করি। সে কি লাফঝাপ, কি দৌড়াদৌড়ি, কি চেচামেচি মুরু করিয়া দিলাম হঠাৎ ! গায়ে যেন দশ জনের বল আসিল । এমন সময় শুনিলাম পরেশ-কাকার বেী বাড়ীর ছেলে নেপালকে বলিতেছেন—ওই ফস1 ছেলেটি কে নেপাল ? বেশ চোখ-দুটি— নেপাল বলিল-ওপাড়ার গাজুলী-বাড়ীর পাৰু— পরেশ-কাকার বেী বলিলেন—ডাক না ওকে ? আনন্দে আমার বুকের মধ্যে চিপ, চিপ, করিতে লাগিল । মুখ অাগেই রোদে ছুটাছুটিতে রাঙা হইয়াছিল, এখন তা আরও রাঙা হইয়া উঠিল লজ্জায়। অথচ কিসের যে লঙ্গ ! গিয়া প্রথমেই এক প্রণাম করিলাম। পরেশ-কাকার বে বলিলেন—তোমার নাম কি ? পাৰু? ভাল নাম কি ? লজ্জ ও সঙ্কোচের হাসি হাসিয়া বলিলাম—বাণীব্রত— তিনি বলিলেন—বাঃ বেশ স্বন্দর নাম। যেমন দেখতে স্বনার, তেমমিই নাম। পড় ত? বেশ, বেশ। এখানে এস খেলা করতে রোজ । আসবে ? সেরাত্রে আনন্দে আমার বোধ হয় ভাল করিয়া ঘুম হয় নাই। যেন কোন স্বর্গের দেবী কি রূপকথার রাজকুমারী যাচিয়া আমার সঙ্গে ভাব করিয়াছেন। অমন রূপ কি মানুষের झ्छ ? ইহার পরদিন হইতে পরেশ-কাকাদের বাড়ী রোজ যাইতে আরম্ভ করিলাম, দিন নাই, দুপুর নাই, সকাল নাই। কি ভাবই হইয়া গেল খুড়ীমার সঙ্গে ! আমার বয়স তখন বারো, খুড়ীমার কত বয়স বুঝিতাম না, এখন মনে হয় তার বয়স ছিল আঠার-উনিশ । বিবাহের পর-বৎসর গ্রামে খবর আসিল পরেশ-কাক৷ বিদেশে চাকুরীস্থলে আবার পাগল হইয়া গিয়াছেন। খুড়ীমা তখন মাস-দুই হইল বাপের বাড়ী। পাগল হইবার সংবাদ শুনিয়া বাপের সঙ্গে তিনি স্বামীর কৰ্ম্মস্থানে গিয়াছিলেন, কিন্তু গিয়া দেখেন পরেশ-কাকাকে পাগলাগারদে পাঠান হইয়াছে । খুড়ীমার সঙ্গে তার দেখা হয় নাই, খুড়ীমার বাবা মেয়েকে পাগলাগারদে লইয়া গিয়া জামাইয়ের সঙ্গে দেখা করাইয় দিবার আগ্রহ প্রকাশ করেন নাই। সব ব্যাপার মিটিয়া গেলে তিনি মেয়েকে লইয়া ফিরিলেন । পরেশ-কাকার বড় ভ্রাতৃবধূ তখন ছেলেমেয়ে লইয়া গ্রামের বাড়ীতেই ছিলেন, তিনি পত্র লিখিয়া পরেশকাকার বেীকে মাস-দুই পরে আনাইলেন। খুড়ীমার আসিবার সংবাদ পাইয়া সকালে উঠিয়াই ছুটিয়া দেখা করিতে গেলাম। তার মুখে ও চেহারায় দুঃখের কোন চিহ্ন দেখিলাম না, তেমনই হাসি-হাসি মুখ, মুখত্ৰ তেমনি স্বকুমার, বিদ্যুতের মত রং এতটুকু মান হয় নাই। কি স্নেহ ও আদরের দৃষ্টি তার চোখে, আমি পায়ের ধুলা লইয়া প্রণাম করিতেই তিনি আমার চিবুকে হাত দিয়া হাসিমুখে বলিলেন—এই ষে পাবু, কেমন আছ ? একটু রোগ দেখছি ষে । আমি উত্তরে হাসিয়া খুড়ীমার সামনে মেজের উপর বসিয়া পড়িলাম। বলিলাম—আপনি ভাল ছিলেন খুড়ীমা ? খুড়ীমা বলিলেন--আমার আর ভাল থাকাথাকি, তুমিও যেমন পাৰু। পরেশ-কাকা পাগল হইয়াছেন সে-কথা ভাবিয়া খুড়ীমার জন্ত দুঃখ হইল। অভাগিনী খুড়ীমা । খুড়ীমা বলিলেন—কাছে সরে এসে বসে পাৰু। পাৰু আমাকে বড় ভালবাস—না 7 ঘাড় নাড়িয়া স্বীকার করিলাম খুব ভালবাসি। —আমিও কলকাতায় থাকতে পাবুর কথা বড় ভাবি। পাবু, এ গায়ে তোর মত ভালবাসে না কেউ জামায়।