পাতা:প্রবাসী (ষট্‌ত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৬১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

কাৰ্ত্তিক উঠানের উপর পড়িয়া যাইতে যাইতে বাচিয়া গেল এবং একটু সামলাইয়া লইয়া দাড়াইয়া মাটিতে একবার খুথু ফেলিল—রক্তে রাঙা । ইতিমধ্যে মজা দেখিতে আমাদের বাড়ীর ছোট ছোট ছেলেমেয়ের উঠামের দরজায় জড় হইয়াছিল—লোকট ধাক্কা খাইয় ছিটকাইয়া পড়িতেই তাহারা খিল খিল করিয়া হাসিয়া উঠিল । লোকটার উপর সঙ্গতুভূতিতে আমার মনটা গলিয়া গেল । পরেশ কাকার সহিত এই ভাবেই আমার প্রথম পরিচয় । ক্রমে জানিলাম পরেশ-কাকা এই গায়েরই মুখুজ্যেবাড়ীর ছেলে। পশ্চিমে কোথায় যেন চাকুরী করিত, বয়স বেশী নয় এই মাত্র পচিশ। হঠাৎ আজ বছর-দুষ্ট মাথা খারাপ হওয়ার দরুন চাকুরী ছাড়িয়া আসিয়া পথে পথে পাগলামি করিয়া ঘুরিতেছে। তাহাকে দেপিবার কেহ নাঙ্গ, সে স্বে-বাড়ীর ছেলে তাহাদের সকলেই বিদেশে কাজকৰ্ম্ম করে, এখানে কেহ থাকে না, উন্মাদ ভাঙ্গকে বাসায় লঙ্গয়া যাইবার গরঞ্জও কেহ এ-পর্য্যন্ত দেথায় নাই। পাগল পরের বাড়ী ভাত চাহিয়া খায়, সব দিন লোক দেয় না, মাঝে মাঝে মীর-ধরও পায় । এক দিন নদীর ধারে পার্থীর ছানা খুজিতে গিয়াছি একাই । আমায় এক জন সন্ধান দিযাছিল গাং-শালিকের অনেক বাসা গাঙের উচু পাড়ে দেখা যায়। অনেক খুজিয়াও পাইলাম না। সন্ধ্য হয়-হয়। রোদ আর গাছের উপরও দেপা যায় না। নদীর পাড়ে ঘন ছায়া নামিয়াছে। বাড়ী ফিরিঙে ধাইব, দেখি নদীর ধারে চটকাতলার শ্মশানে গ্রামের প্রহ্লাদকলুর বোঁ যে ছোট টিনের চালাখানা তৈরি করিয়া দিয়াছে, তাহারই মধ্যে কে বসিয়া আছে । ভয় হইল। ভূত নয়ত ? একটু আগাষ্টয়া গিয়া ভাল করিয়া দেখি ভূত নয়, পরেশকাঁক । ঘরের মেজেতে শ্মশানের পরিত্যক্ত একথানা জীর্ণ মাদুর পাতিয়া চুপ করিয়া বসিয়া আছে। জামাকে দেখিয়া বলিল—একটা পয়সা আছে কাছে ? খুড়ীম। 8● পরেশ-কাকাকে ভয় করিয়া সবাই এড়াইয়া চলে, কিন্তু আমি সাহস করিয়া কাছে গেলাম । আমি জানি পরেশ কাকা এ-পধ্যস্ত মার থাইয়াছে ছাড়া মারে নাই কাহাকেও ৷ আহ, পঙ্কেশ-কাকার পিঠে একটা দগদগে ঘ, ঘায়ে মাছি বসিতেছে, পাশে একটা মাটির মালসায় কতকগুলি ভালভাত, তাহাতেও মাছি বসিতেছে । বলিলাম—এ জঙ্গলের মধ্যে আছেন কেন কাক ? আসবেন আমাদের বাড়ী ? আস্কিন, শ্মশানে থাকে না— পরেশ-কাকা বলিল-দূর, শ্মশান বুঝি, এ ত আমার বৈঠকখানা। ওদিকে বাড়ী রয়েছে, দোমহলা বাড়ী। দু-হাজার টাকা জমা রেখেছি দাদার কাছে । বৌদিদির সঙ্গে ঝগড়া হয়েছে কিনা তাই দিচ্ছে না। ঝগড়া মিটে গেলেই দিয়ে দেবে। পাচ বছর চাকরি করে টাকা জমাষ্ট নি ভেবেছিস ? কত ৫রিয়া থোসামোদ করিলাম, পরেশ-কাকা মড়ার মাদুর ছাড়িয়া কিছুতে উঠিল না । ইহার কিছু দিন পরে শুনিলাম পরেশ-কাকার মামার আসিয় তাহাকে হুগলী লহয়। গিয়াছে । দুই বৎসর পরে আমার উপনয়নের দিন ভোজে পক্লেশকাকাকে ব্রাহ্মণদের পংশুিতে পরিবেশন করিতে দেখিলাম । শুনিলাম তাঙ্গর রোগ সম্পূর্ণ সারিয়া গিয়াছে, মামার অনেক ডাক্তার কবিরাজ দেপাঙ্গয়াছিল, এবং অনেক পয়সাকড়ি খরচ করিয়াছিল । কি মুন্দর চেহারা হইয়াছে পরেশ-কালার। পরেশ-কাকা যে এত স্বপুরুষ, পাগল অবস্থায় ছেড়া নেকুড়া পরনে, গায়ে কাদী ধূলা মাখিয় বেড়ান্তত বলিয়ান্ত আমি বুঝিতে পারি মাঠ। বলিষ্ঠ একস্থার গড়ন, রং টকটকে গৌরবণ, মুখঞ্জ সুন্দর, দেখিয় খুশী হতলাম । কিছুদিন পরে ঘটা করিয়া পরেশ-কাকার বিবাহ হইল । শুনিলাম নববধু কলিকাতার কোন অবস্থাপন্ন গৃহস্থের বাড়ীর মেয়ে। বৈকালে আমাদের গ্রামে বে লঙ্গয়া পরেশকাকার আসিবার কথা—মনে আছে খুব ঝড়-বৃষ্টি হওয়ার দরুণ বরবধূর পৌঁছিতে এক xর রান্ধি হয়ে গেল। আলো জালিয়া বর্ণ হইল। এসিটিলিম গ্যাসের আলোতে আমরা নববধূর মুখ দেখিয়া অবাকৃ হইয় গেলাম—এসব অঞ্চলে আমন স্কুন্দরী মেয়ে কখনও দেখি নাই। সকলেই