পাতা:প্রবাসী (ষট্‌ত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৬৯৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ছোটবৌদি বলিলেন, “তোমরা সব রূপসী, বিদ্যেবর্তী, কলাবতী—তোমরা করছ থিয়েটার—তার মধ্যে আমি বুড়োমানুষ, আমাকে কেন ভাই ?” সমস্বরে সকলে বলিয়া উঠিলেন, “লক্ষ্মীটি ছোটবোঁদি, আপনি না করবেন না। আপনি বুড়োমানুষ আর আমরা বুঝি সব একেবারে ছেলেমাহষ ? না না ও সব বাজে ওজর আপনার শোনা হবে না। কিছু শক্তও নয় । আপনি যেমন ভাবে কথা বলেন ঐ ভাবেই এই কাগজে লেখা কথাগুলো ব'লে যাবেন—ভtহলেই চমৎকার হবে । আপনাকে নিতেই হবে এ ভারটা—কিছুতেই ছাড়ব না অfমরা " ছোটবৌদি ক্ষীণস্বরে পুনৰ্বার কি একটা আপত্তি করিতে যাইতেছিলেন কিন্তু টিকিল না। শঙ্কর-সমস্যা ঘুচিল । Vo আজ থিয়েটার । নীহারিকা মল্লিকের বাটীর ময়দানে শামিয়ানা খাটাইয়া ষ্টেজ দাড় করান হইয়াছে। স্থানীয় সিনেমা হাউস একটি ভাড়া করিয়া সেইখানে অভিনয় করিবার প্রস্তাব হইয়াছিল, কিন্তু তাহারা ভাড়া বেশী চাহে পলিয়া সে প্রস্তাব কার্য্যে পরিণত করা হয় নাই। চ্যারিটি শী—যত অল্প খরচে করা যায় । আলে, ফুল ও পাতার বাহার সব ঠিকই আছে— ভাঙ্গাত্তে কিছু খরচ করিতে হইয়াছে বটে, কিন্তু কি আর করা যায় । দশকের দল ক্রমে ক্রমে আসিয়া টিকেটের নম্বর মিলাইয়া নিজ নিজ আসন অধিকার করিয়া বসিতেছে। ছোট মেয়েরা জনকয়েক টিকিট বিক্ৰী করিতেছে ; কতকগুলি বালিকা এক-এক গোছা প্রোগ্রাম হাতে লইয়া অভ্যাগতদের বলিয়া বেড়াইতেছে, “প্রোগ্রাম কিনবেন না ? কিতুন না। চার আন ক’রে কপি।” কেহ কেহ দর্শকদিগকে বসাইবার কাধ্যে নিযুক্ত। অভিনেত্রীগণের পিতা, ভ্রাতা, স্বামীবৃন্দ অনেকেই অভিনয় দেখিতে আসিয়াছেন। তাহাদের অনেকের মুখে স্পষ্ট উৎকণ্ঠার চিহ্ন। নির্দিষ্ট সময়ের অনেক পূৰ্ব্বেই বসিবার স্থান প্রায় ভরিয়া আসিল । অধীর আগ্রহে দর্শকের দল উন্মুখ। ভিতরেও উদ্বেগ উৎকণ্ঠ ও ব্যস্ততার সীমা নাই। অভিনেত্রীর দল ছাড়াও, প্রম্পটার, ডিরেক্টর, ষ্টেজম্যানেজার, বাদ্য-যন্ত্রী ইত্যাদির ভিড়ে গ্রীনক্লমে পা ফেলিবার স্থান নাই। নীলিমা আধ ঘণ্টার ভিতর তিনবার গোলমরিচ সহযোগে চা পান করিয়াও গলা । ঠিক করিতে পারিতেছে না। শঙ্করের দাড়ি এতক্ষণ সন্মুথেই রাখা ছিল, এখন ঠিক প্রয়োজনের সময়টিতে যে সে-দাড়ি কোথায় অন্তৰ্দ্ধান করিয়াছে, কোলথানে তাহার সন্ধান মিলিতেছে না। রমলা মিত্র বঙ্কিতেছেন, “এই সর্থীর দলকে এর মধ্যে ঢুকিয়ে এই কাণ্ড! কতবার বলেছিলাম সগীর সব নিজের নিজের বাড়ী থেকে একেবারে সেজে তৈরি হয়ে আসবে—এখানে এত সাজাবার লোকক্ট বা কোথা, আর জায়গাই বা কই ? সাজতে ত কেউই কম জান না, কিন্তু আজ দরকার কিন, আজ আর কেউ নিজে সেজে আসতে পারলে না ? এইটুকু ঘরে এই এভগুলো লোকের রকমারি কাপড়—কোথায় যে চোখের পলকে কোন জিনিষ উড়ে যাচ্ছে জানি মা। একটা জিনিষ হাতের কাছে পাবার জো নেই । সেফটি-পিণের বাক্সট তখন থেকে খুঁজে বেড়াচ্ছি—তা কোথায় যে কে রেখেছে তার ঠিক নেই। এই প্রীতি, ও কি করছ ? বোস না, বোস না ওখানে—আমার পাগড়ী রয়েছে যে, দেখতে পাচ্চ না ? হয়েছিল এখুনি । গিয়েছিল আমার পাগড়ী একেবারে চেপটে শেষ হয়ে । ছোটবৌদির দাড়ি গেছে, আমার পাগড়ীও যাবার দাখিল—ব্যবস্থা চমৎকার ।" প্রীতি ভয় পাষ্টয়া সরিয়া আসিল । মাধুরী গ্রীনক্লমের এক কোণে দাড়াইয়া বঙ্গ হাতে করিয়া অনর্গল কুমারের পাট মুখস্থ বলিতেছিল। এগণ সরিয়া আসিয়া প্রীতির হাতে বইখানা দিয়া বলিল, “লক্ষ্মীটি ভাই, দেগ না একটু, আমার ঠিক মুখস্থ হয়েছে কি না। ধত সময় এগিয়ে আসছে, সব যেন খুলিয়ে যাচ্ছে আরও—বুক ধরাসূ ধরাস্ করছে। তথম ভেবেছিলাম হাসি পাবে, এখন মনে হচ্ছে কেঁদে না ফেলি। শোন না ভাই, ঠিকমত বলতে পারছি কিনা। তোর ত বুধাজিতের পাট সামান্ত, ভাবনা নেই।” প্রীতি শুনিতে লাগিল ও মাঝে মাঝে ভুল সংশোধন করিয়া দিতে লাগিল । নীহারিকা মল্পিক স্বমিত্রা সাজিতেছেন। র্তাহার সাজ