পাতা:প্রবাসী (ষট্‌ত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৭০০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

প্রায় সম্পূর্ণ, কোনও ক্রটি হয় নাই ; কেবল রাণীজনোচিত মুকুট একখানি সংগ্ৰহ করিতে পারা যায় নাই, তাই মনে সামান্ত ক্ষোভ। কিন্তু মুকুট যাক—এখন প্লেট উৎরাইয়া গেলে বাচা যায়। শঙ্করের দাড়ির জন্য আবার গাড়ী ছুটিয়াছে, ভগবানের কৃপায় এখন আর একটি দাড়ি দোকানে তৈয়ারী পাওয়া যায় তবে তো ! না হইলে কি যে হইবে তাহা ভাবাও যায় না। ছোটবৌদির মুখখানা আবার এতই নারীস্থলভ যে দাড়ি না পরাইলে পুরুষের পোষাকে র্তাহাকে অত্যন্ত অশোভন দেখাইবে । অত করিয়া ফরমাস দিয়া করান দাড়ি শুধু শুধু হারাইয়া গেল ! কি মুক্ষিলেই পড়া গিয়াছে । সর্থীর দলের মধ্যে যে সৰ্ব্বাপেক্ষা ভাল গায়িক, সে এখন অবধি অনুপস্থিত। কথা আছে সেই মেয়েটি পুরা গানটা গাহিবে ; সর্থীর দলের মধ্যে অন্ত তিনটি মেয়ে সামান্ত গাহিতে জানে, তাদেরও যোগ দিতে বলা হইয়াছে ; বাকী দুই জন শুধু মুখ নাড়িলেই চলিবে । নীহারিক চোখের স্বৰ্ম্ম ঠিক করিতে করিতে বলিলেন, “এদের কি সত্যি একটুও সময়ের জ্ঞান নেই ? বার-বার করে স্বরমাকে বলেছিলুম যে, তোমার উপরেই সব সর্থীদের ভার, তুমি একটু আগে আগে এস—তা দেখেছ একবার কাও ? সবাই এল সে-ই নেই। কতদিক আর এক সামলান যায় ? মিসেস্ মিত্র, তখনই আমি আপনাকে বলেছিলাম যে আমাকে আর য়্যাকৃটিঙের মধ্যে রাখবেন না—এক জন শক্ত ম্যানেজার চাই—আমি সে কাজটার ভার নিলে আর এ রকম গণ্ডগোলটি হত না। ও মিসেস করকে ম্যানেজার করা না-করা সমান। ওদিকে চুপটি করে কোথায় যে দাড়িয়ে আছেন জানি না ; আমি ত এ এক ঘণ্টার ভিতর র্তার চেহারাই দেখি নি। এর নাম কি ম্যানেজিং ? আমি হ’লে সব ডিউটি ভাগ ক'রে করে দিয়ে বন্দোবস্ত ক’রে দিতাম। এখন আমি নিজেই সাজি, না অন্তকে দেখি ” মিসেস মিত্রের নিকট হইতে কিছু সাড়া না পাইয়া নীহারিক স্বৰ্ম্ম-পরা বদ্ধ করিয়া একবার দেখিয়া লইলেন। রমলা মিত্র সেখানে নাই। “কি হ’ল কি হ’ল, ব্যাপার কি ? আরে বাপু, হ’ল কি তাই বল না ছাই—” ইত্যাদি শব্দে সকলে উদগ্রীব হইয়া সেই দিকে মুখ ফিরাইয়া দেখিলেন নীলিম ওরফে ইলা অকস্মাৎ উচ্ছসিত হইয়া কাদিতেছে। রমলা মিত্র সেইখানেই দাড়াইয়া ছিলেন, বলিলেন, “বাপ রে বাপ –এত টাচি হ’লে ত আর কোনও পাবলিক কাজে নামা চলে না। দশ জনের সামনে দেখাতে হবে, সকলেই সমালোচনা করবে, তার আগে নিজেদের দোষক্রটি নিজেরা একটু শুধরে না নিলে কি ক’রে চলবে ? অার তাই বা কি বলেছি? যা কথায় কথায় অভিমান নীলিমার—আমি ত ভয়ে ভয়ে চুপ করেই থাকি। ভাবি যাক গে আমার কি ? ভাল হলেও ওর, মন্দ হলেও ওর ; বলতে গেলেই ত দোষের ভাগী কেবল ” ব্যাপারটা ভাল বোঝা গেল না—কেহ বুঝিবার বিশেষ চেষ্টাও করিল না ; সকলেই আপনাকে লইয়া উদভ্ৰান্ত— নীলিমা কাদিতেই লাগিল, মুখের রং খারাপ হইয়া গেল, চোখের কাজল গালে লাগিয়া গালের রং গোলাপীর পরিবর্ভে কালো দেখাইতে লাগিল। নীহারিক স্বৰ্মা ফেলিয়া ছুটিয়া আসিলেন। নীলিমার কাছে বসিয়া তাহার পিঠে হাত দিয়া আদর করিয়া বলিলেন, “ওম, ওমা, কান্না কিসের ? নীলিমা বয়সে ছেলেমানুষ ত কাজেও ছেলেমানুষ । কাদে মা, কাদে না, লক্ষীটি ভাই, চুপ কর । তোমাদেরই উপর ভরসা করে এ কাজে নামা—এখন একটু কটু কথা সয়ে হোক, যা করে হোক কাজটা উদ্ধার করে দাও ভাই। চুপ কর, চুপ কর।.প্রতি রঙের বাসনটা আন ত ভাই—গেল সব মুখের রং ধুয়ে; আবার ঠিক করে দিই। বেজেছে কট—? আর কত সময় আছে ? বাবা আমার ত মাথা কেমন করছে—ষ্টেজে উঠে না পড়ে যাই।” প্রীতির হাত হইতে রঙের পাত্র লইয়া ছোখ মুছিয়া নীলিমা নিজেই মুখে রং মাখিতে লাগিল। কান্ন-ভরা স্বরে বলিল, “আমি ত পারিন ভাল, সকলেই আপনারা জানেন নীহারদি । তা আমি ত আর সেধে সেধে থিয়েটার করতে আসি নি। আপনাদেরই লোক পাওয়া যাচ্ছিল না ব'লে জোর করে আপনারা আমাকে নামালেন। দেখেছেন ত আমি বরাবরই চেষ্টা করছি ভাল ক'রে করতে—তা ক্ষমতা না থাকলে কি করব বলুন । রমলাদি এমন করে কথা বলেন