পাতা:প্রবাসী (ষট্‌ত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৭১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

কীৰ্ত্তিক নিষিদ্ধ দেশে সওয়া বৎসর ●● করিলাম। টাকায় নয় টঙ্কা দর পাওয়া গেল, যদিও মুদ্র প্রায় সবই অৰ্দ্ধ-টঙ্কা পাইলাম। শীতের ভয়ে চার টাকায় একটি ভোটীয় কম্বল কিনিলাম, মাথার আবরণ হিসাবে ডাম্গ্রামের সজ্জনের কাছে পীতবর্ণ পশমের টুপী উপহার পাইলাম। কিছু চিড়, চাউল, চীনা চা, সজু ও মশল্পী ইত্যাদিও কিনিলাম, কিন্তু এর পর নিজের সকল বোঝা নিজের কাধেই বহিতে হইবে সেজন্য সবই অল্প পরিমাণে লইলাম। ডুকৃপা লামা আমাকে পরিচয়পত্র লিখিয়া দিলেন, ইতিমধ্যে স্বমতি-প্রজ্ঞ আমাদের দু-জনার জন্য ছাড়পত্র লইয়া আসিলেন । দুই মাসের ঘনিষ্ঠতার পর বিদায়ের সময় আমি ও সঙ্গীদের সকলেই মিত্রবিয়োগের দুঃখ অতুভব কল্পিলাম। ডুকৃপা লামা অতি সহৃদয়তার সহিত আমার মঙ্গলকামনা করিলেন এবং চা ও কিছু কিছু অন্যান্য দ্রব্য উপহার দিলেন । মোট বহিবার বঁাকের মধ্যভাগে মালপত্র বাধিয়া পিঠে করিয়া, হাতে লম্বা লাঠি লইয়া তীর্থযাত্রীর বেশে বেলা দ্বিপ্রহরে আমরা দুষ্ট জনে কুতী হইতে রওয়ান হইলাম। অল্পক্ষণেই পুল পৰ্য্যন্ত পৌঁছিয়া দেখিলাম ছাড়পত্র-পরীক্ষক 'সেপানে নাই। পুল সাধারণ কাঠ পাতিয়া তৈয়ারী কর হইয়াছে, তাহ পার হইতেই চড়াই আরম্ভ হইল। বোঝ|স্বন্ধে জীবনে এই প্রথম চলিতে হইতেছে সুতরাং চড়াইয়ের কষ্টের কথা আর কি বলিব ! মাঝে মাঝে কেবল মনে iহটতেছিল যে প্রত্যেক মানুষেরই এই অভ্যাস রাখা উচিত । অল্প চড়াইয়ের পরই আমরা কোলী নদীর দক্ষিণবাহিনী খ্য ধারার সঙ্গে সঙ্গে উপরে চড়িতে লাগিলাম। পথ ধারণ চড়াইয়ের, বোঝাও বিশ-পচিশ সেরের অধিক হ, তবুও অল্পদুর যাইতেই কাধ ও জঙ্ঘার বিষম ব্যথা রম্ভ হুইল । সুমতি-প্রজ্ঞ ত্রিশ-পয়ত্রিশ সেরের বোঝা অমান-বদনে গল্প-গুজব করিতে করিতে চলিতেছিলেন, র তখন কথা বলা দূরে থাক কথা শোনাও বিরক্তিজনক নে হইতেছিল। নদীর ফুলের উপত্যক চওড়া কিন্তু কাথাও বৃক্ষের চিহ্নমাত্র নাই। পথের ধারে এক-আধটি ß দেখা যাইতেছিল—ঠিক যেন পাথরের গুপ–এবং -চারটি শস্তের ক্ষেতও এখানে-ওখানে ছিল।

ডামূগ্রামের সজ্জনের লপ-চী যাইবার কথা ছিল,

সকালেই তিনি বাহির হইয়াছিলেন, আজ র্তাহার টশী-গঙে থাকিবার কথা। মুমতি-প্রজ্ঞ পরামর্শ দিলেন যে আজ আমাদেরও সেখানেই থাকা ভাল। সন্ধ্য-নাগাদ ফরু-কেলিঙ মঠ ( গুম্ব ) দেখা দিল। গুম্বার আগে এক ছোট গ্রামে বোঝা বহিবার লোকের খোজ করিলাম কিন্তু পাওয়া গেল না, সুতরাং গুস্বায় চলিয়া গেলাম । গুস্কার বাহিরের রূপ অতি স্বন্দর, সেখানে ত্রিশ-চল্লিশ জন ভিক্ষুর ব্যবস্থা আছে। বোঝা বাহিরে রাখিয়া আমরা দেবদর্শনে চলিলাম। বুদ্ধ বোধিসত্ত্ব এবং অন্যান্য নানা দেবদেবীর সুন্দর মূৰ্ত্তি, নানা প্রকারের স্বন্দর বর্ণরঞ্জিত চিত্ৰপট ও ধ্বজ প্রভৃতি অগও দীপের আলোকে প্রকাশিত ছিল । মঠে জে-চুন-মিলার সম্মুগে স্থাপিত ছণ্ড (কঁাচ মদ ) দেখিয়া আমি সুমতি-প্রজ্ঞকে জিজ্ঞাসা করিলাম, “ইহাত গে-লুক্‌-প (পীতটুপীযুক্ত লাম-সম্প্রদায় ) শ্রেণীর মঠ, তবে এখানে মদ কেন ?” তিনি বলিলেন জে-চুন-মিলা সিদ্ধপুরুষ, সিদ্ধপুরুষ ও দেবতাদিগের ভোগে গে-লুক্‌-পা সম্প্রদায়ও মদ্যের ব্যবস্থা করেন, তাহাদের নিজেদের ইহা পান করা নিষিদ্ধ। মন্দিরের বাহিরে আসিয়া দেখিলাম আমাদের জন্য ৮ আসিয়াছে ; মন্দিরের অঙ্গনে বসিয়া দু-চার পেয়ালা চ। পান করিলাম। ভিক্ষুগণ আমার নিবাস কোথায় জিজ্ঞাস। করায় স্বমতি-প্রজ্ঞ, লাসার ডেপুঙ গুঙ্গা ও আমি লদাখের নান করিলাম। আমরা বলিলাম যে গা-গর ( ভারতবর্ষ ) দোজে-দন (বজ্রাসন, মধ্যযুগ হইতে সংস্কৃত লিপিলেগে বুদ্ধগয়ার এই নাম প্রচলিত ) তীর্থ দৰ্শন করিয়া আমরা লাসায় ফিরিতেছি । আমি এ-সময় অত্যন্ত ক্লাস্ত । সবসুদ্ধ কুতী হইতে পাচ মাইল মাত্র আসিয়াছি তবুও আমার পক্ষে এক পাও চলা দুঃসাধ্য মনে হইতেছিল। এমন সময় ওখানে টশীগঙ-এর এক বালক বলিল ডাম্গ্রামের ‘কুশোক' (ভদ্রলোক ) টশী-গঙে বিশ্রাম করিতেছেন। স্বমতি-প্রজ্ঞ তৎক্ষণাৎ ওখানে যাইতে চাহিলেন, আমিও ভাবিলাম সেখান হইতে কাল হয়ত মোট বহিবার লোক পাওয়া যাইবে এবং এই আশায় যাইতে স্বীকার করিলাম। মঠেই~ছার অন্ধকার আরম্ভ হইয়াছিল, আমরা সেই বালকের পিছু পিছু চলিলাম। নদীর কিনারা ধরিয়া কিছু দূর গি পুল পাওয়া গেল এবং পার হওয়া গেল।