পাতা:প্রবাসী (ষট্‌ত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৭২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

(J9 কিছু পরে চষা ক্ষেত, তাহাতে বুঝিলাম এবার গ্রামের নিকট আসিয়াছি। খানিক পরে কুকুরের ডাকে বুঝিলাম গ্রাম আরও নিকটে । কিন্তু শুনিলাম আমাদের গন্তব্যস্থল আরও দূরে । শেষে কোনক্রমে ডাম্গ্রামের সজ্জনের বিশ্রামস্থানে পৌছাইলাম। তিনি সে সময় লোহার চুল্লীতে আগুন দিয়া পাতলা খিচুড়ী রন্ধনে ব্যস্ত ছিলেন। আমাদের দেখিয় অতি প্রসন্ন হইয়া তাড়াতাড়ি বিছানা বিছাইয় দিলেন। আমি ত বোঝা ফেলিয়া সটান শুইয়া পড়িলাম। চা তৈয়ার ছিল, খুরূপ ( খিচুড়ী)-ও অল্পক্ষণ পরে প্রস্তুত হইল, তখন উঠিয়া দুই তিন পাত্র গরম গরম খুকূপ খাইয় একটু “ধাতস্থ" হইয় চা পান করিতে করিতে পরদিনের “প্রোগ্রাম” ঠিক করিতে লাগিলাম। স্বমতি-প্রজ্ঞ বলিলেন, “লপ-চী” মহাতীর্থ (চ-ছেন-বো ), উহা জে-চুন-মিলার সিদ্ধ-স্থান, চলুন আমরাও ইহার সঙ্গে ওখানে যাই।” লপ-চী যাইতে হইলে আমাদের সোজা রাস্ত ছাড়িয়া উচ্চ লা ( গিরিসঙ্কট ) পার হইয়৷ পূৰ্ব্ব দিকে তুম্বা কোসীর ঘাটিতে যাইতে হইবে, পথে একটি জোঙ ও পড়িবে। সেখান হইতে আবার দুইটি লা পার হইলে তবে পুনরায় আমাদের গন্তব্য তিঙরী যাইতে পারিব। এই সব বাধাবিল্পের কথা ভাবিয়া আমার মন ত ওদিকে কোন মতেই যাইতে চাহিতেছিল না, কিন্তু সেকথা বলিয়া নাস্তিকতার পরিচয় দেওয়াও কঠিন । পরে যখন র্তাহারা আমার বোঝা বহিবার লোকের ব্যবস্থা করিবেন বলিলেন, তখন আমার আর আপত্তির উপায়ই বা রহিল কোথায় ? শেষে রাজী হইলাম, এবং স্থির হইল কাল খাওয়ার পরই যাত্র করা যাইবে । পরদিন পূৰ্ব্বকথামত দ্বিপ্রহরে রওয়ান হওয়া গেল। আমার খালি-হাত, স্বতরাং মহানন্দে চলিতে লাগিলাম । পথ ক্রমেই চড়াইয়ের দিকে চলিল, ঘণ্টা দেড়-দুইয়ের পর টুপটাপ, বৃষ্টি আরম্ভ হইল। পরিচ্ছদ পশমী হওয়ায় ভোটীয়েরা বৃষ্টিতে ক্ৰক্ষেপ করেন, স্বতরাং আমরা চলিতে থাকিলাম। কিছু দূরে এক জায়গায় পথ বক্র ও ঢালু পৰ্ব্বতপাশ্বের উপর দিয়া গিয়াছে, সেখানের মাটি নরম এবg৭ধ্যে মধ্যে মাটি ও পাথরের রাশি খসিয়া সশৰে কয়েক শও ফুট নীচের খাদে পড়িতেছে। আমার ত ঐ দৃশ্বে প্রবাসী Sථෂීමේ হৃৎকম্প আরম্ভ হইল, কেবলই ভাবিতে লাগিলাম, “আমিও না ঐ মাটি-পাথরের সঙ্গে নীচের খাদে চলিয়া যাই ।” সঙ্গীরা বোঝা-স্বন্ধে বেপরোয় চলিতে থাকিলেন, পশ্চাতে পড়িতে দেখিয়া এক জন আমাকে তাহার হাত ধরিতে বলিলেন কিন্তু আমি নিজেকে নির্ভয় বলিয়া পরিচিত করিতে চাহি, সুতরাং বিনা সাহায্যেই “প্রাণ হাতে ক’রে” কোন প্রকারে পার হইলাম। আমার ভোটীয় জুতা বিশেষ টিল হওয়ায় একটু ভয়ের কারণ ছিল, কেননা তাহাতে পা হড়কাইয়া যাইবার সম্ভাবনা । আরও উপরে উঠতে বৃষ্টির বিন্দুর বদলে এলাচ-দানার মত ছোট ছোট নরম বরফ পড়িতে লাগিল। আমরা সে-সব গ্রাহ না করিয়া চলিয়া বেলা দুইটার সময় লসেতে (লার নীচে থাকিবার জায়গা ) পৌছিলাম। এখন বরফ পেজ-তুলার মত ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র খণ্ডের আকারে পড়িতেছিল । সঙ্গীদের কতক চমরীর ঘুটের সন্ধানে মাঠে ছুটিলেন, অন্যেরা পাথরে দড়ি বাধিয়া ছোলদারী তাম্বু দাড় করাইবার চেষ্টায় ব্যস্ত হইলেন । এ জায়গাট। প্রায় চোঁদ-পনর হাজার ফুট উচু, কাজেই শীত খুব, উপরন্তু ক্রমাগত তুষারপাত হওয়ায় শৈত্যের আধিক্য বাড়িয়াই চলিয়াছিল। কোমপ্রকারে ছোলদারী দাড় করাইয়৷ তাহার ভিতর ঘুটের আগুন জালান হইল। আমরা সবাই চারি দিকে ঘিরিয়া বসিলাম, ঘুটেতে বাতাস দিয়া আগুন জালাইয়া চী-মৃদ্ধ জল চড়াইয় দেওয়া গেল । চারি দিকের জমি তুষারে ঢাকিয় গেল, মাঝে মাঝে ছোলদারীর চাল নাড়াইয়া বরফের রাশি ফেলিতে হইতেছিল। আগুনও যেন শীতে আড়ষ্টপ্রায়—অতউচ্চে জল ফুটান দুরূহ নহে, কিন্তু ফুটন্ত জলের উত্তাপ অল্প—অতি কষ্টে চা প্রস্তুত করা গেল । চা যদিবা হইল, তাহাতে মাখন দিয়া মন্থন করে কে ? প্রত্যেকের পেয়ালায় মাখনের টুকরা ফেলিয়া তাহার উপর গরম কাল চা ঢালিয়া দেওয়া হইল। কুশোক ( ভয় পুরুষ) র্তাহার কাছে যে ছোট বিস্কুট ও কমলালেবুর মিঠাই ছিল তাহা সকলকে দিলেন। আগুনের ঐ অবস্থায় খুকৃপা রন্ধন অসম্ভব, স্বতরাং অন্যেরা সজু খাইয়া ক্ষুধা নিবারণ করিলেন, আমি চায়ের মধ্যে চিড়া ফেলিয়া খাইলাম । চতুর্দিক অন্ধকারে বিরিয়া আসিল, কুশোক তাহার লণ্ঠন জালাইয়া আমাকে “বোধিচৰ্য্যাবতার” হইতে পাঠ