পাতা:প্রবাসী (ষট্‌ত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৭১০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

جگ۹یl\ তাঙ্গ ইলেও তাঁহাদের বুঝিয়া লইতে বিলম্ব হইবে না। আমি কেবল মাছি-মারা ভাবে অবিকল পুনরাবৃত্তি করিয়া খালাস । 睿 * 事 গত শীতকালে একদিন দুপুরবেলা হঠাৎ খেয়াল হইল পক্ষীশিকারে বাহির হইব । বড়দিনের ছুটি যাইতেছে, শীতও বেশ কনকনে। বৎসরের মধ্যে ঠিক এই সময়টাতে, কেন জানি না, পক্ষীজাতির উপর নিদারুণ জিঘাংসা জাগিয়া €ಡೆ | সঙ্গী পাইলাম না ; একাই বাইসিকেল আরোহণে বাহির হইয়া পড়িলাম। শহরের চার-পাচ মাইলের মধ্যে একটি প্রকাও বন আছে, শস্তপুষ্ট নানা জাতীয় পক্ষী এই সময় তাহাতে ভীড় করিয়া থাকে। সারা দুপুরটা জঙ্গলের মধ্যে মন কাটিল না। কয়েকটা পার্থীও জোগাড় হইল। কিন্তু অপরাহ্লে বাড়ী ফিরিবার কথা যখন স্মরণ হইল তখন দেখি, অজ্ঞাতে শিকারের সন্ধানে ঘুরিতে ঘুরিতে অনেক দূর আসিয়া পড়িয়াছি-প্রায় বারো মাইল। শরীরও বেশ ক্লাস্ত হইয়াছে এবং পাকস্থলী অত্যন্ত নিলজি ভাবে নিজের রিক্ততা ঘোষণা করিতে আরম্ভ করিয়াছে। শীঘ্র বাড়ী পৌছিতে হইবে। বন হইতে পাকা সড়কে উঠিয়া গৃহাভিমুখে বাইসিকেল চালাইলাম। গৈরিক ধূলায় সমাচ্ছন্ন পথ, দু-ধারে কখনও আড়রের ঘন-পল্লব ক্ষেত, কখনও নিসিন্দের ঝাড় ; কখনও বা ধূম-চন্দ্রাতপে ঢাকা ক্ষুদ্র দু-একটা বস্তি । যথাসম্ভব দ্রুতবেগে চলিয়াছি ; আলো থাকিতে থাকিতে বাড়ী পৌছিতে পারিলেই ভাল ; কারণ বাইসিকেলের বাতি জানিতে ভুলিয়া গিয়াছি। দিনের আলো ক্রমে নিবিয়া আসিতে লাগিল। গো-স্কুর ধূলায় শীত-সন্ধ্যার অবসর দীপ্তি আরও নিম্প্রভ হইয়া গেল। এই আধা-আলো-অন্ধকারের ভিতর দিয়া নিষ্করণ দীর্ঘ পথটা মৃত সৰ্পের মত পড়িয়া আছে মনে হইল । চার-পাচ মাইল অতিক্রম করিবার পর দেখিলাম হাত দুটা শীতের হাওয়ায় অসাড় হইয়া আসিতেছে ; বাইসিকেলের প্রবাসী SNEHම් হাণ্ডেল ধরিয়া আছি কিনা টের পাইতেছি না। দু-একবার ক্ষুদ্র ইটের টুকরায় ঠোকর খাইয়া পড়ি-পড়ি হইয়৷ বঁচিয়া গেলাম। রাস্তার উপর কোথায় কি বিঘ্ন আছে, আর ভাল দেখিতে পাইতেছি না। আরও কিছু দূর গিয়া বাইসিকেল হইতে নামিতে হইল। দ্বিচক্র্যানে আরোহণ আর নিরাপদ নয়; এই স্থানে বাইসিকেল হইতে আছাড় খাইলে অবস্থা আরও সঙ্গীন হইয়া উঠিবে। এইবার সমস্ত চেতনাকে অবসন্ন করিয়া নিজের অবস্থাটা পরিপূর্ণ ভাবে হৃদয়ঙ্গম হইল। পৌষ মাসের অন্ধকার রাত্রে ক্ষুধাৰ্ত্ত ক্লান্ত দেহ লইয়া গৃহ হইতে ছয়-সাত মাইল দূরে পথের মাঝখানে দাড়াইয়া আছি। কোথাও জনপ্রাণী নাই; সঙ্গীর মধ্যে কয়েকটা মৃত পক্ষী, একটা ভারী বন্দুক এবং ততোধিক ভারী অকৰ্ম্মণ্য দ্বিচক্রযান। এইগুলিকে বহন করিয়া বাড়ী পৌছিতে হইবে ; পথ পরিচিত বটে, কিন্তু অন্ধকারে দিগভ্ৰষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা কম নয়। নিজের অবস্থার কথা চিন্তা করিয়া নৈরাষ্ঠে হাত-পা যেন শিথিল হইয়া গেল । কিন্তু তবু দাড়াইয়া থাকিলে চলিবে না। দিল্লী দুরন্ত ! যেমন করিয়া হোক বাড়ী পৌছনো চাই ! বাইসিকেল ঠেলিয়া হাটিতে আরম্ভ করিলাম। এই দুঃসময়েও কবির কাব্য মনে পড়িয়া গেল— ওরে বিহঙ্গ ওরে বিহঙ্গ মোর এখনি, অন্ধ, বন্ধ কোরো না পাখ । কবির বিহঙ্গের অবস্থা আমার অপেক্ষাও শোচনীয় হইয়াছিল বলিয়া মনে হইল না । বোধ হয় এক ঘণ্টা এইভাবে চলিলাম। শীতে ক্ষুধায় ক্লাস্তিতে শরীর অবশ হইয়া গিয়াছিল, মনটাও সেইসঙ্গে কেমন যেন আচ্ছন্ন ও সাড়হীন হইয়া পড়িয়াছিল। হঠাৎ সচেতন হইয়া মনে হইল, পথ হারাইয় ফেলিয়াছি ; কারণ, পায়ের নীচে পাকা রাস্তার কঠিন প্রস্তরময় স্পর্শ আর পাইতেছি না,— হয় কাচ পথে নামিয়া আসিয়াছি, নয়ত অজ্ঞাতসারে মাঠের মাঝখানে উপস্থিত হইয়াছি। সভয়ে দাড়াইয়া পড়িলাম। রন্ধুহীন অন্ধকারে পৃথিবীর সমস্ত দৃপ্ত লেপিয়া মুছিয়া একাকার হইয়া আছে- কোনও দিকে দৃষ্টি চলে না । কেবল উৰ্দ্ধে নক্ষত্রগুলা শিকারী জন্তুর নিক্ষরুণ চক্ষুর মত আমার পানে নিনিমেষ লুব্ধতায় তাকাইয়া আছে!