পাতা:প্রবাসী (ষট্‌ত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৮৩৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

* , ,

  • h

কোন স্থায়ী রস রেখে যেতে পারত না । শাপমোচনের যুগে আমরা প্রথম চেষ্ট করলুম নাচের মধ্যে নাটকের বিষয় জানতে । গুরুদেবের জয়ন্তী উৎসবের সময় শুনিভসিটির ছাত্রদের অনুরোধে তিনি “শাপমোচনে”র কথাবস্তু লিখেছিলেন এবং কলকাতায় জোড়াসাকোর বাড়ীর দালালে “ই,ডেন্টস ডে"-তে প্রথম এই নাটক অভিনীত হয়েছিল। এই নাটকের গল্পাংশকে অনুসরণ ক'রে নাচ দেওয়া হয় এবং নাটকীয় সংঘাতকে বিশেষভাবে ফুটিয়ে তোলবার জন্তে মূক-অভিনয়ের দ্বারা ভাবকে ব্যক্ত করা হয়েছিল। সব জায়গায় প্রকৃত নৃত্যনাট্যের প্রকৃতি রক্ষা করতে না পারলেও গুরুদেবের সঙ্গীত ও মূক-অভিনয় মিলিয়ে ঞ্জিনিষটি মনোরম হয়েছিল। কিন্তু এই অভিনয়ের মধ্য দিয়ে আমাদের ছাত্রছাত্রীদের নৃতাঞ্চল শিক্ষা ও অভিজ্ঞতা অনেকখানি অগ্রসর হয়ে গিয়েছিল । এই নাটক প্রথমে লগ্নেীয়ে ও পরে বহুবার মাম্রাজ, বম্বে, সিংহলে অভিনীত হতে হ’তে পরিণতি লাভ করেছে । এই “শাপমোচনে”র অভিনয় বাইরে যখন প্রশংসিত হ’ল, তখন এল বাংলা দেশে উদয়শঙ্করের যুগ। এই সময় থেকে শাস্তিনিকেতনের নাচের পাল কলকাতায় কিছুদিনের মতো স্থগিত রাখা হ’ল । এই অবসরে ছাত্রছাত্রীদের উৎসাহে তাদের নৃত্যসাধন এগিয়ে চলেছিল দ্রুতগতিতে। কয়েক বৎসরের মধ্যে ধারা তৈরি হয়ে উঠলেন তাদের মধ্যে কল্যাণীয়া যমুনা, নিবেদিত, নন্দিতার নাম বিশেষভাবে প্রশংসাযোগ্য, আর পুরুষদের মধ্যে শান্তি ঘোষ। শ্রীমতীকেও আমাদেরই ছাত্রী বলতে পারি কারণ র্তার প্রথম নৃত্যশিক্ষা শাস্তিনিকেতনের মণিপুৰী শিক্ষকের তত্বাবধানেই । অবশু পরে যুরোপে নানা দেশ ভ্রমণেব দ্বারা নৃত্যকলা সম্বন্ধে তিনি অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করেছেন কিন্তু তার নৃত্যের মূলে যে গুরুদেবের সঙ্গীতের প্রেরণ রয়েছে সে বিষয়ে কোনও সন্দেহ নেই। প্রশংসা এবং উৎসাহের আতিশয্য হয়তো আর্টের বিকাশের পথে বাধা স্মৃষ্টি করে । তাই হয়েছিল আমাদের শাপমোচনের পর্ক্সে। অনেকেরই মনে হ’তে লাগল -শাপমোচনেই হয়তো আমাদের শক্তির সীমা । এই সময় ঘটনাচক্রে আমরা বিলাত-যাত্রা করলুম। প্রশ্নল ১৩৪৩ —l সেখানে ডেভনশায়ার ডার্টিংটন স্কুলে জাৰ্শেনীর স্বপ্রসিদ্ধ নর্তক লাবাসের শিষ্য মিষ্টার ইয়স (Joss ) একটি নৃত্যশালা খুলেছিলেন ; তখন একটি নূতন নৃত্যনাট্যের পরিকল্পনার কাজ তার মুডিয়ােতে আরম্ভ হয়েছিল। মিটার ইমসের উদারতাগুণে আমি তার কার্য্যপ্রণালী দেখবার স্বযোগ পেলুম। ইয়স যে-প্রণালীতে নৃত্যনাট্যের প্রত্যেক অধ্যায় বানিয়ে তোলেন সেটা আমার কাছে খুবই উপাদেয় লেগেছিল । ভিন্ন ভিন্ন থও-নাচে মিলে ক্রমে ক্রমে যে-ক’রে একটি সম্পূর্ণ ভূমিকা পরিণত হতে পারে তারই নূতন পদ্ধতি চোখে পড়তে লাগল। ছাত্রছাত্রীরা কি গভীর অল্পরাগ নিয়ে তাদের সমস্ত শক্তি প্রয়োগ করত নৃত্যকলাস্বষ্টির কাজে, দেখে আনন্দিত হয়েছি। দেখলুম যুরোপীয় গানে যেমন বহু স্বরেব সঙ্গতি আছে তেমনি যুরোপীয় নাচে নানা ভঙ্গীর সমবায়তা সংঘটিত হয়েছে। একই দৃশ্যে হয়তো দশ জন লোক বিভিন্ন ভঙ্গীতে নাচছে, একই তালকে অতুপরণ করে। উদাহরণস্বরূপ ইংসেব নাটকের একটি দৃপ্তের উল্লেখ করা যেতে পাবে ; তার নাম—“পথের দুগু"। কোথাও বা একদল লোক ফুৰ্ত্তি করছে, কোথাও বা ছু-জুন প্রেমিক নিজের মনোভাব প্রকাশ করছে, দূর থেকে কয়েক জন অপরিচিত উপহাস করছে । বিচিত্র ভাবের লীল একষ্ট দৃশ্বে একই তালকে অনুসরণ করে প্রকাশ পেয়েছে কিন্তু ক্লাস্তি আনে নি মনে, কেন না তালের লয় প্রত্যেক ভাবের সঙ্গে বদলে বদলে গিয়ে ঔংস্থক্য সজাগ ক’রে রাখে। ইয়সের এই সাগঠনপ্রণালী একটি নাটক তৈরির পক্ষে খুব উপযোগী । বিচিত্র ভাবকে প্রকাশ করতে হ’লে ভালকে অনেকটা মুক্তি দেওয়া চাই। ইয়সেব নৃত্যপ্রণালীর মধ্যে সে স্বাধীনতা ছিল তাই তাদের মৃত্যকৌশল দেখে নাচ সম্বন্ধে অনেকগুলি নূতন ধারণা আমার মনে এসেছিল একথা স্বীকার করি। তার পরে যখন দেশে ফিরে শুনলুম দিল্লীতে “শাপমোচন" অভিনয় হবার কথা হচ্ছে, তখন ছাত্রছাত্রীর সহযোগিতায় একটি নূতন নৃত্যনাটোর সংগঠনের কথা মনে এল। এই সময় আমাদের দুই জন নৃত্যাচাৰ্য্য ছিলেন, এক জন মণিপুরী, অপরটি মাঙ্গাজী । শেষোক্তটি লোক-নৃত্যশিল্পী। ছাত্রীরাও দেখলুম আজিকে বিশেষ দখল লাভ করেছেন। এরই মধ্যে অনেক নূতন ধরণের নাচ তারা আয়ত্ত করেছেন,