পাতা:প্রবাসী (ষট্‌ত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৮৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

অলখ-ঝোরা e ঐশাস্তা দেবী পূর্ব পরিচয় চন্দ্ৰকান্ত মিশ্র নয়ানজোড় গ্রামে স্ত্রী মহামায়া, ভগিনী হৈমবতী ও পুত্রকষ্ঠ শিবু ও শুধকে লক্টর থাকেন। মৃধা শিৰু পূজার সময় মহামায়ার সঙ্গে মামার বাড়ী যায়। শালবনের ভিতর দিয়া লখ। মাঝির গরুর গাড়ী চড়িয়া এবারেও তাঙ্গর রহনজোড়ে দাদামহাশয় লক্ষ্মণচন্দ্র ও দিদিমা ভুবনেশ্বরীর নিকট গিয়াছিল। সেখানে মহামায়ার সহিত তাহার বিধবা দিদি স্বরধুনীর খুব ভাব। স্বরধুনী সসারের কত্রী কিন্তু অস্তরে বিরহিণী ভরণী । বীপের বাড়ীতে মহামায়ার খুব আদর, অনেক আত্মীয়বন্ধু । পুরার পূর্বেই সেখানকার আনন্দ-উৎসবের মাঝখানে সুধার দিদিমা ভুবনেশ্বরীর অকস্মাৎ মৃত্যু হইল। তাহার মৃত্যুতে মহামায়া ও স্বরধুনী চক্ষে অন্ধকার দেখিলেন। মহামায়। তখন অন্তঃসত্ত্বা, কিন্তু শোকের ঔদাসীগো ও অশোঁচের নিয়ম পালনে তিনি আপনার অবস্থার কখা ভুলিয়া গিয়াছিলেন। তাহার শরীর অভ্যন্ত খারাপ হইয় পড়িল। তিনি আপন গৃহে ফিরির আসিলেন। মহামায়ার দ্বিতীয় পুত্রের জন্মের পর হইতে র্তাহার শরীরের একটা দিক অবশ হইয়া আসিতে লাগিল। শিশুটি ক্ষুদ্র দিদি স্বধার হাতেই মাকুম হইতে লাগিল । চক্সকান্ত কলিকাতায় গিয়া স্ত্রীর চিকিৎসা করাইবেন স্থির করিলেন । br মহামায়ার শরীর আর কিছুতেই ভাল হয় না। হৈমবর্তী একলা সমস্ত সংসারের কাজ পারিয়া উঠেন না । লুচি ভাজিতে গেলে বেলিয়া দেয় কে ? মাছ কুটিতে গেলে উমানের আগুন উস্কায় কে ? কাজকৰ্ম্মে বড় বিশৃঙ্খলা আসিয়া পড়িয়াছে। স্বধা প্রায় এগার বছরের মেয়ে হইল, তাহাকে কাজেকর্শ্বে টানিয়া আনিলে তবু হৈমবতীর অনেকখানি মুরাহা হয় ; কিন্তু ছোট খোকার পিছনে অষ্টপ্রহর ছুটিতে ছুটিতেই তাহার দিন কাটিয়া যায়, সে হৈমবতীকে সাহায্য করিবে কি করিয়া ? খোকা এক বছর পার হইয়া গিয়াছে, টলিয়া টলিয়া বাকিয়া বাকিয়া চলা ও সংসারের সমস্ত জিনিষ উন্মত্ত ভৈরবের মত দুই হাতে টানিয়া চুৰ্ণবিচূর্ণ করাই তাহার কাজ। সংসারটা পাছে একলাই সে রসাতলে পাঠাইয়া দেয় তাই সতর্ক প্রহরীর মত স্বধী এই ক্ষুদ্র কলাপাহাড়কে বন্দী করিবার ফন্দীতে দিনরাত ব্যস্ত। আজ সে খাট হইতে পড়িয়া গিয়া ছাড়া মাথাটা আমের ধাঠির মত ফুলাইয়া বসিয়া আছে, তাই স্বধী তাহাকে লইয় বড় বিব্রত। পিছন পিছন দৌড়াইতে স্বধা খুব পারে, কারণ সেটা যেমন পোকাকে আগলানো তেমন স্বধারও একটা খেলা। কিন্তু এই দুৰ্দ্দাস্ত দস্থ্য ছেলেটাকে সারাদিন কোলে করিয়া বেড়ানো কি তাঙ্গর মত ছেলেমানুষের সাধা ? থোকা কোলের ভিতরই এমন জোরে জোরে ঝণকি দিয়া খাড়াহইয়া, উঠে যে দাড়াইয়া থাকিলে সুধা সৃদ্ধ সেই ধাক্কায় পড়িয়া যাইবার যোগাড় হয়। অথচ ঐ তালের মত ফোলা মাথাটা লইয়া উহাকে আজ ত আবার দস্তিাপনা করিতে দেওয়া যায় ন ? মৃধা হৈমবতীর শরণ লইল । “পিসিমা, খোকনকে যদি তুমি রাখ, তাহলে তোমার সব কাজ আমি ক’রে দেব। ওর সঙ্গে যুদ্ধ করতে আর আমি পারছি না।” পিসিমা বালিমৃদ্ধ ভাঙা গোলা উনানে বসাইয়া তাহার উপর কুচি দিয়া নাড়িয়া নাড়িয়া থষ্ট ভাজিতেছিলেন। তপ্ত পোলায় শুভ্ৰ বেলফুলের মত মোটা মোটা থইগুলা ভোজবাজির মত এক মুহূৰ্ত্তে রাশি রাশি ফুটিয়া উঠিতেছিল। তাহারই মধ্যে বঁ হাতে লোহার চোঙাটা ধরিয়া পিসিমা র্তাহার ভারি গাল দুটি আরও ফুলাষ্টয় উনানে ফু পাড়িতেছিলেন। কাঠের উনানের ধোঁয়ায় ও আগুনের তাতে তাহার মুখখানা গোলাপ ফুলের মত রাঙা হইয়া উঠিয়াছে। স্বধার কথা শুনিয়া পিসিমা বলিলেন, “হ্যা, তোমাকে আর আমার কাজ করতে হবে না। তুমি যাবে ত কলকাতায় মেমসাহেব হতে ! এই বুড়ী পিসির সঙ্গে খই ভাজতে কি তোমার বাপ মা তোমায় এখানে রেখে দিয়ে যাবে ?” ছোট খোকা কোল হইতে ছাড়া না পাইয়। তখন সজোরে স্বধার ঘন চুলের মুঠি ও কানের পাশি মাকড়ি দুই হাতে ধরিয়া টানিতেছে। এক হাতে চুল ও কান ছাড়াইতে ছাড়াইতেই স্বধ বলিল, “কোথায় যাবে সবাই, পিসিমা ?” পিসিমা আধপোড়া খড়ের বিড়ার উপর ধপাস করিয়া গরম খোলাটা নামাইয়া বলিলেন, “আসর ঘরে মশাল নেই