পাতা:প্রবাসী (ষট্‌ত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৮৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ግo টে কিশালে চাদোয়া ! তোমার বাপ এই পাড়াগায়ের চালই চালাতে পারছেন না, বেী এক বছর শযোশায়ী। এখন চলেছেন ছেলেমেয়েকে ইংরেজীয়ানা শেখাতে। কে সেখানে সংসার ঠেলবে বাপু? খেয়ে পরে ছেলেগুলেগুলো বেঁচে ছিল সেইটাই বড়, না না-খেয়ে ইংরিজী শেখা বড় ?” স্বধা বিস্মিত হইয়া পিসিমার দিকে তাকাইয় রহিল। তাহাদের কলিকাতা যাইবার কথা একটা আবছা আবছ। কিছুদিন হইতে সে গুনিয়াছিল বটে, কিন্তু ভাল করিয়া গুনে নাই। যাই হোক, পিসিম যখন এত রাগ করিতেছেন তখন নিশ্চয় তাহার মনে বেদন লাগিবার মত কিছু হইয়াছে। স্বধা ভয়ে ভয়ে বলিল, “তা গেলেই বা কলকাতায় । আমি ইস্থলে ভৰ্ত্তি হলেও কাজ করতে পারব। তুমি আমায় একটু একটু করে সব শিখিয়ে নিও। ভাত নামাতে ত আমি শিখেছি। মা না পারেন, আমরা দুজনেই কাজ করব ।” হৈমবতী সরোষে বলিলেন, “আমি যাব কিনা সেখানে তোমাদের জুতো সেলাই থেকে চণ্ডীপাঠ করতে ? আমি যে এখানে তোমাদের আঁধার ঘর আলো ক'রে বসে থাকব ।” স্বধার মনটা বড় মুঘড়াইয়া গেল। সে বলিল, “কেন পিসিম, তুমি যাবে না কেন ?” হৈমবতীর সুর হঠাৎ নরম হইয়া আসিল । খই ভাজা রাখিয়া শিল-নোড়া হলুদ সরিষা টানিয়া আনিয়া তিনি বলিলেন, “সবাই ঘরবাড়ী ছেড়ে চলে গেলে চলে কি মা ? এখানে যে সাতভূতে আডড ক’রে নরক গুলজার ক’রে তুলবে। এত দিনের গড়া সংসার অমন ক’রে কি কেউ জলে যেতে দেয় ? এই আগলে যক্ষি হয়ে আমায় বসে থাকতে হবে।” পিসিমার উত্তরে স্বধার মন খুশী হইল না। সংসারে তাহারাই যদি কেহ না রহিল তবে সে-সংসারকে এত করিয়া বুক দিয়া আগলাইয়া বজায় রাখিবার কি প্রয়োজন ? সম্পত্তির প্রয়োজনীয়তা বুঝিবার বুদ্ধি স্থধার তখনও হয় নাই। সে মনে করিল এটা পিসিমার এ-সংসারের প্রতি মমতা মাত্র। মমতা তাহারও আছে কিন্তু প্রাণহীন ঘরছুয়ারের 爱 প্রবাসী $N939 প্রতি মমতার জন্ত প্রাণের শ্রেষ্ঠ অবলম্বন প্রিয়জনদের সে ছাড়িতে পারে না। নহিলে আজন্মের পরিচিত এই স্নেহনীড় ছাড়িবার কথা শুনিয় তাহারই কি বুকের শিরা-উপশিরায় টান লাগিতেছে না ? জন্ম অবধি এ-গৃহের আবেষ্টন যে তাহার দুই চোখে মায়া-অঞ্জন পরাইয়া দিয়াছে। কেমন করিয়া ইহাকে ফেলিয়া সে নূতন জগতের মাঝখানে আপনাকে প্রতিষ্ঠিত করিবে ? এত বছর-বছর পূজায় মামার বাড়ী বেড়াইতে যাওয়া নয় ! এ এক লোক হইতে অন্য লোকে প্রয়াণ ! ছোট থোকাকে দুই হাতে কোলের ভিতর চাপিয়া ধরিয়া রান্নাঘরের চৌকাঠের উপর বসিয়া পড়িয়া স্বধ বলিল, “পিসিম, আমরা বুঝি আর এ-বাড়ী ফিরে আসব না ।” হৈমবতী হলুদমাথা হাতপানাই মুখের উপর তুলিয়া তর্জনী উচাইয়া বলিলেন, “ষাঢ়, ষাট, ও কথা কি বলতে আছে ? বাড়ী এক-শ বার আসবে। তবে চন্দ্র যে কলকেতাতেই চাকুরি নিয়ে বসেছেন। এখন কি আর হট করতেই ঘরে এসে বসা যাবে ? পরের গোলাম, ছুটি না পেলে এক পা বাড়াবার সাধ্যি নেই। তার উপর তোমার মায়ের চিকিচ্ছে, তোমাদের ইস্কুলমিদংস্কুল - কত কি ! বুড়ী পিসিকে কি তখন আর মনে পড়বে যে দু-বেলা দেখতে আসবি ?” হৈমবর্তী এমন স্নেহুকোমল স্বরে ত কখনও কথা কহেন না ? তাহার কথা শুনিয়া স্বধার চোখে জল আসিয়া গেল। সে চোখের জল সামলাইয়া লইয়া বলিল, “আমি জলখাবারের পয়সা জমিয়ে তোমায় নিয়ে যাব পিসিমা ; তুমি মাঝে মাঝেও কি যেতে পারবে না ?” ছোট খোকা কোল হইতে নামিয়া পড়িয়া অন্যমনস্ক হৈমবতীর শিল হইতে এক খামচা হলুদ তুলিয়া লইয়া বলিল, “পাকের • স্বধা থোকার পিঠে সাদরে মৃদু একটা চড় দিয়া হাসিয়া তাহাকে টানিয়া লইয়া চলিয়া গেল। কিন্তু মনের ভিতর তাহার হাসিটা বেশী ক্ষণ স্থায়ী হইল না। সে মনটাকে হান্ধা করিবার জন্ত শিবুর খোজ করিতে লাগিল। তাহার মনের অল্প বয়সের গাম্ভীৰ্য্যটাকে হাসি ও খেলার মলয়হিল্লোলে উড়াইয়া দিবার জন্য ছোট ভাই শিবু ছাড়া আর ত তাহার দ্বিতীয় সঙ্গী ছিল না।